× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

উপজেলা নির্বাচন : ইসির সামনে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪ ০৯:৩০ এএম

উপজেলা নির্বাচন : ইসির সামনে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ

ষষ্ঠবারের মতো চার দফায় অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের আজ প্রথম দফায় ভোটপর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা জানি, গত ২২ জানুয়ারি গণভবনে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ স্তর উপজেলা নির্বাচনে এবার দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে তফসিল ঘোষণার আগেই বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকার পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও উপজেলা নির্বাচন একপক্ষীয় হচ্ছে, সর্বাংশে তা বলা যাবে না।

আমরা দেখছি, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি সমর্থিত প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে। দুদিন আগে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনেই জানা যায়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) মন্ত্রী-এমপির প্রভাব বন্ধে স্পিকারের দ্বারস্থ হন। প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় অনেক উপজেলায়ই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। ইতোমধ্যে বিনা ভোটেও নির্বাচিত হয়েছেন প্রায় ৫০ জন। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক প্রশ্ন রয়েছে। ৭ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে, সেটাই বড় কথা। নির্বাচন যাতে প্রভাবিত না হয়, এ ব্যাপারে কমিশনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা কোনো বেকায়দায় নেই। নির্বাচন অবাধ হবে। আমরা ইসির এই প্রত্যয়ের প্রতিফলন দেখতে চাই। আমরা লক্ষ করেছি, প্রথম পর্বের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের অনেক ঘটনাই ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকায় এমপির বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও উঠেছে। ৫ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রী-এমপির স্বজন যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ইসি ও সরকার। আমরা জানি, ইতোপূর্বে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশও দলের নীতিনির্ধারক ফোরাম থেকে দেওয়া হয়।

আজকের নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের খবর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনলাইন সংস্করণ থেকে জানা যায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে, এই তথ্য জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং তার বরাতেই এও জানা যায়, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। চাঁদপুরের উপকূলীয় নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে কোস্ট গার্ড। আমরা এও জানি, নির্বাচনে দলীয় এমপিরা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করেন এজন্য তাদের সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলকে কুক্ষিগত করে না রেখে সবাইকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্যও তিনি এমপিদের নির্দেশ দেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রের শোভাবর্ধন করে। নির্বাচনে ভোটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন কিংবা অনুষঙ্গ। ভোটারের নিরাপত্তা বিধান এবং স্বাধীনভাবে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায় সর্বাগ্রে ইসির। বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করা নির্বাচন কমিশন একই সঙ্গে তার সহযোগী শক্তি সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে শঙ্কায় প্রশাসন শিরোনামে ইতোপূর্বে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং এমপিদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনদের উদ্বেগ ইসির আমলে রাখা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। ইসির পক্ষে বারবারই বলা হচ্ছে, স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে তারা কুণ্ঠিত হবে না। আমরা তাদের এই প্রত্যয়ের জন্য সাধুবাদ জানাই। অন্যদিকে আইজিপি পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে কদিন আগে বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই। সর্বোচ্চ বদলি করবে। আরেক জায়গায় চাকরি করবেন। মাথা নত করা যাবে না। আমরা আইজিপিকেও তার দৃঢ়প্রত্যয়ের জন্য সাধুবাদ জানাই। তবে একই সঙ্গে এও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, নির্বাচনের একেবারে প্রাক্কালেও জননিরাপত্তা ও প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের যে উদ্বেগ সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে এ ব্যাপারে যেন গভীর মনোযোগ থাকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ নির্বাচন যাতে কলুষিত না হয় এবং ভোটার যাতে তার অধিকার প্রতিবন্ধকতাহীনভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার দায় ইসির হলেও পাশাপাশি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরও নিশ্চয় দায় রয়েছে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যেসব শঙ্কা রয়েছে এর নিরসন সম্ভব ইসির নির্মোহ কঠোর অবস্থান এবং ইসিকে সরকারের যথাযথ সহযোগিতা প্রদানের মধ্য দিয়ে। দৃশ্যত রাজনৈতিক ব্যানারে কেউই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বটে, তারপরও দলীয় রাজনীতির প্রভাব-প্রতিপত্তি মাঠপর্যায়ে ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, এও এড়িয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই।

দেশে রাজনৈতিক বিভাজন ও জনআস্থার পারদ নিম্নমুখী। ইসি, সরকার ও রাজনীতিকদের যথাযথ দায়িত্বপালনের মাধ্যমেই এই সংকট দূর করা দুরূহ নয় বলেই আমরা মনে করি। স্থানীয় সরকার কাঠামোর বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ে ভিন্ন আমেজ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, তাও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু এবার এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভাটা লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, ভোটকেন্দ্রে যাতে ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়, এ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ পালন করতে যদি সক্ষম হতে পারে, তাহলে আগামীর ভোটপর্বগুলোতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা না গেলে যেকোনো পর্যায়ের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক বলে অভিহিত করার সুযোগ থাকে না। আস্থার সংকট কাটাতে সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতেই হবে। অন্যায়কারী কেউই যেন কোনো অনুকম্পা না পান। ইসির কঠোর অবস্থান ও সরকারের যথাযথ সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সব শঙ্কা মিথ্যা পর্যবসিত করতে তারা সক্ষমতার পরিচয় দেবে, আমরা এই আশাও করি।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া গণতন্ত্রের সৌন্দর্য ম্লান করে। যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করছে, সেহেতু ভোটপর্ব কিংবা এরপর পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপকৌশল কেউ কেউ নিতে পারেন, বিভিন্ন মহলের এই আশঙ্কাও অমূলক বলে আমরা মনে করি না। এমতাবস্থায় ইসিকে যেকোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত রাখতে হবে। সবার আগে জননিরাপত্তা। জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া যাবে না। সব প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নির্বাচন হোক দৃষ্টান্তযোগ্যÑ এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা