× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ছাত্রদের দলের মূল ফোকাস বহুত্ববাদ

আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৩ এএম

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে আগামী শুক্রবার। দলটিতে জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার বা ধর্মভিত্তিক কোনো আদর্শকেই সামনে রাখা হচ্ছে না। নতুন এই দল হবে সব মতাদর্শের মিলনস্থল। সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসন, অধিকার, নাগরিক মর্যাদাভিত্তিক মধ্যপন্থার দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন ছাত্ররা। সব পন্থাকে নিয়ে মধ্যপন্থায় থাকতে চান তারা। সংগঠনে ভেড়াতে চান সব মতাদর্শের মানুষ। দলটির গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্তদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

ছাত্রদের নতুন দল গঠনের কাজটি করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা একটি মধ্যপন্থি রাজনীতির কথা বলছি। বাম-ডান এমন যে বিভাজন আছে, সেগুলোতে আমরা ঢুকতে চাই না। বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি অথবা উগ্র ইসলামপন্থি বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই। এক্ষেত্রে দলটি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার বা ধর্মভিত্তিকÑ এ ধরনের কোনো আদর্শকেই সামনে রাখতে চায় না।’

দল গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা সাম্য, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের কথা বলছি। এটাকেই হাইলাইট করতে চাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা দলে। একটা রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের, মতাদর্শের মানুষ বসবাস করে। সেই বহুত্ববাদকে স্বীকার করাই হচ্ছে আমাদের মূল ফোকাস পয়েন্ট। নতুন দল ডানেও ঝুঁকবে না, বামের দিকেও ঝুঁকবে না।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘হেফাজত, জামায়াত, বিএনপি ইত্যাদি মতাদর্শভিত্তিক রাজনীতি সমাজকে বিভাজিত করে রেখেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রসমাজের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির যে দল আসছে, সেটি হবে একটি মধ্যপন্থার দল। এই দল কোনো বাইনারি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে না। ছাত্র-জনতার যে রাজনৈতিক দলটি জনগণের সামনে আসতে যাচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক লড়াই হবে গণপরিষদ নির্বাচন ও একটি নতুন সংবিধান।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ছাত্রদের নতুন দল হবে মধ্যপন্থি, অধিকার ও মর্যাদাভিত্তিক। দেশে বাম-ডানের যে মতাদর্শিক বিরোধ রয়েছে, সেটা আমরা কাটিয়ে উঠতে চাই। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকল্প যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা হবে, তেমন একটি রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করাই হবে দলের লক্ষ্য। পাচার ও লুটপাটবিরোধী উৎপাদনশীল অর্থনীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে। এর বাইরে দীর্ঘমেয়াদি আরও কিছু কর্মসূচি নেবে দলটি।’

তিনি বলেন, ‘দল ঘোষণার পর বড় কর্মসূচিতে যাব না আমরা। রোজা চলে আসবে। এ সময় আমরা সাংগঠনিক কাজে বেশি মনোযোগী হব। অভ্যন্তরীণ কিছু কাজ সেরে ফেলব। দলীয়ভাবে সারা দেশে ইফতার মাহফিলের মতো কিছু কর্মসূচি থাকবে।’

যারা থাকছেন শীর্ষ পদে

নতুন রাজনৈতিক দলটির শীর্ষ পদে কারা থাকছেন, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সামনে থেকে ভূমিকা রাখা ছাত্রনেতারা প্রায় সবাই নতুন দলের শীর্ষ পর্যায়ের পদে থাকতে চান। ফলে একটা সংকট তৈরি হয়। সংকট সমাধানে শীর্ষ পর্যায়ে পদের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়। পদের সংখ্যা চারটি থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়েছে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব নতুন দুটি পদ তৈরি করা হয়েছে বলা জানা গেছে। শীর্ষ পর্যায়ের পদে নারী নেতৃত্ব থাকছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে।

আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে নাহিদ সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সদস্যসচিব হিসেবে আখতার হোসেন থাকছেন। মুখ্য সংগঠক হিসেবে থাকছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। আর মুখ্পাত্র হিসেবে থাকছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রাথমিকভাবে কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৫১ থেকে ২০১ জন হতে পারে।

