প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ২০:২২ পিএম
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ২০:৫৫ পিএম
শনিবার ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। প্রবা ফটো
নতুন করে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। রবিবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং জেলা ও মহানগরে জমায়েত হবে তারা। পরদিন সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টে নিহত এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে শোকমিছিল করবে দলটি।
শনিবার (৩ আগস্ট) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দেশের অর্জিত গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবার সম্মিলিত সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
কর্মসূচি ঘোষণা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অন্যদিকে আমরা কোনো রকম মুখোমুখি অবস্থানে জড়াতে চাই না। সংঘাত হতে পারে এ ধরনের প্রোগ্রাম আমরা এড়িয়ে চলেছি। শুক্রবার ও শনিবারেও আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। আমরা রবিবার নতুন করে প্রোগ্রাম দিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ফিরিয়ে এনেছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে বিএনপি-জামায়াত অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএনপি বার বার জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত ও রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেকোনো আন্দোলন দেখলেই সেটাকে সরকার উৎখাতে নিয়ে যেতে উন্মুখ হয়ে থাকে। সরকার সব উসকানি-নৈরাজ্য ধৈর্য-সংযমের মাধ্যমে মোকাবিলা করছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির অভিভাবক। ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিনি বসতে চান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংঘাত এড়াতে পক্ষ-বিপক্ষ হতে পারে, পাল্টাপাল্টি হতে পারে এমন কর্মসূচি এড়িয়ে চলছে আওয়ামী লীগ।
বিভেদ নয়, ঐক্যে বিশ্বাসী দাবি করে তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও প্রগতিতে বিশ্বাস করে, তাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চান তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দেশের অর্জিত গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবার সম্মিলিত সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
শিশুর প্রাণ ঝরিয়ে লাভ নেই দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অবুঝ শিশুরা কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় পড়ে না। অবুঝ শিশুর তাজা প্রাণ ঝরিয়ে আমাদের দলের কোনো লাভ নেই। লাভ তাদের, যারা এ শিশুর লাশ থেকে ফায়দা লুটতে চায়।
বিশ্ব সংস্থা ইউনিসেফের উদ্দেশে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, যে ৩২ জন শিশু হত্যার কথা তারা বলছে, আমরা সেই শিশুদের নাম, ঠিকানাসহ জানতে চাই। এটা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। সত্য খুঁজে বের করুন।
শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সহিংসতা হয়েছে, এর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়িত নয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবিরোধী একটা মহল চলমান সংকট জিইয়ে রেখে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেহাত হয়ে গেছে। যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে চায়, এ অশুভ শক্তির তৎপরতা আমরা সফল হতে দিতে পারি না। আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) শতভাগ। আমরা শিক্ষার্থীদের নিকট দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। তারা আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। দেশটি আমাদের। কোনো পক্ষকে বাদ দিয়ে নয়। বরং সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাবে আমাদের এ বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা অফিসিয়ালি সেটা বলি নাই। আমাদের যোগাযোগের সাধ্যমতো চেষ্টা আছে। যখন যোগাযোগটা হবে, তখন আপনারা দেখতে পাবেন, জানতে পাবেন। এখানে কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন আলোচনার দরজা খোলা। কাজেই বিভিন্নভাবে যোগাযোগ হতে পারে।
তারা আলোচনা না করলে আওয়ামী লীগ কী করবে এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নেগেটিভে যাব কেন? দরজা খোলা রাখছি।
রবিবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের কর্মসূচি বলে দিয়েছি। এ জন্য আমরা জমায়েত করছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।