খুলনা অফিস
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:১৫ পিএম
সমাবেশে বক্তব্যে দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। প্রবা ফটো
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেছেন, জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না এবং দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কারও শুধু জনগণের সরকারই করতে পারে। রাষ্ট্র পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ, যা সঠিকভাবে করতে হলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে খুলনা জেলা বিএনপির বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং দ্রুত গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচির আয়োজন করে খুলনা জেলা বিএনপি।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অক্টোবর মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার গণহত্যার বিচার হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখনো আশাবাদী যে, যারা গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে, তাদের যেন কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রক্ষা করতে না পারে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, বিএনপি ১৬ বছর আন্দোলনের আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। বিএনপির আন্দোলনের ফসল হলো অন্তর্বর্তী সরকার, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে হলে অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ এখন অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এই শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, সরকার খুলনার বন্ধ পাটকলগুলো পুনরায় চালুর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, বরং লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে খুলনার সব বন্ধ পাটকল ও কারখানা চালু করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এই দুটি বিষয় নিয়ে এখনো জনগণকে রাজপথে নামতে হবে ভাবলে অবাক লাগছে। দুর্ভাগ্য আমাদের। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাবার ৬ মাস গত হলেও; সার্বিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। কারণ, আজও বাংলাদেশের শাসনযন্ত্রে ফ্যাসিবাদের দোসরেরা বর্তমান। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে বসিয়ে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ফ্যাসিষ্টমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম করতে চাইবেন? আবার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে ইস্প্রিটের কথা বলবেন; এটি দ্বিচারিত ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ যে সব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে- সেটি ২০০৯ সাল থেকে বিএনপি বলে আসছে। আমরা বারবার বলেছি- বাংলাদেশের মানুষ কাকে ভোট দেবে সেটি তাদের ব্যাপার; কিন্তু তাদের ভোট দেবার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো তুলে ধরেন তিনি।
সম্প্রতি খুলনা সফরে পাট ও বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তৃতার উদ্বৃতি উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, (পাট উপদেষ্টা) তারা খালিশপুর তথা খুলনা অঞ্চলের বন্ধকৃত পাটকলগুলো চালু করতে পারবেন না। তারাও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতোই শ্রমিক-জনতার কষ্টে অর্জিত পাটকলগুলো লীজ দিতে চায়। আমরা বিএনপি বলছি, জনগন যদি আমার দল বিএনপিকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দেয়- আমরা খুলনা অঞ্চলের সকল বন্ধ পাট কল-কারখানাগুলো চালু করব।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও খুলনা মহানগর শাখার আহবায়ক এ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মো. শফিকুল আলম তুহিন।
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মন্টুর সভাপতিত্বে সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর মো. আমিরুল ইসলাম কাগূজি, খুলনা জেলা যুবদলের আহবায়ক এবাদুল হক রুবায়েত, নগর যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ সুমন, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব নাদিমুজ্জামান জনি, নগর যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম রুবেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নবনির্বাচিত আহবায়ক আতাউর রহমান রুনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিরাজুর রহমান মিরাজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান মিস্ত্রী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইস্তিয়াক আহমেদ ইস্তি, জেলা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল কুমার সাহা, জেলা মহিলাদলের সভানেত্রী অ্যাডভোকেট তসলিমা খাতুন ছন্দা, জেলা ছাত্রদলের গোলাম মোস্তফা তুহিন ও মহানগর ছাত্রদলের তাজিম বিশ্বাস প্রমুখ। শুরুতেই মহাগ্রন্থ আল-কোরআন তিলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা ফারুক হুসাইন। শ্রীমত ভাগবাত গীতা পাঠ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সুদীপ্ত মল্লিক।
দীর্ঘদিন পর খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে এ ধরনের বৃহৎ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরের পর থেকেই খুলনা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সভাস্থলে উপস্থিত হন। জনসভাস্থল এবং আশপাশের এলাকা নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে।