× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজশাহীতে মাঠে শুধুই বিএনপি-জামায়াত

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ১০:৩৭ এএম

রাজশাহীতে মাঠে শুধুই বিএনপি-জামায়াত

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে- এমন আশা থেকে মাঠ গোছাতে শুরু করেছে বিএনপি। দলটি এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করতে না পালেও ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তবে দেখা নেই অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নাম শোনা গেলেও তারা সবেমাত্র মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করছে। দলীয় কার্যালয় এখনও গুছিয়ে উঠতে না উঠতেই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন দলটির নেতারা। প্রার্থীও নির্দিষ্ট করতে পারেনি এনসিপি। 

ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), তৃণমূল বিএনপি, গণফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক দলগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও ত্রয়োদশ সংসদীয় নির্বাচন ঘিরে এখন পর্যন্ত এই দলগুলোর কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। অবশ্য জাতীয় পার্টি ছাড়া ওই নির্বাচনের আগে বা পর থেকেই এই দলগুলোর কোনো হদিস ছিল না। রাজনৈতিক মহলে কথিত রয়েছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে এই দলগুলোর থেকে প্রার্থী সাজিয়েছিলেন। জনপ্রিয়তা তো দূরের কথা প্রার্থীদের অনেককেই চিনতেন না ভোটাররা। এমনকি নির্বাচনে ন্যূনতম ভোটও তারা জোটাতে পারেননি, হারিয়েছিলেন জামানতের অর্থও। 

রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় সংসদীয় আসন ৩৯টি। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৬টি, বগুড়ায় ৭টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩, সিরাজগঞ্জে ৬, পাবনায় ৫, নওগাঁয় ৬, নাটোরে ৪টি এবং জয়পুরহাটে ২টি আসন। এর মধ্যে রাজশাহী-২ (সদর) আসন ছাড়া প্রতিটিতেই জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। আর বিএনপির অন্তত ২০০ প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য লিয়াজোঁ শুরু করেছেন।

এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটে অন্তর্দ্বন্দ্ব সামনে আসছে। দলটির এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্য, দখলাদারিত্ব ও আওয়ামী লীগকে প্রশ্রয় দেওয়ার মতো অভিযোগ তুলছেন। প্রতিটি আসনে বিএনপির অন্তত ৪ থেকে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্ব মূলত পদ বঞ্চিতদের সঙ্গে পদধারীদের। এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির চিত্র এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়াসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।

রাজশাহী : রাজশাহী জেলায় সংসদীয় আসন ৬টি। এর মধ্যে রাজশাহী-১ আসনের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এই আসন ছাড়াও রাজশাহী-৩ আসনে অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৪ আসনে ডা. আবদুল বারী সরদার, রাজশাহী-৫ আসনে নুরুজ্জামান লিটন এবং রাজশাহী-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক মুহাম্মদ নাজমুল হক। রাজশাহী-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। আসনটিতে এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু। পুরো মহানগর ও জেলাজুড়ে মিনু বলয় সক্রিয়। 

রাজশাহীর ৬টি আসনেরই বিএনপির অন্তত দুই ডজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ৬টি আসনের মধ্যে রাজশাহী-১ আসনে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ভোটযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীতে বিএনপির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট, যা জেলা ও মাহানগরের দলীয় বিভিন্ন কমিটি থেকে শুরু করে সংসদীয় আসন পর্যন্ত বিরাজ করছে। অপরদিকে অনেকটাই সুসংগঠিত অবস্থায় রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এখন পর্যন্ত এই দুটি দল ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় দেখা যায়নি।

বগুড়া : এই জেলায় সংসদীয় আসন ৭টি। আসনগুলোতে মনোনয়ন পেতে মরিয়া ডজনখানেক বিএনপির নেতা। এরই মধ্যে তারা নিজেদের মতো করে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছেন। পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থীরাও। আসনগুলোর মধ্যে বগুড়া-৬ আসনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বরাবরই এ আসনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়ে আসছেন। আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী আবিদুর রহমান সোহেল। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর জামায়াতের প্রার্থী গোলাম রব্বানী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : এই জেলায় বিএনপির ত্রিপক্ষীয় বিভেদ লক্ষণীয়। জেলায় সংসদীয় আসন সংখ্যা ৩টি। বিএনপির মনোনয়ন প্রাত্যাশীদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। বিএনপির অন্তর্কোন্দলকে কাজে লাগাতে চায় জামায়াতে ইসলামী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১ ও ৩ আসন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে।

