× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আজ ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৭ এএম

আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ১১:২৯ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ঘটনাবহুল আলোচিত দিন আজ ৭ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কাঠামোয় যে রক্তপাতময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে, নভেম্বরের এ দিনে সংঘটিত ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে সে অধ্যায়টির আপাত অবসান ঘটে। অভ্যুত্থান, পাল্টা-অভ্যুত্থানসহ নানা নাটকীয় ঘটনার ধারাবাহিকতায় এ দিন তৎকালীন সামরিক জান্তা, পরবর্তী সময়ের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়। 

দিনটিকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারা বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করে থাকে এবং সে কারণে একেক পক্ষ একেক নামে অভিহিত করে থাকে। বিএনপি এ দিনকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। বিএনপি মনে করে, দিনটি জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। এ দিন জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে একদলীয় শাসন বাকশাল বিলুপ্ত হয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে ঘিরে বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কারণেই দেশে বহুদলীয় রাজনৈতিক দলের বিকাশ সম্ভব হয়েছে এবং রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পেয়েছে।

অবিভক্ত ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত জাসদ দিবসটিকে পালন করে থাকে ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে। তাদের বিবেচনায়, সিপাহি-জনতা এ দিন জনতার মুক্তির লক্ষ্যে বিপ্লব সংঘটিত করলেও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জনগণের ওপর সামরিক শাসনের রাজনীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা বিভিন্ন দল ও সংগঠন ৭ নভেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে।

যেভাবে ৭ নভেম্বর এলো

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত ৭ নভেম্বর এ দেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। দিনটির মূল চরিত্রে রয়েছেন তিনজনÑ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান, সাবেক সাময়িক সেনাপ্রধান জেনারেল খালেদ মোশাররফ এবং জাসদ নেতা গণবাহিনীর প্রধান কর্নেল আবু তাহের। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। তিনি জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল এক পরিস্থিতিতে পঁচাত্তরেরই ৩ নভেম্বর আরেক অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতাচ্যুত করেন জেনারেল খালেদ মোশাররফ। তিনি জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেন এবং নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন। এরই মধ্যে জেলখানায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকেÑ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনুসর আলী ও কামারুজ্জামান। এরপর কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় আরেকটি অভ্যুত্থান। যার ফলে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান, অন্যদিকে নিহত হন খালেদ মোশাররফসহ তার কতিপয় সঙ্গী। এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন জিয়াউর রহমান। 

বিভিন্ন শাসনামলে ৭ নভেম্বর

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শাসনামলে দিনটি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হতো। দিনটিতে সাধারণ ছুটিও থাকত। বিএনপির শাসনামলেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও দিনটি একই মর্যাদায় পালিত হতো। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দিনটি জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাদ পড়ে। তবে ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকার গঠনের পর আবারও দিনটি জাতীয় দিবসের তালিকায় ওঠে। সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি অবস্থার সময়ও দিবসটি পালিত হতো। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দিনটি আগের মর্যাদা হারায়।

৭ নভেম্বর পালন করবে বিভিন্ন দল

বিএনপিসূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৫ বছর জাঁকজমকভাবে দিবসটি পালন করতে পারেনি এ দল। কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকায়, নেতাকর্মীদের অব্যাহতভাবে গ্রেপ্তারসহ উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত বছরও কোনো কর্মসূচি পালন করেনি তারা। তবে এখন নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে ব্যাপকভাবে দিবসটি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। 

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাসদ আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনার আয়োজন করেছে।

গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘জাতিকে রক্ষা করার জন্য দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দলমত-নির্বিশেষে এবং বর্তমান সরকার ও সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এবং স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গণি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া। 

বিএনপির কর্মসূচি 

দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে এরই মধ্যে শোভাযাত্রাসহ ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দিবসটি পালনে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেনকে আহ্বায়ক, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সদস্য করে তিন সদস্যের র‌্যালি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। 

দিনটি উপলক্ষে আজ ভোরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব জেলা কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে দলটি। বেলা ১১টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে। আগামীকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হবে। বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ ছাড়া বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো আলাদাভাবে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। সকল বিভাগীয় শহরগুলোতে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা হবে।

তারেক রহমানের বাণী

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। গতকাল বুধবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই বাণী তুলে ধরা হয়। বাণীতে তিনি ৭ নভেম্বরকে ‘জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন’ আখ্যা দেন। 

তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে সিপাহি-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও হারানো গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের অভূতপূর্ব অঙ্গীকার নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। এ দিন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘‘বিদেশি শক্তির দোসর আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা আবারও প্রায় ১৬ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা জোর করে আঁকড়ে ছিল। নির্যাতনের এই অব্যাহত ধারায় ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বহু বছর মুক্তি দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এখন চূড়ান্ত গণতন্ত্রের চর্চার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাই ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মূহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।’’ 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ উপলক্ষে পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা