× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাতীয় পার্টির ভেতরে ঐক্যের প্রচেষ্টা

জয়ন্ত সাহা

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২২ ১৪:৩৪ পিএম

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২ ১৬:২৩ পিএম

অলঙ্করণ : জয়ন্ত জন

অলঙ্করণ : জয়ন্ত জন

দলের পদপদবি ও জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের সুরাহা হতে চলেছে বলে আভাস মিলেছে। দলের বহিষ্কৃত নেতারা রওশনশিবিরে যোগ দিয়ে যখন ক্রমেই জিএম কাদেরের জন্য হুমকি হয়ে উঠছিলেন বা তাকে মামলা-মোকদ্দমায় পর্যুদস্ত করে দিয়েছিলেন, তখন তাদের আশার উনুনে ছাই ঢেলে দিয়েছেন খোদ রওশন এরশাদ। দীর্ঘ পাঁচ মাস থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন তিনি।

গত রবিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘আমি সবসময় জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। আমি আবারও বলছি, পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই ওঠে না। আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি। পার্টির সব এমপি, প্রেসিডিয়াম এবং অন্যদের সঙ্গে যেকোনো বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বসব। আমি নিশ্চিত, সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

দেশে ফিরে রওশন এরশাদ উঠেছেন হোটেল ওয়েস্টিনে। রবিবার রাতেই গুঞ্জন ওঠে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে তিনি দ্রুত বৈঠকে বসবেন, সেই বৈঠকেই গলবে সম্পর্কের বরফ। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে জিএম কাদের হোটেলে গিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। 

রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মো. মামুনুর রশীদ সেই বৈঠককে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বললেও বৈঠকে জিএম কাদেরের সঙ্গে থাকা পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেছেন, ‘চেয়ারম্যান মহোদয় দল পরিচালনায় তার (রওশন) সহযোগিতা ও পরামর্শ চেয়েছেন। পার্টির চলমান সংকট নিরসনে তিনি বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন ম্যাডামকে। ম্যাডাম এখনই হ্যাঁ-না কিছু বলেননি। তবে আশা করা যাচ্ছে, তারা দুজনে চলমান সব সমস্যার সমাধান করবেন। রওশন এরশাদ আমাদের দলের অভিভাবক। তিনি যে কাউন্সিল আহ্বান করেছেন, সেই কাউন্সিলটি দেখবেন একসময় অনুষ্ঠিত হবে না।’

রওশন এরশাদ ফিরে আসার পর দলের ঐক্য প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলেও মন্তব্য করেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি বলেন, ‘রওশন ম্যাডাম ও আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের মধ্যে কখনও কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। একদল সুবিধাভোগী লোক সবসময় দলে বিভেদ তৈরি করতে চায়। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছেন আমাদের চেয়ারম্যান। তারা এখন ম্যাডামকে ভুলভাল বোঝান। এরা একসময় হালে পানি পাবে না। ম্যাডাম ও চেয়ারম্যান দুজন মিলেই জাতীয় পার্টি পরিচালনা করবেন।’

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদেরের মধ্যকার অভিমানের বরফ গলার শুরুটা হয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটির নির্বাচন। ওই নির্বাচনে জাপার লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে জিএম কাদের আগেই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পার্টির রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মনোনয়ন দেন। রওশন এরশাদ দেশে ফিরে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছেন।

তার আগে রওশনপন্থিরা দলের ভাইস চেয়ারম্যান, রংপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিককে লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আব্দুর রউফ মানিক নিজেকে লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালালে গত ২৮  সেপ্টেম্বর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর আব্দুর রউফ মানিক নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। 

