প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৪০ পিএম
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪ ১৯:০৪ পিএম
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ফাইল ছবি
ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘২৬/২৭ দিনের মাথায় আমাদের ওপরে যে সবশেষ জুলুম করা হয়েছে আমাদের নিষিদ্ধ করে সেটা ইতোমধ্যে প্রত্যাহার হয়েছে। এই স্টিগমা (নিষিদ্ধ কলঙ্ক) আমাদের কেন দেওয়া হয়েছিল? আন্দোলনকে ডাইভার্ট (ভিন্ন খাতে প্রবাহিত) করার জন্য। তারা কেউ কেউ চেয়েছিলেন, এরকম কিছু একটা হলে জামায়াতে ইসলামী তার সমস্ত শক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করবে তখন অন্যকিছু হবে এটাকে কেন্দ্র করে। যে মূল স্রোতধারা হয়েছে সেটা অন্যদিকে চলে যাবে, বিশৃঙ্খলা হবে।’
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর আগে ১ আগস্ট নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল সে সরকার। তবে দল নিষিদ্ধের সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বুধবার (২৮ আগস্ট) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এর প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের আমির বলেন, ‘আপনারা জানেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এই মাসের ১ তারিখে হঠাৎ করে আমাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, আমাদের প্রিয় ছাত্র সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করা হলো। কোন প্রেক্ষাপটে? যখন অধিকারের দাবিতে সারা জাতি আন্দোলনে। মা তার শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে মাঠে নেমেছে শিক্ষার্থীদের সাহস দিতে। মাঠে কেন এসেছে জানতে চাইলে ওই মা বলছেন, সন্তানদের বুকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই আমি আমার সন্তানকে নিয়ে এসেছি। প্রয়োজনে তার বুকে গুলি লাগলে লাগুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরা শুনে আসছি যে, এক ইস্যুতে আরেক ইস্যু চাপা পড়ে যায়। এটা হয় তো চাপা দেওয়ার যে একটা জায়গা থেকে এটা হয়ে থাকতে পারে। যারা করেছেন তারা ভালো জানেন।’
শফিকুর রহমান যোগ করেন, ‘এ আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের ছিল, তা নয়। আবার রাজনৈতিক দলেরও ছিল না। এ আন্দোলন হচ্ছে গত সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিকতা। শিক্ষার্থীরা এর ফিনিশিং (সমাপ্তি টানা) দিয়েছে। গোটা জাতি ছিল তাদের পেছনে।’
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা-সংঘাতে নিহতের ঘটনায় হওয়া মামলায় ব্যাপক হারে আসামি করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি ও তার দল জামায়াত দেশ থেকে হিংসা-বিভক্তি রাজনীতির অবসান চায় উল্লেখ করে আমির বলেন, ‘আমরা হিংসা রাজনীতির কবর চাই। এটা আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। আমরা বিভক্তি রাজনীতির কবর চাই, এটাও মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। কোনো বিষয়ে আমরা জাতির বিভক্তি চাই না। সব ক্ষেত্রে আমরা চাই, জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকুক।’
মতবিনিময় সভায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলা ভিশনের প্রধান সম্পাদক আবদুল হাই সিদ্দিক, মানবজমিনের নির্বাহী সম্পাদক শামীমুল হক, এটিএন বাংলার পরিচালক (বার্তা) হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু মুক্ত বক্তব্য দেন।
জামায়াতের আমিরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আখন্দ উপস্থিত ছিলেন।