প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৪৪ পিএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৪৩ পিএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রশাসনের মধ্যে ‘স্বৈরাচারের ভূত’ বসে আছে। এদেরকে তাড়াতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো চেষ্টাই সফল হবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই যে ভূতগুলোকে নিয়ে যারা এতদিন জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে সেই ভূতেরা কিন্তু এখনও প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে। আর তা নাহলে কোনো কিছুই করতে আপনারা সক্ষম হবেন না।’
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের এক শিক্ষক সমাবেশে দেশের প্রশাসনের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এই শিক্ষক এই সমাবেশ হয়। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে সারা দেশে থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক এই সমাবেশে যোগ দেয়।
যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের নেতৃত্বে যে সরকারকে আমরা সবাই মিলে দায়িত্ব দিয়েছি, দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদেরকে অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেব। তবে সময়টা যৌক্তিক হতে হবে। কিন্তু বার বার প্রশ্ন আসে, কতদিন সময় দেবেন? আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেব যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাসী না। আবার মাইনাস টু দেখতে চাই না। মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদকে দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশে একটা সুস্থ উদারপন্থি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই। তার জন্যে আমরা তাদের হাতেই (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করেছি, এরা যোগ্য মানুষ, তারা কাজ করছেন। তাদেরকে অতিদ্রুততার সঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
ফখরুল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা কখনোই ব্যর্থ হয়নি। ৫২ সালে জয়ী হয়েছি, ৬৯ এ জয়ী হয়েছি, ’৭১ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৯০ জয়ী হয়েছি। আমরা ইনশাল্লাহ এবারও জয়ী হব।’
শিক্ষক জাতীয়করণ প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয়করণ হলেই আপনাদের সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে। আমাকে একটা কাগজ তুলে দিয়েছেন আপনাদের নেতা সেলিম ভুঁইয়া সাহেব যে, ম্যাডামের একটা ঘোষণা ছিলে চাকরি জাতীয়করণ করার জন্য। ম্যাডামের ঘোষণা তো সকলের জন্য শিরোধার্য আমাদের জন্য। সেজন্য সরকারে আসতে হবে তো। সরকার কখন আসতে পারবেন? জনগণ যদি ভোট দিয়ে সরকারে পাঠায়।ভোট দেবে কখন ? যখন আপনি জনগণের কাছে প্রমাণিত হবেন যে, আপনি যোগ্য, যে আপনি আগামী ৫ বছর তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে সেবা করতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে কি সেটা করতে পারছি।’
তিনি বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায় বাইরে বিভিন্ন সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনা যাতে না হয় সেজন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আমরা চাই না, যারা দুর্নীতি করে, যারা চাঁদাবাজি করে, জমি দখল করে তারা বিএনপির লোক, তারা দুর্বৃত্ত। দল থেকে কিছু লোকের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা এটা নেব।’
শিক্ষকদেরকে দলকানা হলে চলবে না
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আরেকটা কথা বলি, এটা আমার নিজের কথা। শিক্ষকদেরকে দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদেরকে দলীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না।’
প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামতে হবে
পরিবর্তনে দেশে নতুন সম্ভাবনার আশার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী। অনেকেই বলে যে কি হলো? হাসিনা পালায়ে গেছে এই পর্যন্ত তো হলো। পার্লামেন্ট ভেঙে গেল। তবে ম্যাডাম মুক্তি পেলেন এটা হলো না বলে অনেকের আক্ষেপ রয়েছে। তবে এখন পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য কাজ করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে, দরকার হলে আবার বুকে রক্ত দিয়ে রাজপথে নামব।
শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের চৌধুরী মূগিস উদ্দিন মাহমুদ, জাকির হোসেনসহ নেতারা বক্তব্য দেন।