× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৪৩তম বিসিএসের নিয়োগে প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি বিএনপির

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:০০ পিএম

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। প্রবা ফটো

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। প্রবা ফটো

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দলীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক সুপারিশ করা ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পদত্যাগকারী দলকানা পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় বিসিএস ৪৩তম ব্যাচের সুপারিশ করা ২০৬৪ জন প্রার্থীকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

ব্যাপকভিত্তিক যাচাই-বাছাই না করে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীর সরকারের এই সিদ্ধান্ত ও নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের মানুষকে চরমভাবে হতভম্ব ও হতাশ করেছে এবং জনমনে প্রচন্ড ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে যেখানে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে, ঠিক সেই মুহুর্তে ৪৩তম বিসিএসের ঢালাও নিয়োগদানের মাধ্যমে সেই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের সরকারি প্রশাসনের উচ্চতর পদসমূহে পুনর্বাসন করার এই অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন্থী এবং কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নহে।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার অব্যবহিত পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় বিনা পরীক্ষায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মতার্দশে বিশ্বাসী নিজ দলীয় ক্যাডার বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যকে সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ প্রদান করে। এর মাধ্যমেই একটি সদ্য-স্বাধীন দেশের প্রশাসনে প্রথমবারের মত নগ্ন দলীয়করণের সূচনা হয়। এরাই ১৯৯৬ সালে প্রশাসনের ইন-সার্ভিস কর্মকর্তাদের চাকুরীর শৃঙ্খলা এবং সমস্ত নিয়মনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রথমবারের মত তথকথিত ‘জনতার মঞ্চের’ আড়ালে আওয়ামী লীগের বিধ্বংসী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে দেশকে ভয়াবহ নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসেই প্রশাসনিক সমস্ত নিয়মনীতি শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধকে ভেঙে দিয়ে দেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি নিজেদের আজ্ঞাবহ দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল।

সালাহ উদ্দিন বলেন, পুনরায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সনের ৫ আগস্ট পতনের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গেজেটেড-ননগেজেটেড সব পদে প্রশাসনের স্বর্বস্তরে দলীয় কর্মী বাহিনী নিয়োগের মাধ্যমে একচ্ছত্র আওয়ামী সামাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলো। নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, প্রমোশনসহ বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করেছিলো দেশের হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী তরুণ-তরুণীদের। বেড়ে গিয়েছিল সীমাহীন বেকারত্ব। সেই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ নমুনা হচ্ছে এই ৪৩তম বিসিএস। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাত্র ২ মাসের মধ্যে কিভাবে কোনো বাছবিচার ছাড়াই পতিত আওয়ামী দলীয় অনুগতদের নিয়োগদানের মাধ্যমে প্রশাসনে আওয়ামী প্রেতাত্মার আধিপত্য আরও বিস্তৃত করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হলো সেটাই এখন বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, এই নিয়োগ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের সাথে বেঈমানী ও বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।

বিএনপির এই নেতা বলেন, একসময় যে পাবলিক সার্ভিস কমিশন ছিলো প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের সেরা প্রতিষ্ঠান এবং যা ছিল জাতীয় গৌরবের বিষয়- ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ শাসনামলে সেই পিএসসিকে এক আজ্ঞাবহ দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিল। একদিন যে প্রতিষ্ঠান দেশের জ্ঞানী-গুণী এবং আদর্শস্থানীয় বিদগ্ধজনেরা নেতৃত্ব দিতেন, ফ্যাসিবাদী-শাসনামলে সেই প্রতিষ্ঠান দলীয় ক্যাডারদের আস্তানায় পরিণত হয়েছিলো। দলীয়করণ এতোই নগ্নরূপ ধারণ করেছিল যে পুরস্কারস্বরূপ পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যানকে ডামি নির্বাচনের এমপি নির্বাচিত করা হয়েছিল। তিনি এখন পলাতক রয়েছেন। জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে! এই সব দলবাজ কর্মকর্তাদের দ্বারা ঢালাওভাবে সুপারিশ করা শাসকদলীয় প্রার্থীদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে নিয়োগ দান করা হলে তা হবে চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, দেশের হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের বঞ্চিত করে দলীয় ভিত্তিতে বিবেচিত ও সুপারিশ করা ৪৩তম বিসিএস বাতিল করার জন্য আমরা দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। উল্লেখযোগ্য যে, অতীতে একই প্রেক্ষাপটে ২৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করা এবং পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার নজির রয়েছে।

ইতোমধ্যে চাকরিপ্রার্থীসহ সর্বমহল থেকে পিএসসি সংস্কারের দাবি ওঠেছে উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, এই দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানা যায়। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর ফলে বঞ্চিত মেধাবীদের অন্তত একটি অংশ হলেও বিভিন্ন চাকরিতে নতুন করে আবেদনের সুযোগ পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, পিএসসি সংস্কার দাবির প্রেক্ষিতে পিএসসির নতুন একজন চেয়ারম্যান ও কয়েকজন সদস্যকে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি পিএসসির সংস্কার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নতুন করে সব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত যেন চাকরি প্রার্থীরা পরিবর্তিত পিএসসির সুফল পায় এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জাতির আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা জানতে পেরেছি হাসিনা সরকারের সময় ইতোমধ্যে আবেদন করা ৪৪ তম বিসিএসের যে ৯০০০ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল— তার মধ্যে ৩০০০ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত উত্তরপত্রের মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। অপরদিকে ৪৬ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে তিন মাস পূর্বে।

তিনি বলেন, আমরা দাবি করছি, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রবেশে ফ্যাসিবাদি আওয়ামী গোষ্ঠীর এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে এই তিনটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াসমূহ পুরোপুরি বাতিল করা হোক। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেকোনো মূল্যে রুখে দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এ বিষয়ে আপোস করার বিন্দুমাত্র কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার তার ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে, পুলিশ প্রশাসনে তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিদায় নেওয়ার পূর্বে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে মোট ৮০৩ জনকে নিয়োগ প্রদান করে। আমরা জানতে পেড়েছি এর মধ্যে ২০০ জনের বাড়িই গোপালগঞ্জ এবং ৪০৩ জনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকারীদের হত্যাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য। শুধু তাই নয় এই নিয়োগে সাধারণ ধর্মীয় সংখ্যা-সাম্যতাও চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। শোনা যায়, সারদায় প্রশিক্ষণরত এই দলীয় সাব-ইন্সপেক্টরদের পাসিং আউট হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। যদি এ নিয়োগ বন্ধ করা না হয় তবে এদের মধ্য থেকেই তৈরি হবে ওসি প্রদীপ, ফরমান, মাজহার, মহসিনের মতো ফ্যাসিবাদের আরও বহু দোসর।

আরও জানা যায়, সুদূরপ্রসারী নীল নকসার আওতায় আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ যে ৬৭ জন এএসপি নিয়োগ প্রদান করেছিলো- তারাও সবাই ছাত্রলীগের ক্যাডার। তাদের পাসিং আউট হবে সম্ভবত ২০ অক্টোবর ২০২৪। এদেরকে এখনই থামিয়ে না দিলে এরাই হবে আগামী দিনের বেনজীর, আসাদ, হাবিব, হারুণ, বিপ্লব, মনিরুল, প্রলয় কুমার বা কৃষ্ণপদ। এদের নিয়োগ দিলে এরাই পতিত ফ্যাসিবাদকে পুনরুত্থানের পথ দেখাবে।

আমাদের দাবি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে এবং পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থানরোধকল্পে অবিলম্বে এ সকল সাব-ইন্সপেক্টর ও এএসপিদের নিয়োগ বাতিল করা হোক।

সালাহউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারি, আধাসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিসহ প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নতুন চাকরি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো, আমরা মনে করি এসব পদে যারা ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন তাদের পাশাপাশি আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে নতুন করে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হোক। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করার কারণে এ সুযোগ চাকরি প্রার্থীদের প্রতিযোগিতাকে আরও উন্মুক্ত করবে এবং যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে সরকার যোগ্য ও মেধাবীদের সেবা পাবে, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

তিনি বলেন, এই প্রসঙ্গে জাতির সামনে একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই। আমরা ৫ আগস্ট তারিখে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠত অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আর সে জন্যই আওয়ামী দলীয় পিএসসি কতৃর্ক প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগকৃত, সুপারিশকৃত কিংবা সুপারিশের জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরছি যাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল প্রকার প্রশ্ন ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুষ্ঠু কার্যক্রম এবং সফলতা আমাদের কাম্য।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা