× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সড়কের মৃত্যুফাঁদ থেকে কি মুক্তি নেই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৪ ০৯:৫১ এএম

সড়কের মৃত্যুফাঁদ থেকে কি মুক্তি নেই

দেশের সড়ক-মহাসড়ক কী ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে- এর সাক্ষ্য দিচ্ছে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিএর তথ্য। তাদের তথ্যসূত্রের বরাত দিয়ে ১২ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি মাসেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের মাসের মৃত্যুসংখ্যা! গত ছয় মাসে দেশে সড়কে প্রাণহানি ঘটেছে ৬৩২ জনের এবং মৃতের এ সংখ্যা গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ, এও সরকারি হিসাবভুক্ত খতিয়ানেরই তথ্য। একই দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১ মে সড়কে প্রাণহানি ঘটেছে ১৪ জনের। সড়ক দুর্ঘটনা সব দেশেই কমবেশি হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো এই হার আর কোথাও এত ঊর্ধ্বমুখী কি না এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমরা জানি, সড়কে যানবাহন চলাচলের আইন আছে, পথচারীদের জন্যও আছে আইন। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন আছে।

প্রতি বছর ২২ অক্টোবর দেশে নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়। গত সড়ক দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘আইন মেনে সড়কে চলি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি’। প্রতিটি দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো, কাঠামোগত ত্রুটি-বিচ্যুতি সারিয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি আইনানুগভাবে যথাযথ প্রতিবিধান নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রায় নিত্য সংবাদমাধ্যমে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র উঠে আসছে এর কোনোটিরই যথাযথ প্রতিপালন হচ্ছে না তাও প্রতীয়মান হয়। সড়ক দুর্ঘটনা কেন ঘটে? কী কারণে এত বেশি দুর্ঘটনা কিংবা কি পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনার হার কমানো সম্ভব-এ সবই বহুল আলোচিত বিষয়।

খুব দূর অতীতের ঘটনা নয়। আমাদের স্মরণে আছে, যাত্রীবাহী দুটি বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ফলে সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে গণজাগরণ ঘটেছিল। প্রায় সর্বস্তরের মানুষের একটিই দাবি ছিল, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আর কালক্ষেপণ চলবে না। লাগাতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দাবি পূরণের নিশ্চয়তা বিধানের প্রতিশ্রুতিও সরকারের তরফে মিলেছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ওই প্রতিশ্রুতি বরাবরের মতোই বৃত্তবন্দি রয়ে গেছে। প্রায় প্রতিটি দেশেই দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে কিছু এলাকা চিহ্নিত থাকে। মূলত অবকাঠামোগত এবং ভৌগোলিক স্থানগত প্রেক্ষাপটে তা চিহ্নিত হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত ক্ষেত্রের পরিসর অনেক বিস্তৃত এবং এজন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ঘাটতিও রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত। এর মধ্যে অন্যতম ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন অমান্য করে চলা, দ্রুত বিচারের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর এক্ষেত্রে দায় অনেক বেশি। যাদের হাতে যানবাহনের স্টিয়ারিং ঘুরছে তাদের সিংহভাগই গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত এবং অভিযোগ আছে, বিআরটিএ যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই গাড়িচালকদের সনদ দিয়ে থাকে।

সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমাতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে, ১১ মে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)র দশম মহাসমাবেশে এ কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে তিনি তার দুঃসহ স্মৃতির কথাও ওই সমাবেশেই বলেছেন। আমরা দেখছি, যখনই কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তখনই সরকারের দায়িত্বশীলরা অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি প্রতিবিধান নিশ্চিত করার কথাও গুরুত্বের সঙ্গে বলেন। কিন্তু কার্যত কাজের কাজ কতটা কী হয় এর উত্তর নিহিত রয়েছে বিদ্যমান বাস্তবতার মধ্যেই। নিকট অতীতে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলেছি, সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে আইনের প্রয়োগ জরুরি। প্রতিটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য থাকে জনকল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের দেশে এমন অনেক আইনই আছে যেগুলোর যথাযথ কার্যকারিতা প্রকৃতপক্ষে দৃশ্যমান নয়! আইন মানা এবং আইন মানানোর প্রবণতা এই দুক্ষেত্রেও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আমাদের ট্রাফিক বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম এ কথা অসত্য নয় বটে, কিন্তু যে জনবল রয়েছে তাদেরই বা জবাবদিহি কোথায়? ট্রাফিক আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও আইন রক্ষকদের অনেকেরই ঢিলেঢালা ভাব ও দুর্নীতির কারণে গাড়িচালকদের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা বাড়ছে।

বিআরটিএর মতো দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটির মধ্যেও অনিয়ম-দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। তারাও জবাবদিহির বাইরে থাকতে পারে না। আমরা মনে করি, সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর ক্ষেত্রে কোনোভাবেই তাদের দায়হীন থাকার অবকাশ নেই। পাশাপাশি আমরা এও মনে করি, শুধু নীতিবাক্য-সচেতনতাই নয়; শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীল আইন প্রয়োগকারীদের নির্মোহ ও কঠোর অবস্থান জরুরি। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, অবকাঠামোগত ত্রুটি-বিচ্যুতি সারাতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু নীতিনৈতিকতার প্রতিফলন একই সঙ্গে আইনের বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হবে কেন? এক্ষেত্রে আমরা স্পষ্টতই মনে করি, জবাবাদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। সুশাসনের আলো যদি ছড়াত, যদি নিশ্চিত হতো জবাবদিহি, তাহলে নিশ্চয়ই মর্মন্তুদতার ছায়া ক্রম-বিস্তৃত হতে পারত না। কারণ জানা অথচ দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিবিধান নিশ্চিত হয় না, এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কী হতে পারে? সড়কের অপর নাম যেন মৃত্যুফাঁদ। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মৃত্যুফাঁদ থেকে কি মুক্তি নেই? অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টতই এও প্রতীয়মান হয়, এগুলোর অনেকটিই নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং বলা যায় কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। এমনটি চলতে পারে না। আমরা আশা করি, সরকারের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ যূথবদ্ধভাবে এই ভয়াবহতার নিরসন ঘটাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

একেকটি দুর্ঘটনা একেকটি পরিবারে যে দুর্বিষহতার সৃষ্টি করছে তা কেবল ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। হতাহতের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতিও। সড়কে যে নৈরাজ্য জিইয়ে আছে তা ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির প্রত্যক্ষ বিরূপ ফল। পরিবহন খাতে বিরাজমান নৈরাজ্য, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ জীবনের জন্য হুমকি এমন সবকিছু নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও অত্যন্ত জরুরি। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, সড়ক দুর্ঘটনা মামলার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ‘প্রভাবশালী’ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপে একপর্যায়ে সবকিছু থেমে যায়। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, হন্তারক ও স্বেচ্ছাচারীদের প্রতি কোনোরকম অনুকম্পা প্রদর্শনের অবকাশ নেই। আমরা এও মনে করি, সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন জরুরি, সমভাবেই জরুরি উপযুক্ত অবকাঠামোগত ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের যথাযথ দায়িত্বশীলতা। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা