ভারতবিরোধী নই, সম্মান সমতা নিয়ে সুসম্পর্ক চাই

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ভারতবিরোধিতা অভিযোগকে অস্বীকার করে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন দলটির প্রধান ডা. শফিকুর রহমান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এই ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে, যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় শুক্রবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নি রায় জামায়াত আমিরকে প্রশ্ন করেন, জামায়াতে ইসলামীর ভারতবিরোধিতা সর্বজনপরিচিত, কী বলবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে শফিকুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি। এই ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে, যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমান মর্যাদা ও সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারতসহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতিÑ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। চাই ভারতও একই রকম সাড়া দিক, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহাবস্থানের ভিত্তিতে।

জামায়াত আমিরকে পরবর্তী প্রশ্ন করা হয়Ñতার দলকে দেখা হয় কট্টর ইসলামী সংস্থা হিসেবে। এমন প্রশ্নের জবাবে নিজেদের সংগঠনের মূল্যায়নে শফিকুর রহমান বলেন, এটা একেবারেই অসত্য। জামায়াত একটি আধুনিক, উদার ও গণতান্ত্রিক দল, যার ভিত্তি ইসলামিক আদর্শ। আমরা একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল। বিশ্বের অন্য কোনো রাজনৈতিক সংস্থায় আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

বিএনপির একটি অংশ জামায়াতের কট্টরপন্থি মনোভাব নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কট্টরপন্থি মনোভাব বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, তা অস্পষ্ট। আপনাদের কাগজের মাধ্যমে জোরালোভাবে আবারও বলতে চাই, জামায়াত একটি আধুনিক, উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক দলÑ যার আদর্শ ইসলামের নীতি। আমরা সর্বদাই যুক্তিগ্রাহ্য, বাস্তবসম্মত এবং মধ্যপন্থা নিয়ে রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণ করি। বিএনপি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী, তারা আমাদের আধুনিক মনোভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অসামান্য সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া রয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিককে সমান অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্মান করা হয়। জামায়াত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। আমরা মনে করি ধর্মের ভিত্তিতে দেশবাসীর বিভাজন অপরাধ। হিন্দু বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার ইতিহাস জামায়াতের নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে।

জামায়াতে ইসলামী যদি ক্ষমতায় যায়, তখন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন দিকে যাবেÑঅগ্নি রায়ের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আমার মনে হয় না পুরোনো আওয়ামী লীগ জমানার সঙ্গে ভারতের নিছকই ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিল। আমরা সবাই জানি, ওই সম্পর্কে কার কী স্বার্থ ছিল। তবে নিজেদের কথা বলতে পারি, আমরা চাই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান ও সমতার মাধ্যমে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কার্যকর এবং বাস্তবোচিত সম্পর্ক উভয় রাষ্ট্রের পক্ষেই সুবিধাজনক। সরকারে এলে সেটাই করতে চাইব।

শফিকুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়Ñ একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও জামায়াত মিলেমিশে আওয়ামী লীগের পর বিএনপিকেও সরিয়ে দিতে চাইছে। দুই বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নতুন শক্তির উত্থান হবে। এটা কতটা সত্য? জবাবে জামায়াত আমির বলেন, সবিনয়ে বলতে চাইÑ এই তত্ত্বের কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতি জনতার সম্মিলিত ঘৃণা তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে। তারা নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে। কোনো সংগঠন বা দলকে সরানোর জন্য আমাদের কোনো ভূমিকা পালনের প্রয়োজন নেই। মানুষ সব জানে। তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে আমরা সম্মান করি। এইটুকু বলতে পারি, কোনো রাজনৈতিক দলকে খারিজ করা বা সরিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।