শহীদ নূর হোসেন দিবস
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:২৭ এএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:২৭ এএম
গ্রাফিক্স : প্রবা
শহীদ নূর হোসেন দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ সবাইকে সমবেত হওয়ার ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্ট থেকে গতকাল শনিবার রাজধানীর জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে রোববার বেলা ৩টায় নেতাকর্মীদের সমবেত হওয়ার এই আহ্বান জানানো হয়। এদিকে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি। কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ দুপুর ১২টায় একই স্থানে গণ জমায়েত কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। দুই কর্মসূচি ঘিরে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজপথে আওয়ামী লীগের এটিই প্রথম কর্মসূচি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গতকাল শনিবার একাধিক পোস্ট দিয়ে রোববার (আজ) বেলা ৩টায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নেতাকর্মীদের জড়ো হয়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত দলটি। ফেসবুকে আওয়ামী লীগের এ-সংক্রান্ত একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের প্রতিবাদ দেশের মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে; আমাদের প্রতিবাদ মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে; আমাদের প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে।’ ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেশের জনগণকে অংশগ্রহণ করারও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এক অডিওতে নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে কর্মসূচির ব্যাপারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়। অডিওটি থেকে শোনা যায়, শেখ হাসিনা তার নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছেন নূর হোসেন দিবসে নূর হোসেনের ছবি ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে কর্মসূচি পালন করার। অবশ্য ওই অডিও বার্তাটি সত্যিই শেখ হাসিনার কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
একই স্থানে কর্মসূচি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
এদিকে আজ রোববার দুপুর ১২টায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে শহীদ নূর হোসেন দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর রাত আটটার দিকে সংগঠনটির ফেসবুক পেজে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে লেখা হয়, ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুক পেজে পোস্টার কার্ড আকারে এ কর্মসূচি পোস্ট করেন।
নেতাকর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগের নির্দেশনা
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আরেকটি ফেসবুক পোস্টে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘ সেনাবাহিনী ও পুলিশ কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করবে না, আন্তর্জাতিকভাবে তারা এমনিতেই অনেক চাপে আছে। সবাই নির্ভয়ে আসুন।’
কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে নেতাকর্মীদের প্রতি বেশ কিছু দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ফেসবুকের পোস্টে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জানানো হয়েছে, ‘পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর বাধা কীভাবে ফাঁকি দেবেন? দলবদ্ধভাবে নয়, আসবেন একা একা। বিভিন্ন রুট চেঞ্জ করে গুলিস্তান পৌঁছবেন। সঙ্গে মোবাইল থাকলেও সেই মোবাইলে কোনো ছবি, কোনো ওয়ালপেপার রাখবেন না, যাতে আপনাকে আওয়ামী লীগ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। যদি কোনো বাধা আসে, অবশ্যই কোনো রকম ভাঙচুর বা নাশকতার ফাঁদে পা দেবেন না। আওয়ামী লীগ সরকারি সম্পদ, দেশের মানুষের সম্পদ ধ্বংসের রাজনীতি করে না। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য প্রচারণা চালাবেন।’
যা বলছেন আওয়ামী লীগের নেতারা
এ কর্মসূচির বিষয়ে একটি গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দখলদার, অসাংবিধানিক, অবৈধ ইউনূস সরকারের হাত থেকে গণতান্ত্রিক, স্বাভাবিক মূল্যবোধ ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে ১০ নভেম্বরের কর্মসূচিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। দুঃশাসন, নিপীড়নে দিন পার করছে মানুষ। গণতন্ত্র ফিরে এলে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে দেশ ও দেশের মানুষ পরিত্রাণ পাবে।’
শহীদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগ কী করবে? Ñ এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নূর হোসেন দিবস আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন ধরে পালন করে আসছে। এই দিনটি উপলক্ষে আমাদের নতুন করে কর্মসূচি দেওয়ার কিছু নেই। দেশের সকল রাজনৈতিক দল পালন করে। আমরাও পালন করে আসছি। ১০ নভেম্বর আমরা নূর হোসেন চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন করব।’
কঠোর হুঁশিয়ারি সরকার পক্ষের
আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ঘোষণার পর এর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সরকারের এই দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে এই হুঁশিয়ারি দেন।
এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় এক পোস্টে বলেন, ‘গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন যে রূপে আছে, তাতে এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই ফ্যাসিবাদী দলটির বাংলাদেশে বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সভা, সমাবেশ ও মিছিলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড অন্তর্বর্তী সরকার বরদাশত করবে না।’
ফেসবুক পোস্টে তার বক্তব্যের বিষয়ে প্রেস সচিব বাসসকে বলেন, ‘এত বড় গণহত্যা চালানোর পরও দলটির মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা নেই।’ এই গণহত্যাকারী দলটি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পূর্ণ শক্তি দিয়ে তাদের মোকাবিলা করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে চলে যান। সেদিনই দলটির ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবং তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা কার্যালয়ে হামলা করে লুটের পর আগুন দেওয়া হয়। ওইদিন থেকে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে আছেন। গোপালগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় অবশ্য তাদের বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে।