রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫২ পিএম
প্রবা ফটো
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে নেই জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ একটি দল, এ দলের ভেতরে অনেক খারাপ মানুষ থাকতে পারে। তাই বলে দল নিষিদ্ধ করা যায় না। শেখ হাসিনার আমলের মতো একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে নির্বাচন করা যাবে না। আমরা শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিজম আবারও দেখছি। তারা জোর করে কাউকে নির্বাচনে রাখবে আবার জোর করে কোনো দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখবে। এভাবে নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, এতে দেশ স্থিতিশীল হবে না। দেশে আরও সংঘাতপূর্ণ, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় চলে যাবে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকালে রংপুর নগরীর স্কাইভিউ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘সরকারের মদদপুষ্টরা তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন হতে দিচ্ছে না। নির্বাচন বিলম্বিত হলে তাদের জন্য শুভকর হবে। সব দিক থেকে তারা স্ট্রং থাকবে। আমার কথা হলো- ততদিনে দেশটা কি থাকবে, দেশের মানুষ বাঁচবে কি না তা চিন্তা করতে হবে। এই সরকারের দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই, রাজনীতি সম্পর্কে তাদের পরিপক্কতা কম রয়েছে।’
জিএম কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ছিল, কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহার হয়েছে। এখনও দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগের অপব্যবহার হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে সাজানো সহজ হবে না। আমাদের পুলিশ বিভাগ ভেঙে পড়েছে। তাই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশ অস্থিতিশীল হলে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে, বেকার সমস্যা প্রকট হবে। আমরা দারিদ্রের দুষ্টু চক্রে পড়ে যাব।’
দেশের অস্থিতিশীলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভয়াবহ দুর্যোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ রয়েছে। সরকারের ঘনিষ্ঠজনরা কিছু কাজকর্মে উৎসাহিত করছে যেগুলো রাজনীতির নামে অপকৃতি ও লুটতরাজ। পুলিশ বাহিনীকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। ঢালাওভাবে সমস্ত পুলিশকে দোসর বলা হয়েছে। সব সরকারের আমলে পুলিশ সরকারের নির্দেশে চলে। তারা যদি অপকর্ম করে থাকে তবে আস্তে আস্তে তাদের শাস্তি দেওয়া যেত। কিন্তু সরকার প্রথম ধাক্কায় পুলিশকে ভেঙে ফেলেছে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বলেছে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য বড় সাবধান বাণী। আমরা যদি আমেরিকার এই কথাকে ভুল প্রমাণ করতে না পারি তবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, রেমিট্যান্স বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশের সবকিছু আমদানি করতে হয়। যদি বৈদেশিক মুদ্রা না থাকে, আমদানির অভাবে দেশে হানাহানি কাটাকাটি হবে, মানুষ মানুষের মাংস খাবে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ আন্দোলন করেছে। কিছুদিন পর ছাত্রনেতাদের বলতে শুনলাম তারা আন্দোলন করেছে, সহিংসতা-নাশকতা করে সরকার পতন করেছে। তাদের সব কৃতিত্ব। তারা ইসলামী খেলাফত তৈরি করতে চায়। হিযবুত তাহরীর প্রকাশ্যে প্রোগ্রাম করছে। দেশে জঙ্গী ও মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে। তাই সরকারকে বলছি আপনারা দেশে পরিচালনা করতে না পারলে অন্য কাউকে দেন। না হলে দেশের মানুষ চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’
কাদের বলেন, ‘আমার রাজনীতির পূর্বাভাস সঠিক হয়েছে। আমি বলেছিলাম দেশ শ্রীলংকার দিকে যাচ্ছে। তখন সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ আমাদের সমালোচনা করেছিল। পরে তা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল। আমি বলেছিলাম আওয়ামী লীগ টিকতে পারবে না, দল হিসেবে তারা ফিনিশ হয়ে যাবে। তখন আওয়ামী লীগের লোকজন আমাকে ব্যঙ্গ করেছিল। এখন আওয়ামী লীগ বটগাছ না পরগাছা হয়ে আছে।’
সেনাপ্রধান নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবহুল দেশ ও সম্পদ সীমিত। ভূল পদক্ষেপে আমরা যে কোনো সময় ধ্বংস হয়ে যেতে পারি। কোনো ইন্সটিটিউট নষ্ট করার চেয়ে খারাপ কিছু হয় না। পুলিশের পর এখন আর্মিকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাপ্রধান যদি কোনো অনিয়ম করে তবে তার শাস্তি হবে। কিন্তু আমরা গায়ের জোরে তাকে সরাতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে আমি নির্বাচন করতে চাইনি, তখন সরকার সকল এজেন্সিকে আমার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছিল। পরে তারা সফল হতে পারে নাই। আমি ২৫ বছর চাকরি করেছি। আমি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম। এখন নমিনেশন, পদ-পদবী নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আমার মুখ বন্ধ করার জন্য শেখ হাসিনার মতো ব্ল্যাকমেইল করছে। তারা আমাকে দোসর বলে ইমেজ ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসির আহমেদ, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, যুবসংহতি নেতা নাজিম উদ্দিনসহ অন্যরা।