প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪ ২০:০১ পিএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪ ২০:০২ পিএম
বেসরকারি সংস্থা শাপলানীড় আয়োজিত ’এনশিওরিং ইকুইট্যাবল প্রাইমারি এডুকেশন অপরচুনিটিস ফর মারজিনালাইজড চিলড্রেন’ শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবা ফটো
ইউনিয়নটিতে নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে একটিতেও নেই প্রধান শিক্ষক। তীব্র সংকট রয়েছে সহকারী শিক্ষকেরও। বিদ্যালয়গুলোর ৪০ শতাংশ শিক্ষকের পদই শুণ্য। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের চিত্র এটি।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে বেসরকারি সংস্থা শাপলানীড় আয়োজিত ’এনশিওরিং ইকুইট্যাবল প্রাইমারি এডুকেশন অপরচুনিটিস ফর মারজিনালাইজড চিলড্রেন’ শীর্ষক সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘দেশের বেশিরভাগ প্রান্তিক এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হয়। শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় শিশুরা। প্রান্তিক শিশুদের গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘অধিকার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শাপলানীড়। এর আওতায় এনজিওর নিয়োগ দেওয়া প্যারাশিক্ষকেরা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা করে থাকেন।’
সভায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোমেন সরকার বলেন, ‘আমরা চর এলাকার মানুষেরা বৈষম্যের শিকার। আমাদের নয়টা স্কুলের মধ্যে একটা স্কুলেও প্রধান শিক্ষক নেই। এমনও দেখা গেছে একটা স্কুলে মাত্র একজনই শিক্ষক আছেন। শিক্ষক বৃদ্ধির জন্য ডিসি, ইউএনওর কাছে তের, চৌদ্দ বছর যাবত তদবির করে যাচ্ছি। কিন্তু শিক্ষক পাচ্ছি না। আমার এলাকায় শিক্ষার হার অত্যন্ত কম, মাত্র ২৫ পারসেন্ট। এই শিক্ষার হার নিয়ে আমরা ডিজিটাল হতে পারব না।’
বক্তারা জানান, চানপুর ইউনিয়নটি মেঘনা বেষ্টিত একটি চর এলাকা। এই এলাকার সঙ্গে উপজেলার কোনও সড়ক যোগাযোগ নেই। কিন্তু চর এলাকা হিসেবে এটি সরকারের গেজেটের অন্তর্ভুক্তও হয়নি। ফলে চর এলাকায় সরকারের যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থাকে, সে সবও এই এলাকার মানুষ পাচ্ছে না। জাতীয় পর্যায়ে প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক রয়েছেন। আর চানপুর এলাকায় ৬৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র একজন।
সভায় শাপলানীড়ের বিভিন্ন এলাকার প্রকল্পের চিত্র উপস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রতিনিধিরা জানান, চরাঞ্চল ও প্রান্তিক এলাকাগুলোতে শিক্ষকেরা থাকতে চান না। চাকরিতে যোগদানের পর প্রথম দুই বছর থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ের হার বাড়ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে এমন এলাকাগুলোতে তাদের ভাষা জানে, এমন শিক্ষক পাওয়া যায় না। ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সভায় বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘অনেক এলাকাতেই অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু সেই তুলনায় উন্নয়ন হয় না। অনেক বস্তি এলাকাতেই দেখি, প্রজেক্টের আওতায় শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। প্রজেক্ট শেষ হয়ে গেলে বাচ্চাগুলো আবার ঝরে পড়ে। নিজেদের পরিবর্তনের জন্য নিজেদেরই উচ্চকণ্ঠ হতে হবে। নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।’
সভায় বক্তারা প্রান্তিক এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা বাজেট বৃদ্ধির আহ্বান জানান।