প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১০:৩১ এএম
ফাইল ফটো
রাজনৈতিক দূরত্ব ও মান-অভিমান ভুলে ফের গণফোরামের দুই অংশ এক হওয়ার ঘোষণা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরামের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথা জানানো হয়। শিগগির দলটির ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণাও দেন নেতারা। এ সময় গণফোরামের দুই অংশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির প্রতিষ্ঠাতা রাজনীতিক, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা ঐক্যবদ্ধ হলেই দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারব।’
প্রসঙ্গত, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর নানা মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে চার বছর আগে ভাগ হয়েছিল গণফোরাম। গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা রাজনীতিক, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বকে অস্বীকার ও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা করেছিল গণফোরামের আরেকটি অংশ।
অনুষ্ঠানে গণফোরামের মন্টু অংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঐক্যের ঘোষণাপত্রে বলেন, ‘৩১ বছরের ধারাবাহিকতায় গণফোরামের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী সংগঠক ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে আমরা আজ এই শুভদিনে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি। আমরা দ্রুততম সময়ে ঐক্যবদ্ধ গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল করব।’
আওয়ামী লীগ থেকে সরে আসার পর ড. কামাল হোসেন এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সরে আসা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট গণফোরাম গঠিত হয়। তবে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতানৈক্য বাড়তে থাকে দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু ও তার অনুসারীদের। এরই একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ৫ জুন মোস্তফা মহসীন মন্টুকে বাদ দিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে গণফোরামের নতুন কমিটি করা হয়। কিন্তু ড. রেজা কিবরিয়া দ্রুতই গণফোরামে ছেড়ে যোগ দেন গণঅধিকার পরিষদে। অন্যদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বে গঠিত হয় গণফোরামের আলাদা কমিটি। এ অংশের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয় অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
দলটির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেই তথাকথিত মন্ত্রী হতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেটা করছি না। কারণ আমরা চাই জনগণ সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার মালিক হোক। সুষ্ঠু রাজনীতি করতে হলে জনগণকে বোঝাতে হবে তোমরা দেশের পাহারাদার, তোমরা ভোটে অংশগ্রহণ করো। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, তাদের বিতাড়িত করতে হবে। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্র হতে হবে।’
ড. কামাল বলেন, ‘সুষ্ঠু রাজনীতির জন্য আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। সে প্রতিজ্ঞা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা কারও কাছে বিক্রি হইনি। টাকা দিয়ে ভোট কিনে ক্ষমতায় আসার পর সেই টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়, কিন্তু এতসব করেও একটা সময় ঠিকই পালিয়ে যেতে হয়। দেশে কেন থাকতে পারে না? কারণ জনগণ জানে তাদের হাতে বিচার করার ক্ষমতা আছে।’
অর্থ পাচার নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে অবিশ্বাস্য রকমের টাকা পাচার করা হয়েছে, যা এই দেশের জনগণেরই। আমরা সেই বঞ্চিত মানুষের পাশে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রসমাজ প্রমাণ করেছে তারা কারও কাছে বিক্রি হয়নি। তারা জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে। তারা দেশ পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হলেই দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারব।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন, ডা. মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।