প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪২ এএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩ ১১:৩৯ এএম
বাংলাদেশ লেবার পার্টির এক বিক্ষোভ মিছিল। ফাইল ছবি
বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম মিত্র ১২-দলীয় জোট থেকে বেরিয়েই গেল ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
এর মধ্য দিয়ে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশের তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে ১২-দলীয় জোট ভাঙনের মুখে পড়ল।
অবশ্য জোটের নেতাদের দাবি, লেবার পার্টির সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের সন্তোষের কারণ।
রবিবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় পুরানা পল্টনে জোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ এলডিপি কার্যালয়ে ১২-দলীয় জোটের বৈঠকে এ সন্তোষ জানানো হয়।
এর আগে বিকাল ৩টায় জোটের প্রধান সমন্বয়কারী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারকে চিঠি দিয়ে ১২-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় লেবার পার্টি।
লেবার পার্টির প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক মো. মনির হোসেনের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার লেবার পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় গত তিন মাসে জোটের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে ১২-দলীয় জোট থেকে অংশগ্রহণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লেবার পার্টি এখন ১২-দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত নয়।’
তবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও মহাসচিব মো. ফারুক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে।
এদিকে রবিবার রাতে জোটের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘লেবার পার্টির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, জোটের সংহতি পরিপন্থি আলাদা কর্মসূচি পালন, জোটের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অশোভন ও ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ, জোটের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও জোটের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করার কারণে শরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অস্বস্তি বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় এক জরুরি সভায় লেবার পার্টি জোট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ১২-দলীয় জোটের সব নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন।’
১২-দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা বলেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নানামুখী তৎপরতা জোটের নীতি-আদর্শ বিরোধী। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে রাজনীতি করেন। সম্প্রতি তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটসের সুধী সমাবেশ ও নৈশভোজে অংশ নেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ ও লেখক ফরহাদ মজহারের নবগঠিত ওই সংগঠনটির ব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে জোটের। ফলে হঠাৎ করে কমিটির সুধী সমাবেশকে ভালোভাবে নেয়নি যুগপৎ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বিএনপিও।
সেখানে মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের অংশগ্রহণ জোটের অন্যান্য শরিক দলকে বিব্রত করেছে। এসব কারণে ইরানকে ১২ দল থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে জোটের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই নিজে থেকেই জোট থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘নানান কারণে জোটের সঙ্গে মিলছিল না। তাদের নানান অন্যায্য আচরণ মেনে নিতে পারিনি। জোটের গত সমাবেশে আমার দল যোগ দেয়নি বলে মাত্র ৬০-৬২ জন নিয়ে তাদের সমাবেশ করতে হয়েছে। এজন্য আমার ওপর ক্ষোভ আছে তাদের।’
তিনি বলেন, ‘জোটের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এলডিপি-গণফোরামের মতো আমরাও আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করব।’
সিভিল রাইটস কমিটির সুধী সমাবেশে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে হোটেলে কমিটির সুধী সমাবেশ হয়েছে, ওই একই হোটেলে বেসরকারি টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ওপরে দেখতে গিয়েছিলাম। ওই সংগঠনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত, আর আহ্বায়ক কবি ফরহাদ মজহার খেতে বলেছিলেন, তাই খেয়েছি। ওখানে যে কী অনুষ্ঠান তা-ও জানতাম না, আর আমন্ত্রিতও ছিলাম না। আর যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার হবে। লেবার পার্টিও তার এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছে; কিন্তু তারা (জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি) বলেন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার হবে, আমি সেখানে কেন যাব?’
ইরান আরও বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন তার দলের নেতা আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব, জাগপার আরেক নেতা ইঞ্জিনিয়ার রশীদ প্রধান। তাদের সমস্যা হলো না, হয়েছে আমার!’
২০-দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ১২-দলীয় জোট গঠন করা হয়।
১২-দলীয় জোট থেকে লেবার পার্টি বেরিয়ে যাওয়ার পর এ জোটে এখন ১১টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। দলগুলো হচ্ছে : মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার বাংলাদেশ জাতীয় দল, কেএম আবু তাহেরের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আব্দুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিমের বাংলাদেশ এলডিপি, জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের ইসলামী ঐক্যজোট, তাসমিয়া প্রধানের জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নুরুল ইসলামের বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ও আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।