মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:০১ পিএম
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪০ পিএম
জামালপুরের মাদারগঞ্জে গরু চুরি করে কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। ভূরিভোজে অংশ নিতে নেতার বাড়িতে মানুষের ভিড়। প্রবা ফটো
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় কৃষকের গরু চুরি করে নারী সমাবেশের কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভূরিভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগে উপজেলা বিএনপির এক আদেশে তাকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভুক্তভোগী কৃষক এফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মাদারগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেছেন। মামলায় মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীকে তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে। তিনি আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জানা গেছে, শনিবার সকালে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজনে এ নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত। ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভূরিভোজের আয়োজন করেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানি রান্নার জন্য শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ উঠেছে।
গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল অভিযোগ করে জানান, শুক্রবার রাতে গোয়াল ঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘরের দরজ খোলা ও ভেতরে থাকা তার ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আজ শনিবার ভোরে পাশের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।
তিনি আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানি রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল। বিষয়টি জানাজানি হলে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিক কসাই নামে দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বিএনপি নেতার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনার পর কর্মী-সমর্থকরা গা-ঢাকা দিলে তাদের ভূরিভোজের জন্য রান্না করা বিরিয়ানি স্থানীয়রা লুটপাট করে। এই ঘটনায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে মুক্তা চৌধুরীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী জানান, তাদের বাড়িতে প্রতি বছরই গরু জবাই করে লোকজনকে খাওয়ানো হয়। মালিকের কাছ থেকে গরুটি কিনে নেওয়া হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, ‘মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিষয়টি আমরা শুনেছি। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে তাকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান জানান, ‘গরু চুরির অভিযোগে দুইজনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’