× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ক্রীড়াঙ্গন

চীন আমাদের পাশে থাকুক

ইকরামউজ্জমান

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪ ০৯:১৯ এএম

ইকরামউজ্জমান

ইকরামউজ্জমান

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে চীন এখন অন্যতম বড় শক্তি। ক্রীড়াঙ্গনে চীনের উত্থান, অগ্রগতি এবং ধারাবাহিকতার সঙ্গে সাফল্য অর্জন দেশে দেশে ক্রীড়াবিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলে উদাহরণ হিসেবে আলোচিত হয়। আলোচিত হয় চীনের ক্রীড়াঙ্গনে তারুণ্য ও যুবশক্তিকে চিন্তাশীল ও কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শতভাগ ব্যবহার করার বিষয়টি। চীন পেরেছে অলিম্পিক আন্দোলনের আদর্শ, দর্শন এবং নীতির প্রতিফলক হিসেবে নিজকে পরিচিত করতে। অলিম্পিক চত্বরে এশিয়ার চীন এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ও চ্যালেঞ্জ। অলিম্পিকে ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর একচেটিয়া প্রাধান্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক চীন এখন চিন্তার কারণ ও হুমকি। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকের মেডেল তালিকায় চীন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলেছিল এককভাবে ৫১ স্বর্ণপদক জয় করে।

আসছে জুলাইয়ের ২৬ তারিখ প্যারিসে শুরু হতে যাচ্ছে ৩৩তম আধুনিক অলিম্পিকের জীবন্ময় উৎসব। সারা দুনিয়া যেখানে উপস্থিত হবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য, নীতি এবং দর্শন বাস্তবায়নের জন্য। বিশ্ব ক্রীড়া মিডিয়ায় ইতোমধ্যে উঠে এসেছে ইউরোপের মাটিতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকেÑসার্বিকভাবে স্বর্ণপদক জয়ের তালিকায় ধনতান্ত্রিক না সমাজতান্ত্রিক দেশ এগিয়ে থাকবে। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে ৩৮ স্বর্ণপদক জয় করে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক পেছনে মেডেল তালিকা ছিল চীনের। এখন সবার চোখ প্যারিসের দিকে। বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিরলসভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ক্রীড়াবিদ ও খেলোয়াড়রা উন্মুখ হয়ে আছেন প্যারিসের অলিম্পিক চত্বরে পৌঁছে পরিশ্রমের ফসল উজাড় করে দেওয়ার জন্য। মানবসমাজের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার জন্য। মনে আছে ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকের পর তৎকালীন পূর্ব জার্মানির বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, ‘মিউনিখ শহর পশ্চিম জার্মানির হলেও মেডেল কিন্তু আমাদের।’ সেবার পূর্ব জার্মানি স্বর্ণপদক জিতেছিল ২০টি আর পশ্চিম জার্মানি ১৩টি।

গত বছর চায়নিজ তাইপিতে একটি সেমিনারে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে জানানো হয়, চীন একদম আঁতুড়ঘর থেকেই হিসাবপত্র কষে প্রতিভা ধরার পিছু নেয়। ডোপিং, হরমোনের ব্যবহার, চিকিৎসক, কম্পিউটার, স্টেরয়েড ইত্যাদির শৃঙ্খলাবদ্ধ শাসনে গড়ে উঠতে উঠতে সম্ভাবনাময়টি একসময় অলিম্পিকস লক্ষ্য টপকে যায়। ১৯৪৯-এ পিপলস রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার পরই চীনের ক্রীড়াঙ্গন পাল্টাতে শুরু করেছে। ক্রীড়াঙ্গনে নতুন নতুন উদ্ভাবন আর সংস্কার সাধন জাদুর মতো কাজ করেছে। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়ার ফলে তথাকথিত ‘পূর্ব এশিয়ার রুগ্ন লোক’ অপবাদ আর শুনতে হয়নি। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন তথা অলিম্পিক চত্বরে এসেছে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে। তারা অংশগ্রহণের জন্য অংশগ্রহণ যেহেতু সুযোগ আছে এ নীতিতে বিশ্বাস করেনি।

সচেতন মহলের অজানা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে চীন প্রথম পদক তালিকায় ১০টি দেশের মধ্যে স্থান (চতুর্থ) করে নিয়েছিল ১৫টি স্বর্ণপদকসহ ৩২টি মেডেল জিতে। এর পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন তথা অলিম্পিক গেমসে তাদের এগিয়ে চলার গ্রাফ সব সময়ই ঊর্ধ্বমুখী। চীন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর একটি। সব সময় সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করে বাংলাদেশের পাশে আছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। চীন বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী। আশা করা যায় দুই দেশের মধ্যে যে সহযোগিতা চলছে, তা আগামী দিনে আরও জোরদার হবে।

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে চীনের ভূমিকা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু আলোকপাত করেছি। আমরা মনে করি দেশের বিভিন্ন খেলার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের সমর্থন এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন উপকৃত হবে। চীন অতীতেও মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জানি না কখনও চীনের কাছে নির্দিষ্ট প্রস্তাব ক্রীড়াঙ্গন থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না। চীনের সঙ্গে সাংস্কৃতিক চুক্তির আওতায় ক্রীড়ার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। তবে সবকিছু হতে হবে ‘স্পেসিফিক’। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন মিডিয়াকে জানিয়েছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে, যেগুলো এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পন্ন করছেন। তিনি আরও বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আমরা চাই চীন ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের পাশে থাকুক।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ক্রীড়াপিপাসু। স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং ভূমিকার মূল্যায়ন সহজ নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নতুন করে ক্রীড়াঙ্গনকে শূন্য থেকে পূর্ণ করার প্রত্যয় নিয়ে শুরু করার ক্ষেত্রে তাঁর চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা সময়োচিত উদ্যোগ, দূরদর্শিতা, সহযোগিতা, সমর্থন, উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। তার প্রতিটি উদ্যোগের পেছনে যুক্তি ও কারণ ছিল। বঙ্গবন্ধু অল্প সময়ের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে যেভাবে চিন্তাভাবনা করেছেন, যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন তা বর্তমানের বাস্তবতায় বিস্ময়কর। ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে তাঁর উচ্চতর লক্ষ্য ও স্বপ্ন ছিল। ক্রীড়াঙ্গন ছিল তাঁর দুর্বলতা। তিনি বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনে বাঙালির কৃতিত্ব।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম বড় সমস্যা হলো বিভিন্ন খেলায় যোগ্য, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের অভাব। একসময় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে বিভিন্ন খেলার ৫০ জনের মতো ক্রীড়া প্রশিক্ষক কর্মরত ছিলেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করতে করতে এ সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১৪-১৫ জনে। তাতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কয়েকটি খেলার ডিসিপ্লিনে তো কোনো প্রশিক্ষকই নেই। ক্রীড়াঙ্গন তো চলমান, থমকে নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ক্ষেত্রে ক্রীড়া প্রশিক্ষকদেরও ‘নিজকে আপডেট’ করতে হয়। মন্ত্রণালয় পারছে না বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে শূন্যপদগুলোয় নতুন কোচ ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ দিতে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব পুরোপুরি উপলব্ধি করা সত্ত্বেও।

যেসব খেলায় আমাদের সম্ভাবনা আছে এর তালিকা তৈরি করে সেসব ক্ষেত্রে যদি চীন সরকারের সহযোগিতায় বিশেষজ্ঞ কোচ আনা সম্ভব হয় তাহলে নির্দিষ্ট খেলার খেলোয়ারদের মান উন্নত হবে। চীন থেকে কোচ আনার বিষয়ে প্রথমেই ঠিক করা উচিত, যেসব খেলায় চীনের নজর রয়েছে এমন খেলায় আগ্রহ প্রকাশ।

  • ক্রীড়া-বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা