প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:২৫ পিএম
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রবা ফটো
ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য আপনারা (ভারত) বাংলাদেশের আন্দোলনকারী মানুষের বিরুদ্ধে, শহীদ মুগ্ধের বিরুদ্ধে, শহীদ আবু সাঈদের বিরুদ্ধে আপনাদের যে প্রচারণা চালাচ্ছেন, আমাদের শহীদদের বিরুদ্ধেই সেটা যায়। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের মহান আত্মাত্যাগ সেই মহান আত্মত্যাগকে আপনারা ভুলন্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। তাতে কোনো লাভ হবে না।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আপনারা যদি মনে এই করে আপনাদের আগ্রাসন সুসম্পন্ন করবেন। আমরা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি, রক্ষা করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা প্রত্যেকটা দেশের স্বাধীনতাকে মর্যাদা দেই। কিন্তু ভারতের শাসকগোষ্ঠি যদি মনে করে আমি সম্প্রসারণ চালিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানসহ অন্যান্য দেশ আমরা কবজা করে নেব। কিন্তু আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
রিজভী বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা হিন্দু-মুসলমানসহ সবাই এক সঙ্গে লড়ব। আপনারা আমাদের পতাকা আগরতলায় সরকারি হাইকমিশনের গেইট ভেঙে সেটাকে টেনে নামিয়ে ছিঁড়েছেন। এটা প্রচণ্ড আঘাত। আমাদেরকে বড় আঘাত দিয়েছে ভারতের সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠি।’
ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভারতের মিডিয়া আজকে খেয়ে না খেয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে, মিথ্যা সংবাদ দিচ্ছে যার কোনো সত্যতাই নেই। ভারতে যারা সত্যিকারের প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক তারা এই সমস্ত মিডিয়াকে বলে গদি মিডিয়া। মানে যারা গদিতে আছে তাদের তল্পিবাহক মিডিয়া, একেকটা বয়ান, একেকটা ন্যারেটিভ তৈরি করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কারণ শেখ হাসিনার পতনটা একেবারেই মনে নিতে পারছেন না।’
রিজভী বলেন, ‘২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে, শ্বেতপত্রের প্রকাশিত তথ্য। তাহলে ২৮ লাখ কোটি টাকার কত টাকা পেয়েছে আপনারা বলুন। বিজেপির কোন কোন নেতা পেয়েছেন শেখ হাসিনার পাচার করা ২৮ লাখ কোটি টাকার ভাগ এটাও কিন্তু বাংলাদেশে মানুষ জেনে গেছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে হয়ত একদিন সেটা বলে দেবে।’
‘বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা ফিরিয়ে দাও’
রিজভী বলেন, ‘এই বাংলাদেশের মানুষ তাদের যে প্রদীপ্ততা, তাদের যে দেশ রক্ষার অন্তর্নিহিত শক্তি, তাদের যে প্রাণের উন্মাদনা, এই প্রাণের উন্মাদনায় ভারত কখনো টের পাইনি। আপনাদের যদি কোনো অশুভ ইচ্ছা থাকে, আমরাও তাহলে বলব, আমাদের যে নবাবের এলাকা, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা আমরা সেইটা দাবি করব। যদি আপনারা এরকম ভাবে একের পর এক বাংলাদেশে বিরুদ্ধে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেন।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আড়রতলায় বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনের কার্যালয়ে হামলা ও জাতীয় পতাকা অবমননার প্রতিবাদে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও’ শীর্ষক এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রা হয়। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টন সড়ক পর্যন্ত পদযাত্রা করে। এই পদযাত্রায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবও অংশ নেন।
‘সারা দেশের মানুষ জাগরিত’
রিজভী বলেন, ‘আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ জাগরিত… তাদের মনের যে জাগরণ দেশ মাতিৃকাকে রক্ষার জন্য, এখানে হিন্দু-মুসলমান এই মৃত্তিকায় এই জনপদে জন্ম… এখানে যেমন আমার জন্ম, মীর সরাফত আলী সপু, আসাদুল করীম শাহিনের জন্ম, এখানে অপর্নার জন্ম, এখানে অপুর জন্ম এখানে আরও যারা নেতৃবৃন্দ আছেন সবার জন্ম… এই মাটির সন্তান তারা। ওরা এদেশকে অন্যের গোলামীর কাছে বিক্রি করবে কেনো?’
‘এখানে যদি সিরাজ উদ্দৌলা-মোহনলাল একসঙ্গে লড়াই করতে পারে দেশের মুক্তির জন্য, দেশ রক্ষার জন্য ঠিক একইভাবে আমরা হিন্দু-মুসলমান আমরা লড়াই করব দিল্লীর দাসত্বকে খান খান করে দেব।’
পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভানেত্রী অর্পনা রায় দাসের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বসুর সঞ্চলনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির মীর সরাফত আলী সপু, অমলেন্দু দাস অপু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আমীরুল ইসলাম কাগজী, সাঈদ খান, পূজা উদযাপন ফ্রন্টের দেবাশীষ রায় মধু সুরঞ্জন ঘোষ, গৌতম বৈদ্য, জয়দেব প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।