আকরাম হোসেন
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৫৫ এএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৬ এএম
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব। তবে এজন্য সরকারকে জোরালো চাপ দিতে চায় না দলগুলো। নির্বাচনের জন্য এই মুহূর্তে কোনো আন্দোলনেও যেতে চান না সমমনারা।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে এসব আলোচনা হয়েছে। গত শনিবার জাতীয় নির্বাচন, সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচারসহ নানা ইস্যুতে ১২ দলীয় জোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। গত রবিবার সিপিবি, বাসদ ও গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে এবং গতকাল সোমবার বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি।
এসব বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সমমনা দলের নেতারা বলেন, ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এই মুহূর্তে জনগণ একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে। এ জন্য দ্রুততম সময়ে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে বর্তমান সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। তার আগে নির্বাচনী রোপম্যাপ চান দল ও জোটের শীর্ষনেতারা।
বৈঠক প্রসঙ্গে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিএনপি চায় ডিসেম্বরে মধ্য নির্বাচন, যার সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত। আমরাও চাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন।’
তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দলের সঙ্গেও বিএনপি বৈঠক করবে, সবার সঙ্গে কথা বলে একটা সিদ্ধান্ত নিবে বিএনপি। এ সরকারের একটা কমিটমেন্ট আছে তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য কাজ করছে। সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা আছে।’
নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন নাই উল্লেখ করে সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের ফসল বর্তমান সরকার। ফলে নির্বাচনের জন্য আলাদা করে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ নির্বাচন, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। আমরা এটার জন্য সরকারকে চাপ দেব। নিয়মিত সভা সমাবেশ চালিয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক উপদেষ্টা বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য দেন। এতে নানা ধরনের কথার জন্ম হয়। উপদেষ্টাদের অনুরোধ করি মানুষকে বিভ্রান্ত করে এমন বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে।’
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সহসভাপতি ও ১২ দলীয় জোটের নেতা রাশেদ প্রধান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্য ডিসেম্বর উপযুক্ত সময়। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। এর বাইরে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারও সম্পন্ন করা সম্ভব। তা ছাড়া প্রধান উপদেষ্টাও ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলেছেন, তার কথার মধ্যেই ডিসেম্বর রয়েছে।’
বিএনপির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে থেকে বলা হয়েছে ড. ইউনূস আমাদের প্রতিনিধি। ওনার বিপক্ষে কোনো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া যাবে না। তার বিরুদ্ধে রাজপথে কর্মসূচি দেয়ার পক্ষে আমরা না। তাকে আমাদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন, যাতে দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সরকার নির্বাচন দিতে পারে।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। বৈঠকে আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছি। এ দাবি প্রধান উপদেষ্টার ওপর সম্মান রেখেই করা।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করে তিন মাসের মধ্যে গণহত্যার বিচার করে ডিসেম্বরে নির্বাচন দেয়া সম্ভব। সরকারের সদিচ্ছার, উপদেষ্টারা সবাই কাজ করলে এটা অসম্ভব না।’
মুহাম্মদ রাশেদ খান আরও বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সরকার। আমাদের আন্দোলনের সরকার। এই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো দলই আন্দোলনে যাবে না। বরং সবাই সরকারকে সহযোগী করতে মত দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার ওপর সবাই আস্থা-বিশ্বাস রাখতে চায়।’
প্রধান উপদেষ্টাও সেই বিশ্বাস রাখবেন আশা করে তিনি বলেন, ‘তবে এমন যদি হয় সরকার একটি ধোঁয়াশার সৃষ্টি করছে, প্রবলেম সৃষ্টি করছে। তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘সরকার ৮ মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সব রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে দায়িত্ব নিয়েছেন। এ জন্য তার কাছে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক।’
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার রোডম্যাপ প্রণয়ন করবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমরা মনে করি তিনি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। কারণ, এই সরকারকে তো আমরাই সমর্থন দিয়ে বসিয়েছি।’
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও সরকারের চাওয়ার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই বলেও জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার মানে তারা তো বলেনি যে ডিসেম্বর নির্বাচন হবে না। কিন্তু আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে এরকম একটা তারিখ ধরে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।’
এক্ষেত্রে পার্থক্য খুব বেশি না মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকার বলেছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, তার মানে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। সরকারের কথা অনুযায়ী নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারিতেও হতে পারে। কাজেই আমাদের সঙ্গে সরকারের পার্থক্য বহু মাসের না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি দেশের সংকটকালে দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার বিশ্বাসও আছে যে তিনি সফল হবেন। আসুন আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করে, নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।