৮০ বছরে মেনন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩ ১৯:৪৬ পিএম
আপডেট : ১৯ মে ২০২৩ ০০:১০ এএম
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বৃহস্পতিবার ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। প্রবা ফটো
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বৃহস্পতিবার (১৮ মে) ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নানা আয়োজনে মেননের জন্মদিন পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
‘ও আলোর পথযাত্রী’ গানের সঙ্গে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রাশেদ খান মেনন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ৮০তে জনতার মেনন উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, রাশেদ খান মেননের স্ত্রী সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
পরে বর্ণিল আলোকচ্ছটায় ফুটিয়ে তোলা হয় মেননের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। মেনন-সংগীতের পর রাশেদ খান মেননের উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
মেননের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোজাফফর হোসেন পল্টু ও দলটির সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ-বিএসডি) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান রেজা, ঐক্য ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, ন্যাপ (একাংশ) সভাপতি এনামুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ও মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন ও চীন দূতাবাসের একজন কাউন্সিলর রাশেদ খান মেননের হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
আলোচনা সভার আগে ‘৮০-তে জনতার মেনন’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন তারা। পরে মামুনুর রশীদ নির্মিত ‘মহাজীবনের এক জীবন’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়, যেখানে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মেননের জীবন ও কর্মের নানা অধ্যায় উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ’সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযাত্রী রাশেদ খান মেনন।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ’বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ইতিহাসের নাম রাশেদ খান মেনন। পাকিস্তান আমলে ছাত্রজীবনে যে সংগ্রামী পথচলা শুরু হয়েছিল, তা এখনও বিরামহীন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এক অবিচল সংগ্রামী নেতৃত্বের নাম মেনন। আমরা বিভিন্ন সময়ে যে রাজনৈতিক জোট গড়েছি, সেসব জোটের বক্তব্য লেখার দায়িত্ব পড়ে মেননের কাঁধে। তিনি এমনভাবে সেসব বক্তব্য লেখেন, তাতে শরিক দলের প্রত্যেকে মনে করে আন্দোলনের মূল কথা উঠে এসেছে। কারও কোনো সংশয় থাকে না।’
মনজুরুল আহসান খান বলেন, ’মেনন ভাইয়ের রাজনীতির পথ ও পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের অনেক পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক মিল। আমার বিশ্বাস, রাশেদ খান মেনন সবগুলো বাম দলকে সঙ্গে নিয়ে বাম আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ’পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সামরিকতন্ত্রের বিপক্ষে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে লড়াই, সাম্প্রদায়িকতা-রাজাকার-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই, তাদের ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ঠেকানোর যে লড়াই, তাতে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন মেনন ভাই। রাজনৈতিক সংকট সমাধানে তাকে আমি সর্বজ্ঞ বলে মনে করি। তাকে আমি সমাজতন্ত্রের পথে সংগ্রামী নেতা হিসেবে দেখি।’
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ’অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে কখনও সরে আসেননি মেনন। যখনোই সাম্প্রদায়িকতার উত্থান হয়েছে, মেনন ভাইকে আমি কখনও চুপ করে বসে থাকতে দেখিনি।’
মামুনুর রশীদ বলেন, ’আজকে দেশের রাজনীতিতে যখন অস্থিরতা, ভয়াবহ সংকট চলছে, তা উত্তরণে রাশেদ খান মেনন সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেবেন, দায়িত্ব পালন করবেন।’
অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ’রাশেদ খান মেননের সংগ্রাম ধর্মীয় উন্মাদনা, সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে; তার লড়াই বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সমাজ বদলের পক্ষে, সমাজতন্ত্রের পক্ষে।’
মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান বলেন, ’জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো বৈষম্যহীন এক সমাজ ও সমাজতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন রাশেদ খান মেনন।’
সবশেষে নিজের জন্মদিন উৎসবের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মেনন বলেন, ’৮০ বছর বয়সে এসে যদি জীবন ভারাক্রান্ত করে রাখি, তবে এ দেশের জনগণের প্রতি অবিচার হবে। এ দেশের জনগণের প্রতি আমার রক্তের ঋণ রয়েছে, আমি তা শোধ করে যাব।’
মেনন বলেন, ’আমার ৮০ বছরের সবচেয়ে গর্ব মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলাম আমি। আমি বঙ্গবন্ধু ও মাওলানা ভাসানীর ছত্রছায়ায় রাজনীতি করেছি। আমাদের সময়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতা ছিল।’
অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে মেনন বলেন, ’সামনের পথের দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদের। আজকে আত্মত্যাগের রাজনীতির বদলে প্রাধান্য পেয়েছে পাওয়ার রাজনীতি। দেশ ও তরুণসমাজ তাই বিপদগামী। সেখান থেকে বের হতে না পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উপাদানগুলো সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হবে না। অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।’