নতুন দলের নাম

নতুন দলটি কী নামে আত্মপ্রকাশ করবে, তা নির্ধারণের জন্য অনলাইন মাধ্যমে নাম চাওয়া হয়। তাতে কয়েক লাখ মানুষ সাড়া দেন। অসংখ্য নামের প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘মানুষের কাছ থেকে অনেক নামের প্রস্তাব পেয়েছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে প্রাধান্য দিয়ে, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচারের প্রতিফলন ঘটে এমন নামের কথা মানুষ বেশি বলেছে। তার মধ্যে জনতার দল, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, বিপ্লবী দল, নাগরিক শক্তি, ছাত্র-জনতা পার্টি, বাংলাদেশ বিপ্লবী পার্টি, রিপাবলিক পার্টিসহ ৩০টির অধিক নাম বেশি বেশি করে আমাদের কাছে এসেছে। নাম নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমরা আশাবাদী দল ঘোষণার আগেই গ্রহণ করা নাম জানাতে পারব।’

তবে নতুন দলের নাম হিসেবে ‘রেভল্যুশনারি ন্যাশনালিস্ট পার্টি’ চূড়ান্ত হয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। সংক্ষেপে এর নাম হবেÑ ‘আরএনপি’।

দলের প্রতীক এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। আখতার হোসেন বলেন, ‘জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে এমন প্রতীক বাছাইয়ের জন্য পরামর্শ এসেছে মানুষের কাছ থেকে। সংগ্রাম, উন্নয়ন ও ঐক্য যাতে নতুন দলের প্রতীকে ফুটে ওঠে এমন পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অনেক প্রতীকের নাম এসেছে। তার মধ্যে উদীয়মান সূর্য, কলম, বই, মুষ্টিবদ্ধ হাত রয়েছে।’

‘অনেক চমক থাকছে’

নতুন রাজনৈতিক দলটিতে অনেক চমক থাকছে বলে জানিয়েছেন ছাত্ররা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারের সাবেক আমলা ও সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা যোগ দেবেন নতুন এই দলে। ইতোমধ্যে ছাত্রনেতাদের প্রস্তাবও দিয়েছেন। নতুন দলকে সমর্থন জানিয়ে গত শনিবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করেন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। 

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশ ঘুরে নতুন দলের শাখা কমিটি তৈরি করছে। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারীর দাবি, নতুন দল ডানপন্থা বা বামপন্থা, কোনো দিকেই ঝুঁকবে না। সাম্য, ন্যায় ও দেশপ্রেম হবে স্লোগান। তবে এই নাগরিক কমিটিতে রয়েছেন একঝাঁক জামায়াত-অনুগত ছাত্রনেতা। এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে।

উপদেষ্টা থেকে নাহিদের পদত্যাগ

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে গতকাল মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন মো. নাহিদ ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগের পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে থাকা বেশি প্রয়োজন, তাই পদত্যাগ করেছি। সরকারের বাইরে দেশের যে পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন। আমরা যে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করি, সে আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণঅভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছেন, সেই শক্তিকে সংহত করতে আমি মনে করছি, সরকারের থেকে সরকারের বাইরে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে। বাইরে যে আমাদের সহযোগী যোদ্ধারা রয়েছেন তারাও এটি চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজকে মূলত পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’

এর আগে গত সোমবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে সারজিস আলম জানান, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকালে জাতীয় সংসদ সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সব রাজনৈতিক দল, শহীদ পরিবার ও অভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্তদের উপস্থিতিতে এই দল ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, ‘যুগের পর যুগ ধরে সংসদ ভবনকে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক না বানিয়ে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত, দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে পলিসি মেকিংয়ের জায়গা বানিয়ে রাখা হয়েছিল। জায়গাটিকে স্বৈরাচারের উৎপাদন ক্ষেত্র বানিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতাকে সামনে রেখে, জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। নতুন রাজনৈতিক দলে ব্যক্তি স্বার্থ, গোষ্ঠী স্বার্থ, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে। আমরা আমাদের নতুন রাজনৈতিক দলের শপথটি এই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে করতে চাই।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা