সাগর-রুনি হত্যা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:০২ পিএম
শামসুজ্জামান দুদু।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনির হত্যার বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, এই সরকারের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দায় মুক্তির সময়। যদি তারা এই দায় কাঁধ থেকে নামাতে চায়, তাহলে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার ৷
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) উদ্যোগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল, সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে এক সামবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সাগর-রুনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে সরকারের সময় হত্যা করা হয়েছিল, সেই সরকারের অনেক প্রিয়ভাজন ব্যক্তি এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অনেক মানুষ মনে করে। এ কারণে দীর্ঘ সময় এই হত্যাকান্ডের তদন্ত হয়েছে, কিন্তু চার্জশিট দেওয়া হয়নি। এখন এই সরকারের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দায় মুক্তির সময়। যদি তারা এই দায় কাঁধ থেকে নামাতে চায়, তাহলে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার ৷ তারা বলেছে, এটি তারা করবে। আমরাও বিশ্বাস করি এটি তারা করবে। কিন্তু সময় থাকতে তা শেষ করতে হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। সেই বিবেককে যদি মুক্ত না করা হয়, কালা কানুন যদি বাতিল করা না হয়, তাহলে দেশের কি পরিস্থিতি এটি তুলে ধরা সাংবাদিকদের জন্য খুব কঠিন। এই সরকারের সাংবাদিকরা যে দাবি জানিয়েছে, আমি আমার দলের পক্ষ থেকে সেটি সমর্থন করছি।
তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। এটাকে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে জরুরি কাজ বলে মনে করি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এখনো অনেক কালাকানুন আছে। এগুলো বাতিল করতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য আইন করতে হবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে সকল আইন করা হয়েছে, সে সকল আইন বন্ধ করতে হবে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ যেসকল হত্যাকান্ড হয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে আমার এখানে দাড়িয়েছি। সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইন করতে হবে। মুক্তভাবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ করে দিতে হবে। যে সকল সাংবাদিকরা হাসিনার কুকর্মে সমর্থন দিয়েছে আমরা তাদেরও বিচার চাই। আমাদের দাবিগুলো অবিলম্বে মেনে নিতে হবে। সাগরুনির হত্যার বিচার অবিলম্বে করতে হবে।
কবি হাসান হাফিজ বলেন, এখনো কালাকানুনগুলো দূর হয়নি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখনো নিরঙ্কুশ হয়নি, নিশ্চিত হয়নি। অনেক সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। সেগুলোর বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি। কালাকানুনগুলো যেনো রোধ করা হয়৷ সাগর-রুনির প্রকৃতি খুনিদের যেনো চিহ্নিত করা হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। একটি অন্তর্বর্তী সরকারের এখন দেশ চালাচ্ছে। তারা একটি সংস্কারের কাজ করছে৷ আমাদের দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রত্যেকের দায়িত্ব তাদের সহায়তা করা, সংস্কারের ক্ষেত্র তৈরি করা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সুগম করা। সেক্ষেত্রে আমাদের সবার দায়-দায়িত্ব আছে।
৩৬ জুলাই শেষ হয়ে যায়নি৷ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার চলতেই থাকবে। এই সংস্কার শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের হাতে সেই সংস্কার চলবে৷ গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি এখনো অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছ। সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি এবং আঞ্চলিক ও পরাশক্তিগুলোর মধ্যেও আমাদের এই সাফল্য নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আছে৷ এগুলোর ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে৷ আমরা যেনো এগুলো সম্মিলিতভাবে, ঐক্যবদ্ধভাবে, সচেতনতার সঙ্গে, পরিপক্কতার সঙ্গে, ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবিলা করি।
ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, বিএফইউজের সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।