প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ২১:৩৫ পিএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ২২:৩৮ পিএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ফটো
বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের গুমের ঘটনা জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে’ এক সংহতি সভায় তিনি এ দাবি জানান। এতে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দীর্ঘকাল রাজনীতিতে আছি। গ্রেপ্তার হওয়া ও হত্যা করার বিষয়টি জানতাম। কিন্তু গুম করে দেওয়া আমাদের জানা ছিল না। এই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে তারা ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আজকে অন্তবর্তীকালীন সরকার ও তার প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গুমবিরোধী জাতিসংঘের সনদে সই করেছেন। আমরা জানতাম আগের সরকার এটাতে (জাতিসংঘ সনদে) সই করে নাই।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আরও ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে এই স্বৈরাচারের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসংঘ থেকে একটি দল এসেছে। গত দুই মাসে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেটা তারা তদন্ত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কথা বলেন। ১৫ বছর ধরে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, হত্যা হয়েছে, গুম হয়েছে—প্রত্যেকটির তদন্তের ব্যবস্থা করুন। এটা আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বললে জাতিসংঘ অবশ্যই করবে। এটা (জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত) অত্যন্ত জোরের সঙ্গে, দৃঢ়তার সঙ্গে আমি মিডিয়ার ভাইদের বলতে চাই, ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে অত্যাচার-নিপীড়ন-হত্যাকাণ্ড, গুমের ঘটনা হয়েছে, প্রত্যেকটির তদন্ত এই জাতিসংঘের কমিটি দিয়ে করতে হবে এবং তার ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে।’
গুমের ঘটনায় ব্যক্তিদের সন্ধানে সরকারের তদন্ত কমিশন গঠনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, একটা কমিশন গঠন করেছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু একই সঙ্গে আজকে আমি আহ্বান জানাতে চাই এই সরকারকে যে আপনারা প্রত্যেকটি গুম হওয়া পরিবারকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের ‘বেদনা-কষ্টের’ সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কষ্টের কথা বলছে। তাদের সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। যারা গুম ঘটনার সঙ্গে দায়ী আমরা তাদের কমবেশি চিনি। যারা দায়িত্বে ছিলেন, র্যাবের দায়িত্বে ছিলেন, পুলিশের বিশেষ বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন তাদের খুঁজে বের করতে হবে, তাদের শাস্তি দিতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন করেন, ওই সমস্ত ভয়ংকর ব্যক্তি যারা আমাদের হত্যা করেছে, খুন করেছে, গুম করেছে—তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার দেখতে পারব, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দেখতে পারব। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ যেন একটা জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে তার জন্য আমরা কাজ করতে সক্ষম হবো।’
৬১ দিন গুম থাকার পর ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার হওয়ার পর ৯ বছর নির্বাসিত থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি আজকে খোলাসা করে বলতে চাই, আয়নাঘরের প্রধান খলনায়ক ছিল বেনজীর (বেনজীর আহমেদ) ও জিয়াউল হাসান। একজন চাকুরিচ্যুত হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে। একজন বলে গেছেন, জিয়াউল হাসানকে কোনো ইন্টারোগেশন করা হচ্ছে না। আমি একমত। তখন কর্নেল ছিল, এখন মনে হয় তাকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে রিটায়ার করে তারপর তাকে গ্রেপ্তার করে নাটক সাজিয়েছে, ডিবিতে নিয়ে গেছে ইন্টারোগেশনের জন্য। জিয়াউল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এখন এমনভাবে তাকে ইন্টারোগেশন করা হোক আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যত গুম-খুন-অপহরণ হয়েছে, তা বলতে যেন সে বাধ্য হয়।’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চৌধুরী আলমের মেয়ে খাদিজা আখতার, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজীদা ইসলাম তুলিসহ গুম হওয়া পরিবারের কয়েকজন সদস্য বক্তব্য দেন। কর্মসূচির শুরুতে গুম হওয়া সদস্যদের স্মরণ করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে এই সংহতি সভা হয়। এতে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের কষ্টের আর্তি এই সংহতি সভায় মর্মস্পর্শী ভাষায় প্রকাশ করলে হাজার হাজার নেতাকর্মী অশ্রুসজলে সহমর্মিতা জানান দেন।