এদিকে দেবর-ভাবির (রওশন-কাদের) দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করলে গুঞ্জন ওঠে রওশনপন্থি নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে সিটি নির্বাচনে হাজী তানবীর হোসেন আশরাফীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। রওশনপন্থি প্রার্থী হয়ে জিএম কাদের মনোনীত প্রার্থী মোস্তফার বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি। তানবীর আশরাফী প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে রওশনপন্থিরা পার্টির বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রউফ মানিককে সিটি নির্বাচনে লড়ার জন্য পুনরায় সমর্থন দেন। এ লক্ষ্যে গত ২২ নভেম্বর মানিকের পক্ষে তার ভাতিজা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। রওশন এরশাদ দেশে ফিরলে মসিউর রহমান রাঙ্গা মানিককে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করেন। তবে রওশন এরশাদ রাঙ্গার প্রস্তাব তৎক্ষণাৎ ফিরিয়ে দেন।

গতকাল সকালে জিএম কাদের যখন হোটেল ওয়েস্টিনে বৈঠক করছিলেন, তখনই শুনতে পান দারুণ এক খবর। দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ আব্দুল আওয়ালের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৬ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত করে আদেশ দেন।

গত ১৬ নভেম্বর জাপার সাবেক এমপি ও চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার করা মামলায় জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক ও দলীয় কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন নিম্ন আদালত। গত ৪ অক্টোবর এ মামলা করেন তিনি। জিয়াউল হক মৃধা রওশন এরশাদ আহূত কাউন্সিল কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। 

জিএম কাদের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর এখন পুরোনো প্রশ্ন জেগেছে নতুন করে। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে যে সংকট রয়েছে, তা নিরসনে কী ভাবছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। জাপার কো-চেয়ারম্যানদের একজন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সেই সংকটও অচিরে সমাধান হবে। ম্যাডাম দেশে ফেরার পর আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয় তার সঙ্গে দেখা করতে গেছেন, তারা নিশ্চয়ই এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। আর এটা তো এক ধরনের মীমাংসিত বিষয়। ম্যাডাম সংসদে দলের নেতা আর রাজনীতির মাঠে চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। জিএম কাদের ম্যাডামের পরামর্শ মোতাবেক দল পরিচালনা করবেন। তার নির্দেশনা বাস্তবায়িত হবে, এটাই তো সবার চাওয়া। দ্বন্দ্ব, ভাঙন সবকিছুকে ছাপিয়ে আমরা চাই আমাদের দলটা একতাবদ্ধ থাকুক। যারাই ভাঙনের চেষ্টা করবে, আমরা তাদের প্রতিহত করব।’ 

এদিকে রওশন এরশাদ দেশে ফিরে বলেছেন, দল থেকে বহিষ্কার হওয়া ডাকসাইটে নেতাদের আবার তিনি দলে ফেরাবেন। এ বিষয়ে তিনি নিজেই উদ্যোগী হবেন। এ নিয়ে কথা হয় জাপার সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারওয়ার মিলনের সঙ্গে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক রয়েছেন আমাদের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এমএ গোফরান। তিনি দলের সাবেক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দ্রুতই আমাদের অনেক পুরোনো নেতা আবার জাতীয় পার্টিতে সক্রিয় হতে চলেছেন।’

রওশন-কাদের দ্বন্দ্ব নিরসনের সব পথ যখন খুলছে, তখন কী ভাবছেন রওশন শিবিরের নেতারাজানতে চাওয়া হয় সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মো. মামুনুর রশীদ ও ইকবাল হোসেন রাজুর কাছে। তাদের মধ্যে শুধু ইকবাল হোসেন রাজু সাড়া দেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম কিন্তু এখনই জিএম কাদেরের সব প্রস্তাবে সায় দেননি। কাউন্সিল হবে না বলে যে গুঞ্জন উঠেছে তাও সঠিক না। কাউন্সিল নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। দেখা যাক, কী হয় সামনে!’

জাপার নীতিনির্ধারকদের একজন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রওশন এরশাদের নাম ভাঙিয়ে বহিষ্কৃত নেতারা জেলায় জেলায় যে কমিটিগুলো দিয়েছেন কাউন্সিলের নামে, সেসব কমিটির একটিও থাকবে না। দুই নেতা আমাদের এক টেবিলে বসেছেন, আর কি কোনো দ্বন্দ্ব থাকতে পারে? যারা দলে বিভক্তির আশায় দিন গুনছে, তারা হালে পানি পাবে না।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা