প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪ ১৭:১২ পিএম
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪ ১৯:০৭ পিএম
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নতুন মুখ নিয়ে দল গোছানোর পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দয়া করে আপনারা দেশকে অরাজকতার মধ্যে ঠেলবেন না। সদ্যবিদায়ি দলের জন্যও এই পরামর্শ। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করব। আপনারা দল গোছান নতুন মুখ নিয়ে, নতুন অঙ্গীকার নিয়ে এবং আশা করি উইথ থ্রু পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট (রাজনৈতিক আইনের মধ্য দিয়ে)।’
সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন দাবি নিয়ে দেখা করে। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ক্ষমতাচ্যুত দলটিকে নতুন মুখ ও নতুন অঙ্গীকার নিয়ে দল গোছাতে পরামর্শ দেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব সবার সুরক্ষা দেওয়া। আমি আশা করি, আমার কথায় ওনারা আশ্বস্ত হয়েছেন। আরও যারা শাহবাগে বসে বসে আন্দোলন করছেন, উনারা কী অর্জন করছেন? অনেকে বলে, কোনো দলের পক্ষে তারা কাজ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সকালেও বলেছি, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। প্রচুর ভালো ভালো নেতা আছেন। এই দলটা এক সময় মধ্যবিত্ত সেকুলারপন্থি বাঙালিদের দল ছিল। মুসলিম লীগ যখন ছিল, সেটা ছিল উচ্চবিত্তের। উচ্চবিত্ত বাঙালি মুসলিম লীগে ছিল। মধ্যবিত্তের তৎকালীন বুদ্ধিজীবী যারা, তারা সক্রিয় না থাকলেও সমর্থন করে। এত বড় মানুষের দল, যিনি এ দেশ স্বাধীন করেছেন—এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। কারও সন্দেহ থাকার কথা না। ওনার নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা এসেছে। তার পরে বাকিটা। সেই দল এ রকমভাবে ভেঙে পড়ে যাবে যে, লোকে এখন লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে; আবার পেলে কী জানি হয়। আমি ওনাদেরও আশা দিচ্ছি, কথা দিচ্ছি, আপনারা দল গুছিয়ে নেন। আপনাদের দলকে তো কেউ ব্যান করেনি। জঙ্গি না হলে কোনো দলকে ব্যান করা খুব খারাপ সংস্কৃতি।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের সংবিধানে কোনো দলের নাম উল্লেখ করেননি—এই পার্টি ব্যান করতে হবে, ওই পার্টি থাকবে না। মুসলিম লীগও তো ছিল। পলিটিক্যাল পার্টিকে ব্যান করা হয় পলিটিক্যাল ফায়দা হাসিল করার জন্য। আমি যেটা বলতে চাই না।’
দেশত্যাগ করা শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক দলের মতো চলবে। আপনি একে দিয়ে তাকে দিয়ে গন্ডগোল করাবেন, আমি আসতেছি-আমি যাব। আপনি আসবেন, এটা আপনার দেশ, আসেন না কেন? কে আপনাকে বাধা দিচ্ছে? নাগরিকত্ব তো কারও যায়নি। ২১ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন। আপনি স্বেচ্ছায় চলে গেছেন, আপনাকে তো কেউ যেতে বলে নাই। আপনি স্বেচ্ছায় গেছেন, ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। গন্ডগোল পাকানোর কোনো মানে হয় না। গন্ডগোল পাকিয়ে কোনো লাভ হবে না, বরং লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে।’
‘মনে করবেন না আমি জাতীয় পার্টির লোক। জাতীয় পার্টির কী দশা হয়েছিল? বেঁচে গেল কারণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জেলে চলে গেলেন এবং জেল থেকে উনি পাঁচটা আসন পেয়েছেন। সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছিল, আপনি যে দেশে যেতে চান, আমরা আপনাকে সেফ প্যাসেজ দিয়ে নিয়ে যাব— জেনারেল নূরুদ্দীন (সেনাপ্রধান অব. লেফটেন্যান্ট জেনারেল নূরুদ্দীন খান) এখনও বেঁচে আছেন। উনি খবর পাঠিয়েছিলেন, না হলে আপনাকে জেলে যেতে হবে। অনেকে মনে করেছিল এইচ এম এরশাদ সৌদি আরবে চলে যাবেন। তখন রিউমার ছিল সৌদি আরবে তার পানির ফিল্টার ফ্যাক্টরি আছে। আমি তুলনা করার চেষ্টা করছি না,’ বলেন তিনি।
শাহবাগে আন্দোলনকারীরা অন্যের খেলা খেলছেন মন্তব্য করে সাখাওয়াত বলেন, ‘যে হামলার ঘটনা ঘটেছে সে জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী। আমি কথা দিচ্ছি, আমি (দোষীদের) খুঁজে বের করব—এই লোকগুলো উদ্দেশ্য কী? মন্দির একটা পূজার জায়গা, সেটা ভাঙবেন, কেন?’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের এলাকায় এগুলো (ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর সহিংসতা) ঠিক করেন। আসনভিত্তিক যদি আমরা হিসাব নিতে থাকি আপনারা ভালো করে জানেন আমি নতুন লোক না। গত পাঁচ বছর আপনারা আমার সঙ্গে ছিলেন। (আই উইল মেক শিউর দ্যাট কন্সটিটেন্সি) আমি নিশ্চিত করব আসনগুলোতে একেবারেই কোনো ইলেকশন যাতে না হয়। আমি এখনো ইনফ্লুয়েন্স রাখি ইলেকশন কমিশনে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দয়া করে আপনারা দেশকে অরাজকতার মধ্যে ঠেলবেন না। সদ্যবিদায়ি দলের জন্যও এই পরামর্শ। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করব, আপনারা দল গোছান নতুন মুখ নিয়ে, নতুন অঙ্গীকার নিয়ে এবং আশা করি উইথ থ্রু পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট (রাজনৈতিক আইনের মধ্য দিয়ে)।’
আগামী ১৫ আগস্ট ছুটি থাকবে কি না সে ব্যাপারে কেবিনেটে সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান তিনি।