× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জনস্বাস্থ্য

সাওল হৃদয়ালয়

হোসেন আবদুল মান্নান

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৪ ০৯:৫৮ এএম

হোসেন আবদুল মান্নান

হোসেন আবদুল মান্নান

আজকের মানুষের কাছে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও সর্বক্ষণ আতঙ্কিত হয়ে থাকা রোগ হৃদরোগ। ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক কারণে পাশ্চাত্যের তুলনায় এশিয়া বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ রোগের লক্ষণ ও প্রভাব বেশি। বিশ্বে প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে ইহলৌকিক জীবন ত্যাগ করে পরপারে চলে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। কেবল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের (এনআইসিভিডি) জন্য বার্ষিক সরকারি বরাদ্দ সব মিলিয়ে ১৬০ কোটি টাকার অধিক। দেশে একসময় এ রোগের বিজ্ঞানসম্মত তেমন চিকিৎসা ছিল না। উপমহাদেশের মানুষের কাছে এ-জাতীয় মৃত্যু কেন্দ্র করে নানাবিধ সামাজিক কুসংস্কার, মিথ ও লৌকিকতা প্রচলিত ছিল। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনাচারও ছিল বিচিত্র ধরনের অবৈজ্ঞানিক এবং ভুল চিকিৎসার অধীনে।

হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসার উদ্ভাবন খুব বেশিদিনের নয়। গত একশ বছরের মধ্যেই পৃথিবীতে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নানা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সাধিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে প্রভূত কাজ চলেছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযথ বার্তা পৃথিবীর দেশে দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন বলছে, যদি সচল থাকতে চান গোটা শরীরের মতোন আপনার হৃদযন্ত্রের মধ্যেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করুন। স্লোগান দিচ্ছে, ‘ইউজ হার্ট, নো হার্ট’ । বলা হচ্ছে, অক্সিজেনের ঘাটতি হলে হৃদযন্ত্রের কোষগুলোর ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটে এবং মানুষ হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে হৃদরোগকে ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ বলা হয়। লক্ষ করলে বোঝা যাবে, ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ বা ‘বিশ্ব হৃদয় দিবস’ ইত্যাদি পালনের বয়স ২৫-৩০ বছরের বেশি নয়। এ বিষয়ে সব সময় সচেতনতার বার্তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচার, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, মদ্যপান, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত মেদ, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।

 

বর্তমান বিশ্বের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বংশপরম্পরার জেনেটিক দিক ছাড়াও এর অসংখ্য কারণের মধ্যে অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো লাইফস্টাইল। ওষুধ, নিয়মিত পরীক্ষানিরীক্ষার সঙ্গে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা। খাবার মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান। খাদ্য মানুষকে যেমন বাঁচায়, আবার অকালমৃত্যু ডেকে আনার জন্য খাদ্যই যথেষ্ট। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, ডায়েট ইজ মেডিসিন-এর বিপরীতটা কখনও কাম্য নয়। আসলে আমরা যা খাই তা-ই আমাদের চালিকাশক্তি। মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং সুস্থতা যেন একই সূত্রে গাঁথা এবং একই জীবনচক্রের নাম। শুধু ওষুধ সেবনে মানুষ বাঁচতে পারে না। তাকে রুটিনমাফিক একটা পরিচ্ছন্ন জীবনপ্রণালি ও কঠিন নিয়মানুবর্তিতায় ফিরে আসতেই হবে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, নকল বা ভেজাল নিয়েও বর্তমানে বিতর্কের অন্ত নেই। প্রশ্ন আছেÑওষুধ কি সব সময় শরীরে সত্যি সত্যি কাজ করে? এর মনস্তাত্ত্বিকতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কিংবদন্তি বাঙালি চিকিৎসক ও রাজনীতিক ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের একটা গল্প বলা যায়। তিনি রোগীকে মাঝেমধ্যে কৌতুক করে বলতেন, ‘অসুখ হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন, ডাক্তারকে তো বাঁচতে হবে, প্রেসক্রিপশন দিলে ঔষধ কিনে নিবেন, ডিসপেনসারিগুলিকে বাঁচাতে হবে, আর বাড়িতে গিয়ে ঔষুধগুলি ফেলে দিবেন কেননা আপনাকেও তো বাঁচতে হবে।’

