প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:১১ পিএম
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৪০ পিএম
ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ‘সুস্পষ্ট গণহত্যার’
সঙ্গে জড়িতদের ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির
ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহ্স্পতিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির দেশে ‘হিংসা ও প্রতিশোধের
রাজনীতির’ অবসান চেয়ে বলেছিলেন, ‘দল হিসেবে আমাদের ওপর যা করা হয়েছে, আমরা আল্লাহর
ওয়াস্তে ক্ষমা করে দিলাম।’ ডা. শফিকুর রহমানের এমন বক্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা শুরু
হয়।
জামায়াতের আমির বিগত আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বিগত সরকার ক্ষমতার
লোভে জেদের বশবর্তী হয়ে সুস্পষ্ট গণহত্যা চালিয়েছে। স্বাধীন দেশে পরিচালিত এই গণহত্যা
কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই, খুনিদের গ্রেপ্তার
করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর ধরে আমাদের সঙ্গে
বৈরী আচরণ করা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে সরকার দিশেহারা
হয়ে আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে। অফিসগুলোতে তালা ঝোলানো হয়েছে, আমাদের স্বস্তির
সঙ্গে চলতে দেওয়া হয়নি, দফায় দফায় আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে বিভিন্নভাবে। দিশেহারা
সরকার শেষ মুহূর্তে আমাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের কলিজা ঠান্ডা করেছে। আমরা বলেছি
প্রতিশোধ নেব না।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এর মানে হচ্ছে আমরা নিজের হাতে আইন তুলে
নেব না। কিন্তু যিনি সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছেনÑ তার বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং তাকে শাস্তি
পেতে হবে। গণহত্যার বিচার করতে হবে এবং গত সাড়ে ১৫ বছরে যেসব অপরাধ করা হয়েছে তার বিচার
করতে হবে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমনের চেষ্টার কথা উল্লেখ করে শফিকুর
রহমান বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে গদি টিকিয়ে রাখতে হবে, এই জেদ ধরে শত শত মানুষকে হত্যা
করা হয়। এটা ছিল সুস্পষ্ট গণহত্যা। শুধু স্থলভাগে নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালানো হয়েছে।
ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের লাশ গুম করে দেওয়া
হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়া আশুলিয়ায় ভ্যানভর্তি
মানুষের মরদেহের কথা তুলে ধরেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘সেখানে ট্রাকের (ভ্যান) ওপর লাশের স্তূপ। তারপর
ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। আমরা কোন সভ্যতায় বসবাস করছি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব,
এই গণহত্যা যারা সংঘটিত করেছে, অবশ্যই তাদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে।’
জামায়াতের আমির ধনী-ব্যবসায়ী লুটেরাদের বিচার ও তাদের ক্ষমা না করার
ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘গরিব দেশের কিছু চতুর ধনী জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে, ব্যাংকগুলো
ফোকলা করে দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে গেছে। এই অর্থ ১৮ কোটি মানুষের। এদের আইনের আওতায়
এনে অর্থও ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না।’
বক্তব্যের শুরুতে জামায়াতের আমির একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের
পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে ‘মিথ্যা তথ্য ও সাজানো আদালতের রায়ে’ ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ
করেন। এই পাঁচজনসহ ১১ জন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ও প্রয়াত নেতাকে তিনি স্মরণ করেন।
দীর্ঘ বক্তব্যে শফিকুর রহমান বিগত সাড়ে ১৫ বছরে সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের
গুম, খুন, নির্যাতন, কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া, গ্রেপ্তার, মামলার ঘটনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘শুধু জামায়াত নয়, বিরোধী দল বিএনপি, হাজারো ওলামায়ে কেরামের ওপর একই ধরনের
তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। যদিও জামায়াতের ওপর তাণ্ডব ছিল ভিন্নমাত্রার, ভিন্ন গভীরতার।’
শত শত ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত এ পরিবর্তনকে কেউ যাতে
ব্যর্থ করে দিতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাড়ে ১৩ বছর পর দলের সারা
দেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যদের সরাসরি উপস্থিতিতে এ অধিবেশন হয়। সেক্রেটারি
জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামসহ
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার অধিবেশনে এক প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক
তদন্তের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে মানবতাবিরোধী
অপরাধের দায়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কারাগারে আটক জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের
মুক্তির দাবি জানানো হয়।