প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৪৫ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৭:২৯ পিএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ফটো
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রোডম্যাপ প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অতি দ্রুত সংলাপও চান তিনি।
শনিবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টির কাজী জাফরের স্মরণ সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই যে, প্রধান উপদেষ্টা অতি দ্রুত জনগণের সামনে কী করতে চান তা উপস্থাপন করবেন। একটা রোডম্যাপ দেবেন যে, কীভাবে তিনি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন, কীভাবে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে জনগণকে স্বস্তি দিয়ে সামনের দিকে এগুবেন নির্বাচন করার জন্য। জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে একটা নির্বাচন দ্রুত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়, তার জন্য এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এখন পর্যন্ত এই সরকারের সত্যিকার অর্থে কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনা হয়নি। রাজনীতি ছাড়া তো এটা হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত তো আনতে হবে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘ছাত্র নেতৃবৃন্দ যারা আজকে সহযোগিতা করছেন তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে- এই বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে এই বিপ্লবকে যেন সুসংহত করা যায়, প্রতিবিপ্লব যেন না ঘটে। ইতোমধ্যে যে চক্রান্তের কথা-বার্তা উঠে আসছে আমাদের মধ্যে সেগুলোকে যেন প্রতিহত করা যায়, সেগুলোতে পরাজিত করে বিপ্লবের চেতনাকে যেন আমরা সমুন্নত রেখে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেই বিষয়ে তাদের সজাগ থাকতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা মনে করি, তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এই সরকারের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে, জনগণের আস্থা রয়েছে, সকলেরই আস্থা আছে। কিন্তু অবশ্যই সেটা (নির্বাচন অনুষ্ঠান) সীমিত সময়ের মধ্যেই করতে হবে, একটা সময়ের মধ্যে করতে হবে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই করতে হবে। তা না হলে যে উদ্দেশ্য সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যাহত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন কথাটার ওপর জোর দিতে চাই। এই যে সংস্কারের বিষয়টা এসেছে, এই সংস্কারের জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেটা কীভাবে আসবে? সেটা আসবে একটা নির্বাচিত পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে। এর কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং কয়েকজন ব্যক্তি একটা সংস্কার করে দিলেন এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই সংস্কার আসতে হবে।’
এ সময় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোষরদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাশে দেখতে চান না বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘পত্রিকায় যখন ছবি দেখি যে, এই সমস্ত লোকেরা আবার সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করছেন, তখন আমরা উদ্বিগ্ন হই।’
‘আমরা খুব চিন্তিত হই যে, আজকে ১৬/১৭ দিন হয়েছে এখন পর্যন্ত যে সমস্ত সেক্রেটারিরা ওই সরকারকে এতোদিন ধরে চালিয়েছে, তাদের সমস্ত কুবুদ্ধিগুলো দিয়েছে তারা এখনও এই সরকারের সচিবের দায়িত্ব পালন করছে এটা আমরা দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই যে, অবিলম্বে এই বুরোক্রেসিতে যারা প্রো-পিপল আছেন, যারা জনগণের সঙ্গে সস্পৃক্ত আছেন সেই আইন মেনে তাদের এই সরকারের পাশে দেখতে চাই। একথাগুলো আমরা বলতাম না। বলতে বাধ্য হচ্ছি এজন্যে যে, আমরা সেগুলো দেখতে পারছি না,’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ আগের ভাইস চ্যান্সেলরগুলো রিজাইন করেছেন। আমরা দেখতে চাই যে, ভাইস চ্যান্সলর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে যাদের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তারা অত্যন্ত সচেতন। এ ব্যাপারে তাদের সর্বাত্মক সহেযোগিতা দিয়েছি, দেব।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের প্রতি তার অঙ্গীকারের নানা কথা তুলে ধরে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
কাজী জাফর আহমদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট তিনি মারা যান।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিএনপির নূর মোহাস্মদ খান, জহির উদ্দিন স্বপন, নজমুল হক নান্নু, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।