প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩০ এএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:০০ এএম
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে আজ শুক্রবার। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে বেলা ৩টায় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। মধ্যপন্থি এই দলের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’, ইংরেজিতে ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি।’ সংক্ষেপে এনসিপি। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন।
দেশের এক পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন রাজনৈতিক শক্তির আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ব্যাপক সমাবেশ ঘটানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশ থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হবেন। প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে মুখ্য সমন্বয়ক, হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। কোষাধ্যক্ষ পদে আসবেন আবদুল হান্নান মাসউদ। দপ্তর সম্পাদক পদে সালেহ উদ্দিন সিফাতকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর বাংলা মোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ বৈঠক হয়। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, ছাত্রদের বাইরেও সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকদের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সাংগঠনিক কাঠামোতে থাকছে ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের শীর্ষ পদে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হবে। নতুন রাজনৈতিক দলে থাকছেন না জাতীয় নাগরিক কমিটির পদধারী আলোচিত সাবেক শিবির নেতারা। আগেভাগেই তারা বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান জোনায়েদের নাম আলোচনায় ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জোনায়েদ বলেছেন, তিনি নতুন দলে থাকছেন না। জোনায়েদের এই স্ট্যাটাস ফেসবুকে শেয়ার করে গতকাল ভোরে রাফে সালমান রিফাত (ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরেক সাবেক সভাপতি) লিখেছেন, তিনিও নতুন দলে থাকছেন না। শিবিরের আরেক সাবেক নেতা আরেফীন মোহাম্মদ হিযবুল্লাহও নতুন দলে থাকছেন না বলে জানা গেছে। হিযবুল্লাহ এরই মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ মুখপাত্র পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, নাগরিক সংগঠন, লেখক, সাবেক সেনাসদস্য, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি, পিছিয়ে পড়া তফসিলি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত থাকবেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। ৫ হাজার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হলেও বিলুপ্ত হচ্ছে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আর ‘সিভিল-পলিটিক্যাল’ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থাকবে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠন দুটিতে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে। রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের বর্তমান কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হবে তাদের কার্যক্রম। নতুন রাজনৈতিক দলের কার্যালয় হবে পৃথক স্থানে।
নতুন রাজনৈতিক দল জনকল্যাণমুখী হবেÑ এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, আমি দলের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নই। কারণ আমি এখন সরকারের দায়িত্বে আছি। এ সরকারের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের যে দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে, সে জায়গা থেকে আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব না। তবে আমার প্রত্যাশা থাকবে, শুধু নতুন রাজনৈতিক দল নয়, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলই জনকল্যাণমুখী হবে। জনগণই যেন তাদের কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হয়। গতকাল সন্ধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগরে নিজ গ্রাম আকুবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।