পিআর পদ্ধতি
আকরাম হোসেন
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫ ১১:০২ এএম
জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল আনুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মহাসমাবেশ থেকে এ দাবি জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এর আগে একই দাবি জানায় জামায়াত। এ ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদ, এনসিপিসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তবে এ পদ্ধতিতে ঘোর আপত্তি দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই পদ্ধতি অবাস্তব বলে মনে করছে দলটি। যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছে দলটি। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ পেছানোর পাঁয়তারা বলেও মনে করছে।
প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু দাবি জানায় জামায়াত। গত বছরের ৯ অক্টোবর রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি। জামায়াতের আমিরসহ দলটির সিনিয়র নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পিআর পদ্ধতিতে একটি দল সারা দেশে যত ভোট পায়, তার অনুপাতে সংসদে আসন পায়। এতে আসনভিত্তিক নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানানোর সুযোগ থাকে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ, দর্শন, চিন্তাভাবনা, চাওয়া-পাওয়া, দাবি থাকা স্বাভাবিক বলে মনে করছে বিএনপি। তবে সিদ্ধান্ত নেবে দেশের জনগণ। এজন্য নির্বাচনের সময় প্রস্তাব নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান দলটির। জনগণের ম্যান্ডেড নিয়ে এসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে তার কথাগুলো সে বলবে। তাদের আদর্শ, দর্শন, চিন্তাভাবনা আছে। ভিন্ন দল, ভিন্ন চিন্তাভাবনা তো থাকবেই।
আমরা যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, তাহলে জনগণের কাছে দলগুলোর চিন্তাভাবনা, আদর্শ, দর্শন নিয়ে যেতে হবে। সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। জনগণের নির্বাচিত সংসদে তর্ক-বিতর্ক হবে, আলোচনা হবে। জনগণ নির্বাচিত সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে। সেখানে নির্বাচিতদের দায়বদ্ধতা থাকে।
তিনি বলেন, আমরা তো বাকশাল গঠন করতে চাচ্ছি না যে সবাই এক জায়গায় মিশে যেতে হবে। সবাইকে এক হতে হবে। সবাই একমত হয়ে গেলে তো বাকশাল হয়ে যাবে। আমাদের সব সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। ৫-১০ জন বিজ্ঞ মানুষ বসে বাংলাদেশের মানুষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার নাই।
গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিসহ ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনকে জনগণের দাবি উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সংসদের প্রস্তাবিত উভয় কক্ষেই এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। এটি হলে কোনো দল ‘জালেম’ হওয়ার সুযোগ পাবে না।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া বাংলার মানুষ কোনো নির্বাচন গ্রহণ করবে না। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, পিআর পদ্ধতিতে যদি ভোট হয় হিন্দু সম্প্রদায় ভোট দিতে যাবে, না হলে যাবে না। তিনি একই সঙ্গে পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিরও দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘মাইনোরিটিদের প্রতিনিধিত্বের সিদ্ধান্ত তারা নেবে, তারা নিজেদের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবিকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আনুপাতিক হারের নির্বাচনের কথা যারা বলছেন, তাদের একটি উদ্দেশ্যে আছে। হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা অথবা বাংলাদেশে নির্বাচন না হওয়াÑ এটা তাদের উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সমানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে, দলের অবস্থান থেকে চাইতেই পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এবং এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আমাদের সঙ্গে যেভাবে আলোচনা হয়েছে, সেই পিআর (সমানুপাতিক) পদ্ধতির নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা কোনো ঐকমত্য পাইনি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটা একটা নতুন ধারণা বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যার জন্য অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা পৃথিবীর বহু দেশে হয়েছে, তবে এটা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেখানে যেখানে হয়েছে সেখানে অনেক জটিল অবস্থা। আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো সংসদীয় এলাকার ভোটাররা জানবেন না যে, কে তাদের এমপি হবেন। তা ছাড়া এমপিদের কাছে যে তারা যাবেন তারা নির্ধারিত কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাবেন না।
আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট বাংলাদেশের জন্য কখনোই উপযুক্ত নয়। প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা তাদের প্রতিনিধিকে ভোট দেওয়ার যে পদ্ধতি রয়েছে, বিএনপির সেটির পক্ষে থাকার কথা বলেছেন সালাহউদ্দিন।
কয়েকটি দলের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশটাকে সুন্দর করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু করেন না, শুধু আপনার কথামতোই হতে হবে, স্থানীয় সরকার আগে হতে হবে, আবার পিআর ভোট করতে হবে। কেন ভাই? কই থেকে আবিষ্কার করেন এগুলা? কে দেয় বুদ্ধি আপনাদের? এসব কুপরামর্শ নিয়ে, এই দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য একদল লোক আজ মাঠে নেমেছে।’