প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৪ পিএম
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ফটো
রাষ্ট্র, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, সংস্কার নাকি নির্বাচন— এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে বিএনপি তথা দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দল স্রেফ অসৎ উদ্দেশে তর্ক বলে মনে করে। বরং বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একইভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টেকসই এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর পন্থা। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায় মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, যেটি রাষ্ট্র জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণের রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষমতার নিশ্চিত না গেলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা পুঁথিগত সংস্কার শেষ পর্যন্ত কোনো কিছু টেকসই হয় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই প্রয়োজন। এই কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো তাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় বড় সংস্কার হাতে নিয়েছে। তবে এসব সংস্কার কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা বাড়তে থাকলে জনগণ হয়তো সরকারের সংস্কার নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে। ইতোমধ্যে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, পলাতক স্বৈরাচারের আমলে সৃষ্ট বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার ভেতর আনতে সরকার কি কী পদক্ষেপ নিয়েছে? ফ্যাসিস্ট আমলে দায়ের করা লাখ লাখ মামলায় এখনো কেন মানুষকে আদালতের বারান্দার ছোটাছুটি করতে হচ্ছে?
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সংস্কার বা গৃহীত পরিকল্পনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ষড়যন্ত্রকারীরা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বিনষ্ট করার সুযোগ নেবে। এরই মধ্যে তারা একাধিকবার দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
বিভ্রান্ত না হয়ে জনগনকে নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্বচ্ছ, জনগন কোন রাজনৈতিক দলকে গ্রহন করবে কিংবা বর্জন করবে নির্বাচনের মাধ্যমে সেই রায় দেবে জনগনের আদালত। তবে যারা জনগনের আদালতের রায়ের মুখোমুখি হতে ভয় পায় কিংবা যাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানারকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। গণতন্ত্রকামী জনগনের প্রতি আহ্বান, আপনারা ধর্য্য হারাবেন না, নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকুন। নির্বাচন কমিশন তাদের অর্পিত দায়িত্ব যথারীতি পালন করবে সেই বিশ্বাস রাখুন।
দলের নেতা-কর্মৗদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বরং সর্তক থাকবেন। নিজেরা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না যাতে কেউ অপপ্রচারের সুযোগ পায়। নিজেদেরকে জনগনের আস্থায় রাখুন। জনগনের আস্থায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের সকলকে খেয়াল রাখতে হবে, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যাতে গণঅভ্যুত্থানের আকাংখা বিনষ্ট হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। এ ব্যাপারে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সর্তক ও সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখা দরকার লোক বা লাভের উধর্বে উঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে বিশেষ করে ছাত্র-তরুনদের ভূমিকা অপরিসীম।
গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে বিএনপি স্বাগত জানায় মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র, রাজনীতি, সরকার প্রচলিত বিধি ব্যবস্থা সংস্কার করে আরও উন্নত বিধি ব্যবস্থার পক্ষে ছাত্র-তরুনরা অবস্থান নেবে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে… দেশের তরুন জনশক্তি ভুমিকা রাখতে এটাই স্বাভাবিক এটাই তারুণ্যে ধর্ম। দেশে প্রয়োজনে আরও নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে এটাই গণতান্ত্রিক রীতি… এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে বিএনপি সকল গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সকল পরিস্থিতিতে সকল সময়ে বহু দল ও মতের চর্চার পক্ষে।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্র দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আলোচনা সভা হয়। মিলনায়তন ছাড়াও ইন্সটিটিউশনের বাইরেও প্যান্ডেল টানানো হয় এবং বড় পর্দার স্ক্রীন স্থাপন করা হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে ছাত্র দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, তোমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে প্রধান হাতিয়ার।রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। তবে শিক্ষার্থী হিসেবে তোমাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হতে হবে লেখাপড়া, লেখাপড়া এবং লেখাপড়া।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক ছাত্রদল নেতারা বক্তব্য রাখেন।
নতুন প্রজন্ম ভোটের জন্য আকুল হয়ে আছে: এদিকে এর আগে সকালে ছাত্র দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়া কখনো থেমে থাকে না। তিনি বলেন, আমরা এই বিশ্বাস রাখি, একটি সমন্বয়ের মাধ্যমে অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো হবে, পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলবে এবং যথা শিগগিরই জনগণের দেশ জনগণের কাছে তুলে দেওয়া হবে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। দুপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি সব কথা বলেন।
ছাত্র দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মঈন খান বলেন, দেশের একটা বিশাল অংশ নতুন প্রজন্ম, তারা ভোট দেওয়ারই সুযোগ পায়নি, তারা ভোটার হয়েছে। তারা ভোটের জন্য আকুল হয়ে আছে। তারা ভোট দিতে চায়। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, তাদের ভোটের সুযোগ নিশ্চিত করে দিতে হবে। তিনি বলেন, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দেশ নতুন প্রজন্মের দেশ। আমরা নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা এদেশের নেতৃত্ব ভবিষ্যতে গ্রহণ করব। এটা কিন্তু কারো বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না, এটা হচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম, একজন যাবে আরেকজন আসবে।
নতুন প্রজন্ম সত্যিকারভাবে সুশিক্ষিত হতে আবার ক্লাসে ফিরে যাবে, এমন প্রত্যাশা তুলে ধরে বিএনপির এ নেতা বলেন, যারা লেখাপড়া শেষ করেনি, তারা লেখা-পড়া সুসম্পন্ন করবে। দেশ পরিচালনার যে গুরু দায়িত্বে সেই গুরুদায়িত্ব পালনে প্রস্তুতি নেবে এবং তারা জনগণের ভোট নিয়ে দেশ পরিচালনা করবে সঠিক পথে, ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় আবদুল মঈন খান, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসিরের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদল আয়োজিত আলোচনা সভার আগে বেলা সাড়ে ১২টায় সেখানে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।