প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ১৬:৩১ পিএম
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪ ১৮:৩১ পিএম
বিএনপি লোগো। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির কাছে বর্তমানে দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিই প্রথম অগ্রাধিকার। এজন্য দলীয় প্রধানের মুক্তি আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায় নিতে প্রথম দফায় তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। কর্মসূচির প্রথম দিন শনিবার (২৯ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ হয়েছে। একই দাবিতে সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা ছাড়া সারা দেশের মহানগরগুলোয় এবং ৩ জুলাই জেলাগুলোয় সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রায় ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া হৃদরোগ, লিভার, ফুসফুস, কিডনি, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। এর মধ্যে লিভার, কিডনি ও হৃদরোগকে সবচেয়ে ঝুঁকির কারণ মনে করছেন তার চিকিৎসকরা। তার লিভারে যন্ত্র ও হার্টে পেসমেকার স্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘লিভারের রোগই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণ। স্থায়ীভাবে ম্যাডামের লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়নি। বর্তমানে তার যে বয়স তাতে স্থায়ীভাবে লিভার প্রতিস্থাপন করা সম্ভব কি না দেখা প্রয়োজন। যেটি করতে বিদেশ নিতে দেশের বাইরের ডাক্তাররা আমাদের জানাচ্ছেন। এসব রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য ম্যাডামের চিকিৎসকরা তাকে বিদেশ নেওয়ার সুপারিশ করেন অন্তত ছয়বার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না মেলায় দেশেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে বিএনপির এক নীতিনির্ধারক জানান, ২৪ জুন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা ওঠে। তার সঙ্গে অন্যরাও আলোচনায় যুক্ত হন। বিএনপি নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে লাভ হবে না। এখন তাকে মুক্ত করার আন্দোলনে নামতে হবে।
এই বৈঠকেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ও জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া জনসম্পৃক্ত ইস্যু ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যা ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশনেত্রীর মুক্তির লক্ষ্যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এরপর আরও কর্মসূচি আসবে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা বহু দিন পরে প্রথম খালেদা জিয়াকে নিয়ে মুখ খুলেছি, এই মুক্তির আন্দোলন থামবে না। কোথায় গিয়ে থামবে সেটা আল্লাহই বলতে পারেন।’
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে বেগবান করতে এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে আরও কর্মসূচি আসবে।’
কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে, জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের একজন নেতা জানান, প্রাথমিকভাবে তো তিন দিনের সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে কী ধরনের কর্মসূচি আসবে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, পদযাত্রা, অবস্থান কর্মসূচি আসতে পারে।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ
খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করারও উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। শনিবার নেত্রীর মুক্তির দাবিতে ঢাকায় যে সমাবেশ হয়েছে, সেখান থেকে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিতে তাকে মুক্তির দাবিটি একীভূত করার আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আজকে আমরা যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি, যুগপৎ আন্দোলন করছি, আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে একইভাবে একত্রীভূত করে সোচ্চার আওয়াজ তুলি।’
গত বছরের জুলাই থেকে এক দফা প্রণয়ন করে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। সেই এক দফার অন্যতম একটি দাবি ছিল- খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল।
আশার আলো দেখছে বিএনপি
বিএনপি তার দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে শনিবার ঢাকায় যে সমাবেশ করেছে, তাতে দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণকে আন্দোলনের জন্য ইতিবাচক দেখছে বিএনপি। গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের প্রায় আট মাস পর এই সমাবেশে জনসমাগম বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে আশার আলো দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় ২৯ জানুয়ারিতে যে সমাবেশ হয়েছে, তার বেশ কয়েকটি সফল দিক আছে। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর প্রথম এত বড় সমাবেশ ঢাকায় হলো। বৃষ্টি ও গরম উপেক্ষা করে সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপচে পড়া উপস্থিতি লক্ষণীয়, যা সামনের আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আরও ত্বরান্বিত হবে।’