× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কোটা আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক দল

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫ ০৯:০৩ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশের ইতিহাসের নতুন মোড়। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক দলের যাত্রা। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে এগিয়ে এসেছেন তরুণরা। গড়লেন রাজনৈতিক দল। নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ বা এনসিপি। শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরাই দলটির হাল ধরেছেন। দলটির তারুণ্যদীপ্ত নেতারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চান। পরিবর্তন আনতে চান রাজনৈতিক সাংস্কৃতিতে। পরিবারতন্ত্র এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক বলয় থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে সামনে এগোতে চায় সংগঠনটি। গত বছর সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের আন্দোলন থেকে ঘটে গণঅভ্যুত্থান। ছাত্রদের ৩৬ দিনের আন্দোলনে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। রচিত হয় নতুন ইতিহাস। 

২০২৪ সালের ৫ জুন সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। এই রায় বাতিলের দাবিতে একদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও সমাবেশ অব্যাহত রাখেন তারা। গড়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামের সংগঠন। ১ জুলাই থেকে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এ আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা চাকরি পাবে?’ এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ওইদিন গভীর রাতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে। 

ক্রমে আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে আওয়ামী লীগ সরকার বেকায়দায় পড়ে। আন্দোলন দমাতে হামলা-মামলার আশ্রয় নেয়। ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনা ব্যাপকভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিতাড়ন করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ক্যাম্পাসের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরদিন সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এতে প্রায় অচল হয়ে পড়ে সারা দেশ। রাজধানীর ঢাকাসহ ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পালটাপালটি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। দেশজুড়ে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। ১৯ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্ররা। রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেটসেবা। রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর আট দফা দাবি পেশ করে শিক্ষার্থীরা। 

আন্দোলন যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে এর মাঝে ২১ জুলাই কোটা পদ্ধতির সংস্কার করে রায় দেন উচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়, মেধাভিত্তিক নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ। আর বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। পরদিন কোটাপ্রথা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি করা প্রজ্ঞাপনে অনুমোদন দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ২৩ জুলাই কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শেখ হাসিনা সরকার।

২৪ জুলাই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের নিখোঁজের পাঁচ দিন পর তাদের খোঁজ পাওয়া যায়। ২৫ জুলাই দুদিনের জন্য কারফিউ শিথিল করে সরকার। আন্দোলনে আহত হওয়া তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ২৬ জুলাই এলাকা ভাগ করে চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ব্লক রেইড’। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ছয় হাজার ২৬৪ জনকে। নাহিদ ইসলামসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। পরের দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। 

২৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেয় ডিবি। হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলেন। ডিবি কার্যালয়ে ধারণ করা একটি ভিডিও বার্তা রাত ৯টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ২৯ জুলাই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে বৈঠক করেন ১৪ দলের নেতারা। ৩০ জুলাই মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হত্যা ও সহিংসতার বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয় জাতিসংঘ। ৩১ জুলাই ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ নামে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্ররা। 

১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদিন ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুমার নামাজের পর ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’কর্মসূচি পালিত হয়। ছাত্রদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘দ্রোহযাত্রা’নামে কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের শিল্পীসমাজের প্রতিনিধিরা। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৪ আগস্ট ঢাকায় লংমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে সারা দেশে ১৮ জেলায় ব্যাপক সংঘাতের খবর আসে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১৪ জনের মৃত্যু হয়। ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি চলতে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণের ঘোষণা দেন। এরপর জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার কথা জানান। এরপর গণভবন, সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ে অসংখ্য মানুষ, চলে লুটপাট। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলোয় আগুন দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতন হয়। ৩৬ দিনের এ আন্দোলন দেশের রাজনীতিতে নতুন পথরেখা তৈরি করে। 

সরকার পতনের পর নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেপ্টেম্বরে গড়ে ওঠে জাতীয় নাগরিক কমিটি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা জানায়। এ লক্ষ্যে গত কয়েক মাসে তারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করে। এরই ধারাবাহিকতায় এ দুই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গঠন করা হয় নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা