প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪ ১০:২১ এএম
ফাইল ফটো
ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিয়ে আবার যুগপৎ আন্দোলনে আসছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এবার ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এককভাবে কর্মসূচি পালন করতে চায় তারা।
গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
দ্বাদশ নির্বাচনের পর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে এর আগে কয়েক দফা বৈঠক করে বিএনপি। কিন্তু যৌথ কর্মসূচি হয়নি। কয়েক মাস আগে শরিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ওইসব বৈঠকে পুনরায় যৌথ আন্দোলন শুরুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, কর্মসূচি প্রণয়নে দুয়েক দিনের মধ্যে মিত্রদলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। তবে আজ বুধবার দলের যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাদের কাছ থেকে কর্মসূচির বিষয়ে মতামত নেওয়া হবে।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মহানগর ও জেলা সদরে তিন দিনের সমাবেশ কর্মসূচি শেষে সোমবার রাতে দলের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বৈঠকে বসে স্থায়ী কমিটি। এ পর্যায়ে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে গণঅনশন, স্বেচ্ছা কারাবরণসহ কয়েকটি কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন নেতা বলেন, বিএনপি মনে করে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০টি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, তা দেশের স্বার্থবিরোধী। এই চুক্তি-সমঝোতার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচি গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, দল খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রাথমিক পর্যায়ে এককভাবে কর্মসূচি পালন করতে চায়। তবে এ কর্মসূচি পালনের জন্য সমমনা দলগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা আছে তাদের। কিন্তু অন্য কর্মসূচিগুলো যুগপত্ভাবে পালন করা হবে। এজন্য শরিকদের সঙ্গে দুই-এক দিনের মধ্যে বৈঠক করবে বিএনপি। তাদের মতামত নিয়ে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে দলটির স্থায়ী কমিটি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের পাশাপাশি আরও কয়েকটি ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, তাদের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক আছে। আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে মতামত নিতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে তার ধারণা।
গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করায় স্থায়ী কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এ ইস্যুতে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, নজিরবিহীন দুর্নীতি, দেশের ও বাইরের ব্যাংকগুলো থেকে ঢালাও ঋণগ্রহণের ফলে ঋণফাঁদ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনগণের ওপর চাপ বাড়ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, সরকার সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে ভারতের ওপর প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে। অবিলম্বে এই হত্যা বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বৈঠকে আহ্বান জানান নেতারা।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।