নরসিংদী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৯ পিএম
প্রবা ফটো
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যে সকল সন্তানেরা জাতিকে দায়বদ্ধ করে চলে গেছে, তাদের কথা দিচ্ছি তোমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতের আপোষহীন সংগ্রাম চলবে। তোমাদের দেয়া আবু সাঈদ, মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ স্লোগানই জামায়াতের স্লোগান।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) বিকালে নরসিংদীর সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যেই নির্বাচনে পেশিশক্তি ও কালো টাকার প্রভাব চলবে না, এমন একটি নির্বাচন আমরা চাই। পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনে অতিতে যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, জনগণের টাকায় কেনা বুলেটে জনগনের বুকে বিদ্ধ করেছে তাদেরকে কোন দায়িত্বে নিয়োজিত করা যাবে না। আগামী নির্বাচনে প্রবাশীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের ব্যবস্থাও চায় এই জামায়াতের আমির।
তিনি বলেন, নির্বাচন হতে হবে। তবে যেন তেন মার্কা নির্বাচন আমরা চাইনা। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চাই। সুষ্ঠ নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে পেশি শক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না। এটা সহজে আসবে না। আমরা বুঝতে পারছি। এর জন্য বড় একটা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন। জুলাই-আগষ্টে ২৪ এই জাতিকে একটা ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ধাক্কা এই জাতিকে দিতে হবে। অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভূয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। মৃত ভোটারদের চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। যে সকল সমস্ত লোকেরা ভোটার হয়েছে, কিন্তু নাম তালিকা ভূক্ত হয়নি। সে সমস্ত ভোটরদের তালিকা ভূক্ত করতে হবে। জুলাই আগষ্টের আন্দোলন সফল করতে সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের সাথে হাত মিলিয়ে একাকার ছিল।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচর পতন আন্দোলন করতে গিয়ে বিদেশে আমাদের ভাইয়েরা জেলে গিয়েছেন। তারা এক সাথে আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। রেমিটেন্স বন্ধ করে স্বৈরচার সরকারকে লাল ফ্লাগ দেখিয়েছিল। তাদেরকে স্যালুট জানাই। আমরা চাই এই নির্বাচনে প্রত্যেকটা প্রবাসী ভাই বোনের ভোটার নিশ্চিত করতে চাই। মাঠ প্রশাসনে যারা আছেন। যারা অতীতে দায়িত্বের পরিচয় দিতে পারেন নাই। দায়িত্ব হীনতার পরিচয় দিয়েছেন। যাদের হাত থেকে জনগনের কেনা পয়সার বুলেট জনগনের বুকে বিধেঁছে। আমরা আগামী নির্বাচনে তাদের কোন দায়িত্বে দেখতে চাইনা। কথা এক দম সাফ। এখানে কোন দানাই ফানাই নেই। তিনি প্রশাসনের যে পর্যায়ে থাকুকনা কেন? প্রশাসনের সৎ ও দেশ প্রেমিক যারা আছেন,তাদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশ বাসী কাজ করবে ইনশাল্লাহ্। জুলাই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তাবায়নে জামাতের আপোশহীন লড়াই চলবে।
অর্ন্তবর্তী সরকারকে উদ্যেশে করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, খুনীদের বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে সংস্কার সাধন করতে হবে। তারপর একটি সুষ্ঠ নির্বাচন সম্পন করতে হবে। এই তিনটি জনগণের দাবি। যতটুকু সময় পান,কিছু কাজ তো আপনাদেরও করতে হবে। দৈনন্দিনের কিছু কাজ ও উন্নয়নের কিছু কাজ। আপনার আবার যেন নতুন করে কোন বেইনসাফী না করেন। ইনসাফের ভিত্তিত্বে করবেন। ২৪ এর গণহত্যায় অনেক মানুষ জীবন দিলো। অনেক লাশ গুম করে ফেলেছে। আমার সেসব লাশের সন্ধান এখনো পাই নাই। ঢাকার সাভারের আশুলিয়া ট্রাক সাড়িবদ্ধ। লাশ ছুড়ে মারা হয়েছে ট্রাকের উপর। ছিটকে দেওয়া হয়েছে লাশের উপর পেট্রোল। ধরিয়ে দেয়া হয়েছে আগুন। বানিয়ে ফেলা হয়েছে ছাই। এদের কোথায় খুঁজে পাবো। ৩ আর ৪ আগষ্ট দুইদিন ইন্টারনেট বন্ধ করে মানুষকে মেরে লাশ গুলো গুম করে ফেলা হয়েছিল। আজকে যেখানেই যাই সন্তান হারা, স্বামী হারা, পিতাহারা পরিবারের আহাজারী শুনতে পাই।
চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু একজন পানের দোকানদারকে বলা হয় সকালের খাজনা দিয়ে ব্যবসা করবা। অসহায় মানুষ ভিক্ষার বাটি হাতে নিয়ে বসে। তারা বলে এখানে ভিক্ষা করতে হলে খাজনা দিতে হবে। এভাবে ঘাটে ঘাটে চাঁদা। জনে জনে চাঁদা। অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ। আপনি একটি বাড়ী বানাবেন-দেখবেন- মানব রুপী দানবরা এসে হাজির হয়ে বলবেন, চাচা বা বড় ভাই বাড়ি বানান অসুবিধা নেই। আমাদের খেয়াল রাখবেন। আমাদের সন্তানেরা কি এই জন্য জীবন দিয়েছিল? তোমরা যারা শহীদ হয়ে জাতীকে ঋন করেছো। আমরা আল্লাহর নামে শপথ করে তোমাদের কথা দিচ্ছি তোমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার আমাদের আপোশহীন লড়াই চলবে। এই সমাজ থেকে চাঁদাবাজী দূর্নীতি দু:শাসন যতক্ষন পযর্ন্ত বিদাই না নেবে। ততক্ষন আমারদের লড়াই চলবে।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সব কয়টি কার্যালয় কার্যত সীলগালা করে রাখা হয়েছিল। একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমরা নিবন্ধনটা এখনও ফিরে পাইনি। নিবন্ধনের জন্য এখনো আদালতে লড়াই করতে হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। অন্যায়ের কাছে ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নত না করার কারণে কেড়ে নেওয়া নিবন্ধনটা ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সাথে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তিনি অবিলম্বে প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সরকারের কাছে। এ ছাড়া দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দেশে বিদেশে যেখানেই থাকুক জাল ফেলে ফিরিয়ে এনে সরকারি কোষাগারে জমা করার দাবি করেন জামায়াতের আমীর।
গণহত্যাকারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার এবং বৈষম্যহীন-ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম, মানবিক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নরসিংদী জেলা আমির মাওলানা মো. মোছলেহুদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আ.ফ.ম আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মাহানগর আমির আব্দুল জব্বার, জেলা শাখার সেক্রেটারি আমজাদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।