আমেরিকার একজন বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ডিন অর্নিশের ‘রিভার্সাল হার্ট ডিজিজ’ চিকিৎসার আলোকে ভারতের বিখ্যাত ও স্বনামধন্য কার্ডিওলজিস্ট অ্যান্ড লাইফস্টাইল স্পেশালিস্ট ডা. বিমল ছাজেড় এমডি ১৯৯৫ সালে নয়াদিল্লিতে ‘সাওল হার্ট সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন। সাওল মানে সায়েন্স অ্যান্ড আর্ট অব লিভিং। বাংলায় বলা যায়, বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাঁচার শিল্পিত কৌশল। আমেরিকা, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশে সাওলের অন্তত ১৩২টি শাখা রয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের যথাযথ অনুমোদন ও সহযোগিতা নিয়ে হৃদরোগ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা তথা খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন লাইফস্টাইলের সুপরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ডা. বিমল ছাজেড় আজ আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত জীবনমুখী এক চিকিৎসকের নাম। উপমহাদেশের প্রথম নন-ইনভেসিভ কার্ডিওলজির প্রবর্তক। দেহকে কাটাছেঁড়া না করে শুধু খাদ্য ও জীবনাচারে পরিবর্তন এনে একজন সংযত মানুষ কীভাবে নিজেকে নিজেই বাঁচাতে পারেন তার পক্ষে তার অকাট্য এবং যৌক্তিক বক্তব্য যেকোনো মানুষকে প্রাণিত করে চলেছে। রোগীর চোখে গাঢ় অন্ধকারের পরিবর্তে আশার আলো ফোটাচ্ছেন। নিরন্তর মানসিক শক্তি ও প্রেরণা জোগাচ্ছেন।

বাংলাদেশে এযাবৎ পর্যায়ক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে সাওলের তিনটি কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহসী মানুষের প্রতিকৃতি ও বরেণ্য কবি মোহন রায়হান। তিনি ২০০৮ সালে ভারতে হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিনা অপারেশনে হৃদরোগ থেকে মুক্তির এমন মহতী ও বৈপ্লবিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে যান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিজেকে শতভাগ নিয়োজিত করেন। উল্লেখ্য, সাওল জীবনযাপন করে ১৬ বছর যাবৎ তিনি সুস্থ ও সক্রিয় আছেন।

ঢাকার ২৬ ইস্কাটন গার্ডেন রোডে সাওল হার্ট সেন্টারে নিয়মিত সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হচ্ছে। এতে হৃদরোগীসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত তাগিদে অংশ নিচ্ছে। তারা ন্যাচারাল বাইপাস, ডায়েট বা খাদ্য পরিকল্পনা, ইয়োগা মেডিটেশন, সাওল ডিটক্স বিষয়ে ধারণা পাচ্ছেন। সাওল বিনা তেলে রান্নার আয়োজন করে এবং বিনা তেলে রান্নার প্রশিক্ষণও দেয়। যেকোনো প্রকার তেলই যে হৃদরোগের জন্য ক্ষতিকর সেখানে এ বিষয়ে সচেতন করা হয়। তেল ছাড়া রান্না অথচ টেস্ট কম নয়, সহজেই রুচির সঙ্গে খাওয়া যায় তারা এসব কৌশল শেখাচ্ছে। এটা ইতোমধ্যে ঢাকার নাগরিক স্বাস্থ্যসেবার এক বিকল্প পরামর্শ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দিন দিন মানুষের আস্থা ও আশাভরসার ঠিকানায় রূপান্তরিত হচ্ছে।

সবাই জানি, মৃত্যু অবধারিত এবং অবশ্যম্ভাবী। তবু প্রচণ্ড আকুতি নিয়ে সবাই দীর্ঘজীবন চায়। সুধাময়ী পৃথিবীর রূপরসের শেষ বিন্দুও পান করতে চায়। এমনকি মাত্র একটি দিন বেশি বাঁচার জন্য মানুষ সবকিছু ত্যাগ করতে পারে। চিরন্তন এ আকুলতা যেন দুরধিগম্য, গূঢ় রহস্যময়। বলা যায়, স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে এ-ই মানুষের অমোঘ নিয়তি।

  • সাবেক স্বাস্থ্য সচিব ও গল্পকার
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা