শিগগির আত্মপ্রকাশ
রাহাত হুসাইন
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫০ এএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৯ এএম
ছাত্র নেতৃত্বের হাত ধরে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল।
দেশের ইতিহাসের বাঁক বদলে দেওয়া অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে থাকা ছাত্র নেতৃত্বের হাত ধরে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে দলটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। এই দলের আত্মপ্রকাশকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়েছে ভিন্নমাত্রার প্রত্যাশা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাই রয়েছেন আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া রাজনৈতিক দলটির মুখ্য ভূমিকায়। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি বড় অংশ নতুন দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই এই দলের কাছ থেকে নতুন ধারার রাজনীতির প্রত্যাশা রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ছাত্রদের।
গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এই দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন দেশের তরুণ সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নতুন দলটি দেশে চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটাবে। ন্যায়বিচার ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে থাকবে আপসহীন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে রাখবে বলিষ্ঠ ভূমিকা।
ডান-বাম বাইনারির বাইরে গিয়ে মধ্যপন্থি একটি রাজনীতি দাঁড় করানো উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি জনগণকে রাজনীতিবিমুখ করে তুলেছে। একদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি, অন্যদিকে রয়েছে পুরোনো ভাবাদর্শভিত্তিক রাজনীতি। ফলে আমাদের ডান-বাম বাইনারির বাইরে গিয়ে মধ্যপন্থি একটি রাজনীতি দাঁড় করানো উচিত।’
তিনি বলেন, ‘নতুন দল মাল্টিকালচারালড, সিটিজেনারি ও দরদের জায়গা থেকে দেশের সবার জন্য জনকল্যাণকর কাজ করবে। তারা ২০২৪ ও ১৯৭১-কে ধারণ করে নিরঙ্কুশ সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।’
ক্ষমতার লড়াইয়ের চেয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র নেতৃত্বের দলটির ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রাসেল। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, নতুন দল সত্যিকারের গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এই দল ক্ষমতার লড়াইয়ের চেয়ে জনগণের অধিকারের পক্ষে যেন সোচ্চার থাকে এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নে যেন থাকে আপসহীন।’
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য নতুন রাজনৈতিক দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সবার লক্ষ্য একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেক্ষেত্রে নতুন দলটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক চর্চা করবেÑ সেই প্রত্যাশা করি।’
নতুন দলটি গণতান্ত্রিক দেশ গঠনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব) একটা বড় লড়াই করেছে। অব্শ্যই তাদের পারা উচিত। আশা করি তারা পারবে।’
গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে নতুন দল গঠিত হলে তাদের স্বাগত জানানোর কথা বলেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়দের নেতৃত্বে একটি দল তৈরি হচ্ছে। এই দল গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে গেলে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। তবে আমরা এ-ও মনে করি, ক্ষমতার ছায়াতলে থেকে দল গঠন দেশের মানুষ ভালো চোখে দেখে না। জনগণের মধ্য থেকে দল গঠনের জন্য আমরা তাদের আহ্বান জানাই। দেশে একটি গণতান্ত্রিক শক্তি তৈরি হলে সেটা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য শুভ হবে বলে মনে করি।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, ‘নতুন দল গঠনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই, সাধুবাদ জানাই। তবে সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় যাতে কোনো দল গঠন না হয়, সেদিকে সবার লক্ষ রাখা দরকার। আশা করি, যারা নতুন দল গঠন করছে, তাদের বলা উচিত যে এটা সরকারের সহযোগিতায় গঠিত হওয়া কোনো দল নয়। আমরা নিজেরা তৈরি করেছি। এই বিষয়টি স্পষ্ট হলে তারা মানুষের কাছ থেকে ধন্যবাদ পাবে। দল গঠন একটি ধারাবাহিক চলমান প্রক্রিয়া। কেউ হঠাৎ এসে একটি দলের প্রধান হয়ে যেতে পারেন না। সরকার ছেড়ে কেউ দলে এসে যুক্ত হলে একটা প্রশ্ন সামনে আসবে। তা হলো, নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া যতদিন চলেছে, যিনি দলে আসবেন, তিনি সরকারে থেকে সেই প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করেছেন। এ বিষয়টি পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নতুন দলের কাছে জনপ্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে। কারণ ছাত্ররাই দেশে বড় পরিবর্তন এনেছে। সে জায়গা থেকে তাদের কাছে সবারই বড় প্রত্যাশা রয়েছে। তারা সব সমস্যার উত্তরণ করে সঠিক পথে এগোবে। দেশ থেকে সুন্দরভাবে গঠন করবে, দুর্নীতি-অর্থ পাচার দূর করবে। সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পূরণ করবে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে।’
নতুন দল এসব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠন নিয়ে আমি আশাবাদী। দেশের রাজনীতিবিদরা সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হলে যেকোনো প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব। কাজ তো সবাই করতে পারে; সেটা সততার সঙ্গে করবে নাকি দুর্নীতির সঙ্গে করবেÑ এটা হলো বিষয়।’