ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫৩ পিএম
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪ ১৮:২২ পিএম
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ফাইল ফটো
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসত্য ও ডাহা মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন। সেখানে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম ও ক্ষেত্রবিশেষে কিছু মূলধারার গণমাধ্যমে বেশ কিছু ভুল তথ্য চলে এসেছে। বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। সবশেষ এসে গতকাল বিএনপির মহাসচিবও সেই অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন।’
সোমবার (১ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রবিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, কানেকটিভিটির নামে ভেতরে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে রেলযোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ‘করিডোর’ দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে এবং বাংলাদেশ আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিলতার মধ্যে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ফখরুল আরও বলেন, নানা নাম দিয়ে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো, তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য।
বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল একটি প্রেস কনফারেন্সে তিনি (ফখরুল) যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা একেবারে অসত্য ও ডাহা মিথ্যা এবং সমঝোতা স্মারকের সব ধারা তিনি হয়তো পড়েননি। তিনি সব ধারা না পড়ে, না বুঝে খণ্ডিতভাবে পড়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতীয় ট্রেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাবে। কিন্তু এ সমঝোতা স্মারকে এটিও বলা আছে, ভারতের ওপর দিয়েও বাংলাদেশের ট্রেন নেপাল ও ভুটানে যাবে। এই সমঝোতা স্মারকে বলা আছে। নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশের ট্রেন ও তাদের ট্রেন ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এসে মোংলা কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করবে। তারা এখন কলকাতা বন্দর ব্যবহার করে। অর্থাৎ আমাদের বন্দরগুলোকে আমরা লাভজনক করব।’
প্রশ্ন রেখে আরাফাত বলেন, ‘তাহলে আপনি বলবেন ভারতের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি হয়ে গেল। তারা নিজেদের কলকাতা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের বন্দর লাভজনক করে দিচ্ছে? বিষয়টি হচ্ছে আঞ্চলিক সহযোগিতার।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই সমঝোতা স্মারকে একটা বিশাল অর্জন আছে। আপনারা দেখবেন নেপাল থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে ভারতের যে গ্রিড লাইন, সেই গ্রিডের ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে আমরা নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট আমদানি করব। যখন আমাদের শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকবে, অতিরিক্ত উৎপাদন করব, আমরা তখন রপ্তানিও করতে পারব।’
‘এখন কি বলবেন ভারতের বুক চিরে বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনবে এবং বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে? এখানে তো পুরোটাই আমরা লাভবান হব। সেজন্য এই সমঝোতা স্মারকের বিষয়গুলো একেবারে উল্লেখ না করে এটি যে দুই দেশের জন্য লাভজনক সেটি উল্লেখ না করে খণ্ডিতভাবে তারা অপপ্রচারের স্বার্থে মিথ্যাচার করছে, তারা গোড়ামি চুক্তি ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বলছে,’ যোগ করেন তিনি।
আরাফাত আরও বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ও অনেকে বলছেন- এর ফলে নাকি আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। কীভাবে? ভারতের ট্রেন যে যাবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সেখানে নাকি আর্মি ও মিলিটারি সামরিক অস্ত্র নিয়ে যেতে পারে। তাতে জিওপলিটিক্যাল ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে। অথচ এই সমঝোতা স্মারকের তিন নম্বরে বলা আছে পরিষ্কারভাবে। এখানে বলা আছে গুডস উইদাউট রেড ট্রাফিক। সেখানে সংজ্ঞা দেওয়া আছে ডেঞ্জারাস ও অফেন্সিভ গুডস, ইনক্লুডিং আর্মস অ্যান্ড এক্সক্লুসিভস। অর্থাৎ এগুলো নেওয়া যাবে না।’
গোটা বিশ্ব রিজিওনাল কানেকটিভিটির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গোটা বিশ্ব কানেকটিভিটির মধ্যে আসছে। আমরা কিন্তু এটা এককভাবে ভারতকে দিইনি। সেটিকে তারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে। এটা কীভাবে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি হলো? মূলত বিএনপির চিন্তা নতজানু।’