ঘোমটা পরা পাখির মতো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, ‘সব আসনেই বিএনপি ঘোমটা পরা পাখির মতো নির্বাচনের কাজ করছে। তারা এখন ঘোমটা পরা পাখি হয়েছে।’

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক শান্তির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকের উপনির্বাচনে প্রমাণ হলো গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। মাগুরা মার্কা নির্বাচন তো হয়নি।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব আপনি বলেছিলেন উপনির্বাচন হবে মাগুরার দাদা। কিন্তু নির্বাচন শেষ হয়েছে। মাগুরার দাদাও হয়নি, নানাও হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এ সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না বলেন, সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’

১৯৯৪ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি মাগুরা-২ আসনে একটি উপনির্বাচনের আয়োজন করে। সে বছরের ২০ মার্চ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। তারা সেই কারচুপির অভিযোগের পর বিএনপির অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ অন্য বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রকাশ করে। কিন্তু বিএনপির নেতারা তখন সেই সরকারব্যবস্থা নিয়ে তাচ্ছিল্য শুরু করেন। আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলো বিএনপিকে সে বছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় সেটি মেনে নেওয়ার জন্য। 

বিএনপি তত্ত্বাবধায়কের দাবি মেনে না নেওয়ায় ১৯৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীর ১৪৭ জন সংসদ সদস্য একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু স্পিকার তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাদের ৯০ দিন অনুপস্থিত দেখিয়ে সেসব আসনে উপনির্বাচন দিতে চায়। এতে আওয়ামী লীগসহ অন্যরা ব্যাপক আন্দোলন তৈরি করে। অবশেষে প্রবল আন্দোলন এবং সহিংসতার মুখে ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর ৫ম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

সে অবস্থা আবারও ফিরে আসছে বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাচনকে ঘিরে শঙ্কার কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর প্রতিক্রিয়ায় সেতুমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের নামে পিকনিক করে। তাদের দৈর্ঘ্য কমে যাচ্ছে, প্রস্থ বেড়ে যাচ্ছে। এর মানে তাদের কর্মী কমে গিয়ে নেতা বেড়ে গেছে। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে।’ 

মির্জা আব্বাসের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি বলেছিলেন আপনাদের আন্দোলনে নাকি সরকার ভয় পেয়েছে। কিন্তু ভয় তো আপনারা পেয়েছেন। আমরা শান্তি সমাবেশ দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখনও শান্তি সমাবেশই করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিক্ষোভ থেকে এখন বিএনপি পদযাত্রা করছে। তাদের এ পদযাত্রা অন্তিম যাত্রায় পরিণত হয়েছে।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের পৃথিবী ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের নেতারা দণ্ডিত আসামি। কাজেই আগে সিদ্ধান্ত নিন কার নেতৃত্বে আপনারা নির্বাচন করবেন।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সানজিদা খানম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।