নাটোর : নাটোরে সংসদীয় আসন ৪টি। জামায়াত প্রতিটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বিএনপির ডজনখানেক নেতা মনোনয়ন পেতে মরিয়া। এর মধ্যে নাটোর-৪ আসনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ভোটযুদ্ধ হবে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে ঘিরে এই জেলায় বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত। দুলু গ্রুপের সঙ্গে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাশেম গ্রুপের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, বিএনপিতে কোন দ্বন্দ্ব নেই। তবে প্রতিযোগিতা আছে। পদবঞ্চিতরা পদ পেতে মরিয়া। এ ছাড়া এমপি নমিনেশন পেতেও সবাই ছোটাছুটি করছে।

পাবনা : এখানে সংসদীয় আসন ৫টি। পাবনা-১ আসনে মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমিন জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। এ ছাড়া রয়েছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। আসনটিতে বিএনপির কারও নাম শোনা যাচ্ছে না। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দেওয়া তথ্যমতে, পাবনা বিএনপিতে গ্রুপিয়ের ছড়াছড়ি। পাবনা ১, ৪ ও ৫ আসনের জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ভোটযুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পাবনা ২ ও ৩ আসনে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি।

নওগাঁ : জেলায় সংসদীয় আসন ৬টি। নাওগাঁ জেলা বিএনপিতে কোনো প্রকার অন্তর্কোন্দলকে নেই বলে দাবি করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, প্রতি আসনে ৪ থেকে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার হয়েই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন। ৬টির মধ্যে নওগাঁ-১ আসনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের প্রার্থীর ভোটযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : সংসদীয় আসন ৬টি। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ ডজনখানেক নেতা মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন। সিরাজগঞ্জে বিএনপিতে প্রকাশ্যে কোনো দ্বন্দ্ব দেখা না গেলেও কমিট নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে পদবঞ্চিতদের মধ্যে। প্রতিটিতেই জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী দিয়েছেন।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাট জেলার সংসদীয় আসন দুটি। জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী মাসুদ রানা প্রধান, সাবেক রেলমন্ত্রী আব্দুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীমসহ তিন থেকে চার জন প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ। জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বিভাগের নেতা ওবায়দুর রহমান চন্দন, স্থানীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা। কাজ করছেন জামায়াতের প্রার্থী এসএম রাশেদুল আলম সবুজ।

এনসিপি : ১৫ জুনের পর এনসিপির জেলা ও মাহানর কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে দলটির নেতাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সামনে আসতে থাকে। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে আসছে। এরই মাঝে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণ দেখিয়ে এনসিপির রাজশাহী জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলামসহ একাধিক নেতা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। গত ২৪ জুন নগরীর জিরো পয়েন্টে আয়োজিত কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতেও দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য।

দলীয় কর্মসূচি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এনসিপির বাগমারা উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক আলী মুর্তজা জানান, নতুন কমিট ঘোষণার পর একজন আনুষ্ঠানিকভাবে তার পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। দলের এখন কাজ দুটি। প্রথমত, সুষ্ঠু ও ভারসাম্য বজায় রেখে রাজনীতি করা এবং আগামীতে নির্বাচন আসলে দলীয় সিদ্ধান্ত মতো প্রার্থীর হয়ে কাজ করা। 

জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী জোনের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি। জয় নিয়েও আমরা আশাবদী। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে অন্য যেকোনো দলের সঙ্গে সংঘাতে না যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ে এখনও বসা হয়নি। নির্বাচনী প্রস্তুতি ও দলীয় কোন্দল ও কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ শাহিন শওকতের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করে ও মেসেজ পাঠিয়েও তাদের কোনো সাড়া মেলেনি। তবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর দাবি, দলে কোনো বিভেদ বা কোন্দল নেই। বিএনপি একটি বড় দল। সে হিসেবে দলে প্রতিযোগিতা রয়েছে, যা স্বাভাবিক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা