পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৫৯ পিএম
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সকলকে আহ্বান জানাতে চাই- আসুন আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি এই সুযোগটাকে কাজে লাগাই। আবার আমরা বাংলাদেশকে সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলি। একটা শান্তির দেশ, প্রেমের দেশ, উন্নতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলি। আমাদের মাথায় যেন কেউ কাঁঠাল ভাঙতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকি।’
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাম্য সম্প্রীতি ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওপারে পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ষড়যন্ত্র করছে চক্রান্ত করছে। হাসিনা মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এই দেশে বলে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। আমরা এই অঞ্চলের মানুষ শান্তিপ্রিয়। এখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই একসাথে বাস করি। পূজোয় এখানে মন্দির পাহাড়া দিয়েছে আমাদের লোকজন। তারা আমাদের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিপদে ফেলতে চাচ্ছে। আমাদের তাদের বিরুদ্ধ রুখে দাঁড়াতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা লুটপাট করে তাদের সরিয়ে দিতে হবে। কেউ যেন আমাদের দেশের উপর অন্যায়ভাবে হাত না দেয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমাদের উপর যে অত্যাচার করেছে তা আর কেউ করেনি। আলেম-ওলামাদের ফাঁসি দিয়েছে। আমাদের রাজনীতিবিদদের ধরে নিয়ে গেছে। জেলে দিয়েছে। এইভাবে কেউ যেন আর অন্যায় করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। এখন যেন কেউ দেশকে বিভক্ত করতে না পারে। আমরা সবাই এক। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই। এভাবেই আমাদেরকে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই ঘুষ চাচ্ছে। ঘুষ আমরা আর দিব না। আপনারা সবাই রুখে দাঁড়াবেন। যে ঘুষ চাইবে তাকে ধরে পুলিশে দিবেন। আবার পুলিশতো ঘুষ খায়। কিন্তু আমরা এই পুলিশ পরিবর্তন করতেছি। ওই পুলিশ এখন জনগণের পুলিশ হবে। এইরকম একটা বাংলাদেশ আমরা চাচ্ছি। কেউ কেউ বলেন একাত্তর ভুলে যাবে। একাত্তর আমরা ভুলতে পারি না। একাত্তরে আমাদের একটা স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে। আমি আমার নিজেকে চিনতে পেরেছি একাত্তর সালে। আমরা আমাদের জন্য একটা ভূখন্ড তৈরি করতে পেরেছি।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর আমরা একটি ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানব সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমরা বার বার জেলে গেছি। এখানেও অনেক মানুষ আছে যারা জেলে গেছেন। পালিয়ে ছিলেন। ঘরে থাকতে পারেননি। সারা দেশে একটা ভয়ের রাজত্ব গড়ে তোলা হয়েছিল। ফ্যাসিবাদ হলো যখন একটা সরকার নির্বাচনের নাম করে ক্ষমতায় গিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে, খুন, গুম করে যেভাবেই হোক সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। হাসিনা তাই করেছে। মানুষ চায়নি। কিন্তু সে জনগণকে বোকা বানিয়ে জোর করে তিনটি নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় থেকেছে। সে ভেবেছিল কোনদিন ক্ষমতা থেকে যাবে না। তাকে সেনাবাহিনী দুটি অপশন দিয়েছিল। একটি হলো উত্তাল জনগণের দ্বারা পিষ্ট হবেন না বাঁচার জন্য পালিয়ে যাবেন? যে নেত্রী বলেছিল আমি মুজিবের বেটি আমি পালাই না সে জীবন নিয়ে তার নেতাকর্মীদের ছেড়ে দিয়ে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছে। এই হলো ফ্যাসিবাদের পরিণতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের ধন্যবাদ দিতে চাই তারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে আবার সুযোগ তৈরি করেছেন যেন আমরা আবার দেশকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তুলতে পারি। ভোটের কথা বললে অনেক অসন্তুষ্ট হয়। তাদের বলতে চাই হ্যাঁ আমরা ভোট চাই এই কারণে যাতে আমরা সঠিক লোক নির্বাচন করতে পারি। যে সংসদে গিয়ে আমাদের জন্য কাজ করবে। আমরাও সংস্কার চাই। ২০২২ সালে আমাদের নেতা ৩১ দফা দিয়েছে।’
এ সময় দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র রুখতে দলের নেতাকর্মীসহ সকলকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, বিএনপির চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বেবি নাজনীন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওমাদ জমিরসহ দলের নেতাকর্মীরা ।
পরে বিএনপি মহাসচিব আগস্ট বিপ্লবে নিহত ৬টি পরিবারের স্বজনদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন।