প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫ ০৮:৫৪ এএম
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫ ০৮:৫৯ এএম
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শুক্রবার জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান মঞ্চে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ শর্ষ পদে থাকা নেতারা। ছবি : আরিফুল আমিন
গতানুগতিক রাজনীতির বিপরীতে নতুন বন্দোবস্তের স্বপ্ন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যার নেতৃত্বে রয়েছেন জুলাই আন্দোলনের অকুতোভয় তরুণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নতুন এই দলের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ছাত্রদের হাত ধরে যেন নতুন এক সূর্য উদিত হলো বাংলাদেশের রাজনীতির দিগন্তে।
বিপুল জনসমাগমের সামনে দাঁড়িয়ে নতুন দলের ঐতিহাসিক যাত্রার ঘোষণাটি দেন আন্দোলনে শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বির বোন মিম আক্তার। শহীদ ভাইয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে মিছিল করা দুই বোনের একজন মিম। নতুন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন। ঘোষণাপত্রে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনীতির কথাও। এই অনুষ্ঠানেই দলটির ১৫১ সদস্যদের কমিটি ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য ধর্মের বাণী পাঠ করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। রাজনৈতিক দল ও শহীদ পরিবারের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখা হয় মঞ্চের ঠিক সামনে।
ছাত্রদের নতুন দলের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জনতার ঢল নামে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও আসেন অতিথি হিসেবে। সড়কের পশ্চিম পাশের আড়ং ও পূর্বপাশে খামারবাড়ি পর্যন্ত জনসমাগম ঘটে। অনুষ্ঠানে আগতদের মাথায় ছিল লাল-সবুজের পতাকা বাঁধা। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে। তারা তুমুল হর্ষধ্বনিতে স্বাগত জানান রাজনীতির নতুন দিনের কান্ডারিদের।
জাতীয় নাগরিক পার্টির ঘোষণা দেওয়ার সময় মিম আক্তার বলেন, আপনাদের মনে আছেÑ গত ৫ আগস্ট দুই বোনের কাঁধে ভাইয়ের লাশ; সেই দুই বোনের মধ্যে আমি একজন। ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটে নাই। আমি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ ঘোষণা করছি।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির ঠাঁই হবে না। আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করব।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংগ্রামী সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করে তিনি বলেন, আমরা সামনের কথা বলতে চাই। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই।
নাহিদ ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প’Ñ স্লোগানটি তুলে ধরে বলেন, বিকল্পের জায়গা থেকে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। আজকের মঞ্চ থেকে শপথ, বাংলাদেশকে বিভাজিত করা যাবে না।’
এরপর নাহিদ ইসলাম লিখিত বক্তব্য পাঠ করা শুরু করেন। তিনি বলেন, আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বদ্বীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে। তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে এ দেশের গণমানুষের মুক্তি মেলেনি। ফলে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। তথাপি, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেÑ এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি। বরং বিগত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে।
জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-জনতা বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। জনগণ বরং রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল, যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদেরকে সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্য দিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারব। আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই, যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে। আমাদের রিপাবলিকে সাধারণ মানুষ, একমাত্র সাধারণ মানুষই হবে ক্ষমতার সর্বময় উৎস। তাদের সব ধরনের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের শক্তিশালী সুরক্ষাই হবে আমাদের রাজনীতির মূলমন্ত্র। আমরা রাষ্ট্রে বিদ্যমান জাতিগত, সামাজিক, লিঙ্গীয়, ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে একটি বহুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই। আমাদের রিপাবলিক সব নাগরিককে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর কোনো অংশকেই অপরায়ন করা হবে না। বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব প্রদান ও সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা একটি ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংকল্প আবারও পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই বিজয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণেরও শপথ। চলুন আমরা একসঙ্গে, হাতে হাত রেখে, এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হবে, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকারের সংগ্রামই হবে রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য। যেখানে সাম্য ও মানবিক মর্যাদা হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখনই সময় নতুন স্বপ্ন দেখার, নতুন পথ চলার এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার! এই নতুন বাংলাদেশ গড়ায় আমরা সবাই প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে শপথ করি। ঐক্যবদ্ধ হই। এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাই। আমাদের দেশ, আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎÑ আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের প্রতিজ্ঞা!
