আকরাম হোসেন
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫ ১৫:৩৭ পিএম
ঈদ ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠছে সারা দেশের রাজনীতি। বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন এলাকামুখী। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের তারিখ ঘোষিত না হলেও রাজনৈতিক দল ও সাধারণের মাঝে আলোচনায় রয়েছে নির্বাচন। দীর্ঘদিনের ভোটারবিহীন নির্বাচনের বাইরে এসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই সাধারণের ধারণা। ফলে নির্বাচনী আবহে এবার উদযাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছুটছেন নিজ নিজ সংসদীয় আসনে। ভোটারদের মন জয় করতে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষিত না হলেও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। আসন্ন ঈদুল আজহা সেই নির্বাচনী পালে দিয়েছে বাড়তি হওয়া।
নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঈদ উদযাপনকে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে রূপ দিতে নিয়েছেন নানামুখী প্রস্তুতি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে ছুটে যাচ্ছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষকে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ঈদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা চাইছেন মানুষের পাশে থাকার। শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে এলাকায় চালাচ্ছেন ব্যাপক প্রচার ও গণসংযোগ।
ইতোমধ্যে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকা। এতে ঈদের পাশাপাশি ভোটের আমেজও সৃষ্টি হয়েছে। এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রত্যেকেই আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের কাছে সহযোগিতা চাওয়া শুরু করেছেন। তারা মতবিনিময় সভা এবং নানা ধরনের সেমিনার, গণসংযোগ, উঠোন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই কৌশলে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। এতে ঈদকেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতি জমে উঠেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, গত ১৫ বছরে নেতাকর্মীদের কাছে ঈদ মানেই ছিল বাড়তি আতঙ্ক। ঈদ মানেই ছিল হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার-হয়রানির ভয়। বহু নেতাকর্মী নিজ বাড়িতে থেকে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। অনেকের ঈদ কেটেছে জেলে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে গত রোজার ঈদ মুক্ত পরিবেশে কাটাতে পেরেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এবার ঈদুল আজহা মুক্ত পরিবেশে উদযাপন করতে পারছেন। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে নির্বাচনের আগে আর ঈদ আসবে না। ফলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে এবারের ঈদ একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দলকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার সুন্দর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। ঈদের ছুটির অল্প সময়ে অধিক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। নেতাকর্মীদের একসঙ্গে পাওয়া যায়। দলকে গতিশীল করা যায়। গত সরকারে সময়ে অধিকাংশ নেতাকর্মীরই এলাকায় ঈদ উদযাপন করার সুযোগ ছিল না। গত রোজার ঈদ আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে উদযাপন করেছি। এবার ঈদুল আজহায়ও উদযাপন করব। আশা করি আগামী ডিসেম্বর নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে আর কোনো ঈদ পাব না।’
এবারের ঈদ রাজনীতিবিদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে নির্বাচন অবশ্যই বড় একটি পরীক্ষা, চ্যালেঞ্জও বটে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবারই আলাদা পরিকল্পনা থাকে। আমাদের সব কর্মসূচির মূল ফোকাস নির্বাচন। নির্বাচনে আমার সংগঠন যদি শক্তিশালীভাবে থাকতে না পারে, সংগঠনের নেতাকর্মীরা যদি ঐকবদ্ধ না থাকে, তাহলে ভালো ফল পাওয়া কঠিন হবে। জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সব সময়ই ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের সঙ্গে সেতুবন্ধন আরও দৃঢ় করতে কাজ করবে এবারের ঈদ।’
বিএনপির অধিকাংশ নেতাই ঈদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে নির্যাতিত ও গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীর পরিবারের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন। বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এলাকায় গেছেন। লম্বা ছুটি কাজে লাগিয়ে কর্মী-সমর্থকদের আরও চাঙ্গা করতে চাচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে দলটি বিভিন্ন আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন।
বসে নেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গঠিত নতুন দল এনসিপির নেতারাও। দলটির অধিকাংশ নেতা এবার নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া তিনটি দলের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের যারা ঈদের দিন নিজ এলাকায় কাটাবেন, তারা ঈদ উৎসবে যোগদানের পাশাপাশি গণসংযোগ ও মতবিনিময়ে অংশ নেবেন। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে, এসএমএস পাঠিয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যানার-পোস্টারের মাধ্যমে গণসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থনকারী নেতারা। সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আমেজে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে প্রতিটি এলাকা।
বিএনপির কর্মসূচি ও নেতাদের ঈদ
বিএনপির অধিকাংশ নেতা নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন এবং নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চালাবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে দলেরও নির্দেশনাও রয়েছে। এখন বৃষ্টির মৌসুম। আগামীতে দেশে বর্ষার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। ফলে জনগণের পাশে থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ওইসব এলাকায় বিএনপির সর্বস্তরে নেতাকর্মীদেরকে জনগণের পাশে থাকার জন্য জোরালোভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান করবেন লন্ডন স্থানীয় মসজিদে। এ ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশান আজাদ মসজিদে, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গুলশান সোসাইটি মসজিদে, মির্জা আব্বাস শাহজানপুর ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করবেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কেরানীগঞ্জ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আব্দুল মঈন খান নরসিংদীর পলাশে, নজরুল ইসলাম খান বনানী ডিওএইচএস মসজিদে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে, সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজারে, বেগম সেলিমা রহমান বনানী বাসায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জে, হাফিজউদ্দিন আহমদ বনানী বড় মসজিদে অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ধানমন্ডিতে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
এ ছাড়াও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য, কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা ও সাবেক সংসদ এবং সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে জানান দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি বলেন, বন্যা পূর্বাভাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে সহযোগিতার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা রয়েছে।
ঈদের দিন বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা। রাতে চেয়ারপারসনের সঙ্গে মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার কথা রয়েছে।