প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:২৩ পিএম
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩২ পিএম
ফাইল ফটো
গত বছরের ৫ আগস্টের হঠাৎ রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, শেখ হাসিনার শাসনামলের শেষ দিকে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হলে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিণামে হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি এবং অপহরণের মতো সহিংস অপরাধগুলোর সংখ্যা চার মাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
অপরাধের উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান
১ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৬১টি হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা ১ এপ্রিল থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮টি ছিল। ডাকাতির ঘটনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৪টিতে, যা আগের চার মাসে ছিল ৪১৬টি। অপহরণের ঘটনা বেড়ে ২৫৫টিতে দাঁড়িয়েছে, যা পূর্ববর্তী সময়ে ছিল ১৬৮টি।
তবে চুরি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা যথাক্রমে ৮৪৪ এবং ২ হাজার ৪২৪-এ নেমে এসেছে, যা আগের চার মাসে ছিল ৯০৯ এবং ৩ হাজার ৬৮।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশেষজ্ঞরা এ অপরাধের বৃদ্ধিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক অর্ডারের ভাঙনকে দায়ী করছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্বলতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অপরাধীরা যেন আরও সাহসী হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া বিচারিক প্রক্রিয়ার ব্যাঘাতও অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অপরাধবিদ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ফলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় অপরাধী দলগুলো নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পদক্ষেপ
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বাহিনীকে স্থিতিশীল করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে নগরাঞ্চলে অপরাধের হার বেশি হওয়ায় বাড়ানো হয়েছে প্যাট্রোলিং, নজরদারি এবং কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম। ডাকাতি, অপহরণ রোধ করতে অপরাধী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে, যার ফলে কয়েকজন প্রধান অপরাধীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পরিশ্রম করছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় এবং উন্নত গোয়েন্দা তৎপরতা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।’
জনসাধারণের উদ্বেগ
এ পদক্ষেপের পরও জনগণের মধ্যে উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে। কমিউনিটি নেতারা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণগুলো দূর করার জন্য জরুরি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। নাগরিকরা সরকারের কাছে জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি শক্তিশালী পুলিশিংয়ের প্রতি জোর দিয়েছে।
বিশ্বস্ততার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের প্রয়োজন
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমান অপরাধপ্রবণতা রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়ে উদ্ভূত দুর্বলতার ফলে সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এখনই অপরাধ দমন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘমেয়াদি মনোযোগ দাবি করে।
তারা আরও বলেছেন, আইন প্রয়োগ, বিচারিক কার্যক্রমের উন্নতি এবং সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি ব্যাপক সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে দেশের স্থিতিশীলতা ফিরে আসে এবং সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
সূত্র : ইউএনবি