নতুন দলের আহ্বায়ক বলেন, আমরা কেবল সাম্যের কথা বলতে চাই, পূর্বের ইতিহাস পেছনে ফেলে স্বপ্নের কথা বলতে চাই। বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থি, ভারতপন্থিদের ঠাঁই হবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এ দলের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা যেন তারুণ্যের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। হত্যাকারীদের বিচার করতে পারি, গণপরিষদ নির্বাচন ও সংবিধান পরিবর্তন করতে পারি।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, গত ৫৩ বছরে আমাদেরকে একটি বাইনারি রাজনীতিতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দ্বিতীয় কোনো সুযোগ না থাকায় আমরা নাগরিক অধিকারের বিষয়টি ভুলতে বসে ছিলাম। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা সেই দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটানোর স্বপ্ন দেখতে যাচ্ছি। এখন আমরা একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কথা বলছি।
সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, তরুণদের হাত ধরে বাংলাদেশ বদলাবে, অবশ্যই বদলাবে।
মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিগত ১৬ বছর যে সব রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, দেশছাড়া হয়েছেনÑ তাদের আমি সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানাই। আমি বলতে চাই, তরুণরা বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, শেখ মুজিব রক্ষীবাহিনী গঠন করে দুঃশাসন চালিয়েছেন। বিভিন্ন হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছেন। শেখ হাসিনার সময় আবারও স্বৈরশাসন, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠাসহ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে তাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় দলে দলে সংঘর্ষ এমনকি বেগম খালেদা জিয়াকেও নির্মমভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। আবার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনাসহ তার দলীয় নেতাদের পাশের দেশে পালিয়ে যেতেও দেখেছি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি, আগামীর বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্রের বাংলাদেশ। তরুণদের নেতৃত্বে দলদাসমুক্ত বাংলাদেশ গঠন হবে। আর কখনও নির্বাচনের আগে ও পরে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে না। দল-মত নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে বসবাস করার সুযোগ পাবে।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্টের মধ্য দিয়ে আমরা এই দুঃশাসনের কবর রচনা করেছি। গণভবনে কে যাবে তা নির্ধারণ হবে বাংলাদেশ থেকে, ভারত থেকে নয়। সংসদে কে যাবে তা নির্ধারণ করবে দেশের খেটে খাওয়া জনতা। ক্ষমতার মসনদে কে বসবে তা নির্ধারণ করবে এই ভূখণ্ডের মানুষ। আমরা এই তরুণ প্রজন্ম কথা দিতে চাই, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা সচল করে গড়ে তুলব। বিভাজনের পরিবর্তে একতার রাজনীতি গড়ে তুলব। আমরা এখনও এই ভূখণ্ডের অধিকার আদায় করতে পারিনিÑ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে, প্রেসক্রিপশনের সম্পর্ক নয়।
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটা যদি থাকে তাহলে আগামীর বাংলাদেশ হবে অপ্রতিরোধ্য। এই মঞ্চ থেকে আমরা শপথ নিতে চাই, এই ছোট জীবনে এত বড় দায়িত্বের আমানতকে যেন আমরা খেয়ানত না করি।
যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আমরা চাই আমাদের মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হোক। যখনই জাতির প্রয়োজন হবে দলমত নির্বিশেষে আমরা যেন সামনে জাতীয় ঐক্য দেখতে পাই। আমরা তরুণ, আমরা অনেক বড় দায়িত্ব হাতে নিয়ে এগোতে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই।
যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই আমাদের উপমহাদেশে শাসন ও শোষণের বন্দোবস্ত কায়েম করা হয়েছে। তবে এ দেশে মানুষ মাথানত না করে বারবার জেগে উঠেছেন। প্রতিটি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের নতুন স্বপ্ন আশা-আকাঙ্ক্ষা আবির্ভূত হয়েছে। তারা এখন আর কারও দাসত্ব মেনে চলতে চায় না। এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েম করতে নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজন।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এ ছাড়াও যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি মীর আমির হোসেন আমু প্রমুখ।
১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ইসমাঈল হোসেন রাব্বির বোন মিম আক্তার জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব পদে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। পরে দলের আংশিক অর্গানোগ্রাম পড়ে শোনান আখতার হোসেন। কমিটিতে মোট ১৫১টি পদ রয়েছে।
নতুন দলে রয়েছেনÑ সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদিব, সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, নাহিদা সরওয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসউদ।
যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেনÑ নুসরাত তাবাসসুম, মনিরা শারমিন, মাহবুব আলম, সরোয়ার তুষার, মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন, তাসনুভা জেবিন, সুলতান মো. জাকারিয়া, আতিক মুজাহিদ, আশরাফ উদ্দিন মাহাদী, অর্পিতা শ্যামা দেব, তানজিল মাহমুদ, অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, জাবেদ নাসিম, এহতেশাম হক এবং হাসান আলী। যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে আছেন আব্দুল্লাহ আল আমিন, আরিফ সোহেল, রশিদুল ইসলাম রিফাত, মাহিন সরকার, নিজাম উদ্দিন, আকরাম হোসেন সিএফ, এসএম সাইফ মোস্তাফিজ, সালেহ উদ্দিন সিফাত।
দপ্তরে সংযুক্ত হয়েছেন আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, ফরিদ উদ্দিন, ফরহাদ আলম ভূঁইয়া, মিরাজ মিয়া, লুৎফর রহমান, মঈনুল ইসলাম তুহিন, মুশফিক-উস সালেহীন, জাহিদুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম মুসা, হুমায়ুরা নূর, মুশফিকুর রহমান জোভান, মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান, সাগুফতা বুশরা মিশমা, আহনাফ সাঈদ খান, আবু সাঈদ মো. সুজাউদ্দিন, মীর আরশাদুল হক, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, তারেক রেজা, মশিউর রহমান, জয়নাল আবেদীন শিশির, মুনতাসির রহমান, গাজী সালাহউদ্দিন তানভীর, তামিম আহমেদ এবং তাহসিন রিয়াজ।
দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ, ডা. মাহমুদা মিতু, মোল্লা রহমতউল্লাহ, এসএম শাহরিয়ার, জোবায়ের আরিফ, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার, আলী নাসের খান, সাকিব মাহাদী, মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সাদিয়া ফারজানা দিনা, অলিক মৃ, হানিফ খান সজীব।
যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কারী তারিকুল ইসলাম, যুব উইং ডা. আবদুল আহাদ, দিলশানা পারুল, আবু হানিফ, আবদুস জাহির, মাজহারুল ইসলাম ফকির, গোলাম মুর্তুজা সেলিম, আশেকীন আলম, ডা. জাহিদুল বারী, কৈলাশ চন্দ্র দাস, ডিম্পালী ডেভিড রাজু, শাহ মঈনুদ্দিন ও সাদ্দাম হোসেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আংশিক কমিটি ঘোষণার কথা জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ করা হবে।