× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ছাত্রদের আন্দোলনের ঐক্য কি হারিয়ে যাওয়ার পথে

আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:২০ এএম

গ্রাফিক্স : প্রবা

গ্রাফিক্স : প্রবা

ইতিহাস বদলে দেওয়া ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে। ক্যাম্পাসসহ রাজনীতির ময়দানে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করছে সংগঠনগুলো। ফলে ধীরে ধীরে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রকট হয়েছে পারস্পরিক অনাস্থার মনোভাবও। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। দিচ্ছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। যার ফল হিসেবে দৃশ্যমান হচ্ছে সংঘাত, সংঘর্ষ। আবার এসবের দায়ও চাপিয়ে দিচ্ছে একে অপরের ওপর। এ অবস্থায় আগামী দিনে ছাত্ররাজনীতি ঘিরে তীব্র উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার আভাস মিলছে। যদিও জাতীয় স্বার্থ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে এখনও একসঙ্গেই থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সংগঠনগুলোর নেতারা। এই ইস্যুতে প্রয়োজনে একসঙ্গে বসে কথা বলতেও প্রস্তুত তারা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি দেশের আপামর জনতা, রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ যুক্ত হয়েছিল। যার পরিণতিতে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। দেড় হাজারের বেশি মানুষের জীবনের বিনিময়ে অবসান ঘটে আওয়ামী দুঃশাসনের। এই আন্দোলনে ৩০ হাজারের মতো মানুষ আহত হয়। কিন্তু এত বড় আন্দোলনে যারা হাতে হাত রেখে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেখা গেছে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে নানা ইস্যুতে দূরত্ব বাড়ছে। 

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতারা মনে করেন, ফ্যাসিবাদের সময় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারায় ছাত্ররাজনীতির পরিবেশে ছিল না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু ধারায় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নানা কাজ করছে ছাত্রদল। কিন্তু তাদের কার্যক্রম মেনে নিতে পারছে না একটি মহল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে তারা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকলেও নেতৃত্ব দিচ্ছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন। তারা ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতি-শূন্য করতে চায়। এটা করতে পারলে তারা সহজে গুপ্তভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। এই পথের বড় বাধা ছাত্রদল। তাই ছাত্রদলকে টার্গেট করা হচ্ছে। পায়ে পা দিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করতে চাইছে। 

প্রসঙ্গত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন। পরের দিন ফেসবুক কমেন্টকে কেন্দ্র করে সিলেটের এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে হামলা চালিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে রাজনীতির অঙ্গন। 

ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জাতীয় স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর একসঙ্গে কাজ করা উচিত। আমরা কাজ করতে চাই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা একসঙ্গে লড়াই করেছি, তারা কেউ আমাদের শত্রু না। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মানুষের আদর্শ আলাদা থাকতেই পারে। আপনি আপনার দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে আমরা এক হতে পারি। এটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয়। এটাই আমরা চাই।

ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, উদারতার পরিচয় দিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। এজন্য যেকোনো সময় তাদের সাথে আমরা বসতে পারি, যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করতে পারি। আমরা তাদের আহ্বান করছি। ছাত্রদল সাড়া দিলে অবশ্যই আমরা বসতে পারি।

কুয়েটের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে শিবির সভাপতি বলেন, এই ঘটনা সবার মধ্যে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আবারও আতঙ্ক তৈরি করেছে। আমাদের কথা হচ্ছে, এই রাজনীতি ছাড়তে হবে। যাদের জন্য এই আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে, তাদের কাছে আমাদের অনুরোধÑ পুরাতন ধারায় ফিরে যাবেন না। শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে। আমরা সুস্থ ধারায় রাজনীতি করতে পারলে এই আস্থা থাকবে। আর কোনো কারণে এই আস্থা নষ্ট হলে এর জন্য ছাত্রদল দায়ী থাকবে।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জুলাই-আগস্টে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্য বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মধ্যে সামান্য মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রের স্বার্থে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। এর জন্য যে ধরনের ভূমিকা পালন করা দরকারÑ ছাত্রদল তা করছে। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ করা গেলে ঐক্যটা সুদৃঢ় হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই গুপ্ত সংগঠন নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার স্বার্থে বলছে ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকবে না। এটা নিজেদের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা বিভেদ দেখা দেয়। কেউ যেন ঐক্য বিনষ্ট করতে না পারে, তার জন্য জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানীয়দের ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি তারা ভূমিকা রাখবেন। 

ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অতীতে ছাত্রলীগ ঘোষণা দিয়ে, বাহিনী তৈরি করে বিরোধী মতকে দমন করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে। এখনও আমরা সেটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ বিকৃত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনীতিবিদদের হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের জন্য ছাত্রদলকে দায়ী করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবির। অন্যদিকে পাল্টা বক্তব্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরকে ওই ঘটনার জন্য দায়ী করেছে ছাত্রদল। কুয়েটের ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ শেষে সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করছি, সেই স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর কোনো সন্ত্রাসের ঠিকানা হবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে পোস্টে লেখেন, কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ স্টাইলে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে তারা নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনার পথেই অগ্রসর হলো। 

সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে শিবিরকর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্রনেতারা শিবিরকে গুপ্ত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান। 

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আবার সামনে চলে এসেছে। ছাত্রদল বরাবরই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে। বরং তারা গঠনমূলক ও সুষ্ঠু ধারায় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু রাখার কথা বলে আসছে। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চায় না ছাত্রশিবিরও। সংগঠনটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে সবার মধ্য একটা ট্রমা তৈরি হয়েছে। এ কারণেই কিছু কিছু জায়গায় ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে। ৫ আগস্টের পর ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই আস্থা তৈরি করতে পেরেছে যে, ছাত্ররাজনীতির গঠনমূলক দিক রয়েছে। বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদী আচরণের বাইরে গিয়ে ছাত্ররাজনীতির চর্চাটা সবাই করতে পারে। যার মধ্য দিয়ে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হবে। রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে উঠবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা