প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক আজ
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৩ এএম
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪৭ এএম
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে বিএনপি। এ অবস্থা কাটাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলটির একটি প্রতিনিধি দল। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেবেন। প্রতিনিধি দলে থাকতে পারেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইবে বিএনপি। পাশাপাশি সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানাবে। সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান ও সংশয়- সেটা প্রধান উপদেষ্টাকেও জানাবে। পাশাপাশি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও দলীয় মনোভাব সেটাও বৈঠকে তুলে ধরবে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি ডিসেম্বরকে ঘিরেই নির্বাচনের কথা বলা হয়, তাহলে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে যাবে বিএনপি। আর সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা প্রত্যাশা অনুযায়ী কোনো বক্তব্য না পেলে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। সরকারের মনোভাব বুঝে কর্মসূচির ধরন ঠিক করবে। সরকারের বক্তব্য সন্তুষ্টজনক না হলে আগামী মাস থেকেই নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি দিবে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমরা আগেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি। এখনও চাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হবে। সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর আমাদের করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
জানা যায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি। কোনোভাবেই ডিসেম্বরের বাইরে যেতে চায় না। বিএনপির সঙ্গে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। বিএনপি মনে করছে কেউ কেউ নির্বাচনকে পিছিয়ে নিতে চায়। দলটির দাবিÑ সন্দেহ দূর করতে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে সরকারকে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন হলে দেশের চলমাল সমস্যা দূর হবে বলেও মনে করছে তারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমরা ১৭ বছর আগে থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছি। ৫ আগস্টের পরে সবাই মনে করে দেশে সর্বক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন হয়েছে। এবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে। গণতন্ত্র ফিরে আসা মানে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এ কারণেই সরকারের কাছে আমরা রোডম্যাপ চেয়েছি এবং আমরা অপেক্ষা করছি। হয়তো একটা সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। তারপর সরকারকে শুধু বোঝানোর চেষ্টাই করব না, সরকার যাতে নির্বাচনে ফিরে আসে সেই উদ্যোগ আমরা নেব।
উপদেষ্টাদের কথায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ধোঁয়াশা
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিভিন্ন মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলছে উপদেষ্টাদের বিতর্কিত কথা-বার্তা নির্বাচন নিয়ে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এর আগে নিজেদের নির্বাচিত সরকার দাবি করে অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা অনির্বাচিত এই কথা কে বলল। যারা পরিবর্তনটা এনে দিয়েছে, তারাই রাষ্ট্র গঠন করেছে, তারাই সরকার গঠন করেছে, তাদের দ্বারা নির্বাচিত আমরা। কাজেই আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের যে চাহিদা, সেটা মেটানো। গত ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বলতাছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। ওই রাস্তা থেকে হুনি, মানুষ বলতাছে, আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন।’
এমন মন্তব্যের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণ নাকি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ওনাদের নির্বাচিত করেছে। তাহলে এদেশে ইলেকশন কমিশন আছে কেন? যদি রাস্তার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয় সেটি অবশ্যই এদেশের মানুষের কামনা। কিন্তু নির্বাচিত সরকারের বিকল্প তো আপনারা হতে পারেন না। আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত। সেটা প্রতিদিনই আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলে আপনারা গণতন্ত্রের উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করবেন, নির্বাচনের কথা বলে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করবেনÑ এটা কি গণতন্ত্রের জন্য শুভ? এটা কি গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা ছিল? যখনই প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য দাবি করি, তখনই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়Ñ জনগণ নাকি তাদের ৫ বছরের জন্য চায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে তো আমরাও বহু কমেন্ট সামাজিকমাধ্যমে দেখেছি। এটা কি উনি (স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা) দেখেননিÑ প্রশ্ন করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।