বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২০:০৩ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২০:০৫ পিএম
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সংস্কার আর নির্বাচন প্রক্রিয়া এক সঙ্গে চলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ‘সারাদেশ জুড়ে সবাই বলছে দেশ বদলাবার জন্য সংস্কার করতে হবে। আরেক দল বলছে আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। আর আমি বলি সংস্কার আর নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই এক সঙ্গে চলতে পারে। কারণ সংস্কার থেমে থাকবার জিনিস নয়।’
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে বগুড়ায় নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নেতা মতিয়ার রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার ও নাগরিক ঐক্যের শিবগঞ্জ উপজেলা কমিটির শহিদুল ইসলাম।
মাহমুদুর রহমান মান্না রাষ্ট্র সংস্কারকে চলমান প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘একটা বাড়ি প্রতিদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হয়, দরজা-জানালা মেরামত করতে হয়। হোয়াইট ওয়াশ করতে হয়। ঠিক তেমনি একটি দেশ ও রাষ্ট্রকে প্রতিদিন তার প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হয়। প্রতিদিন তার পুলিশি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হয়, জনপ্রশাসন, সেক্রেটারিয়েটসহ অফিস-আদালত যত আছে সেগুলো যাতে প্রতিদিন আরও বেশি জনবান্ধব হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ কষ্ট পায় সেই রকম প্রশাসন আমরা চাই না।’
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এ পর্যন্ত যত সরকার দেখেছি তারা মাল (টাকা) কামাই করার ধান্দায় থাকে, যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। ভোট ডাকাতি করে, লুটপাট করে। কিন্তু এই সরকার তো তা নয়। ড. ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে আমার শিক্ষক ছিলেন। তার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপকালে আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘আরও বেশি সময় ছলে-বলে কৌশলে ক্ষমতায় থাকার ধান্দা মাথার মধ্যে আছে কিনা?’ তিনি উত্তরে এ সব আশঙ্কার কথা নাকচ করে দিয়েছেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ভাল মানুষদের নিয়ে সরকার বানান। বাংলাদেশকে বদলে দেওয়া সম্ভব, যারা ক্ষমতায় আছে তারা যদি দেশ বদলে দিতে চায়। তাই সেই রকম দল পছন্দ করতে শেখেন যারা জনগণের কল্যাণ করবে।’
মাহমুদুর রহমান মান্না দলগুলোর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকার কথা জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনকালে আমরা জনগণকে বলেছিলাম, আমরা শুধু সরকার বদলের লড়াই করছি না দেশ বদলের লড়াও করছি একই সঙ্গে। আমরা মানুষের ভাগ্য বদলের লড়াইও করছি একই সঙ্গে। আমরা বলব আরও যত দল আছে সেই দলগুলো যাতে নিজেরা ভাল হয়ে যায়। দলের নেতারা যাতে নিজেরা নিজেদের পরিবর্তন করে। দলের নেতারা যাতে মনে না করেন দলের এমপি হওয়ার জন্য তার জান দিয়ে দিতে হবে। দলের নেতারা যাতে মনে না করে যখনই আওয়ামী লীগ চলে যাবে আমি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করব, বাসস্ট্যান্ড দখল করব, চাঁদাবাজি করব-মাল (টাকা) বানাব। ওইসব দল দিয়ে দেশের কোনো কল্যাণ হবে না। এখন থেকে সেই সমস্ত দল হয় নিজেদের বদলাবে, নাহলে আপনারা দল বদলে দেবেন।’
গণসমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না দেশের ৬ কোটি দরিদ্র মানুষের খাদ্য এবং চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে প্রতি মাসে এক হাজার কোটি টাকা দিতে হলে প্রতি বছর ৭২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। আর চিকিৎসা ভাতার জন্য বছরে প্রয়োজন ৫০ হাজার কোটি টাকা। উন্নত বিশ্বে এমন ব্যবস্থা আছে, বাংলাদেশেও এটা করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ধনীদের টাকা দিলে তারা বিদেশে পাচার করে কিন্তু দরিদ্রদের দিলে তারা সেই টাকা দেশেই রাখবে।’