× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

একাত্তরের একজন বীর

এস এম আরিফ-উজ-জামান

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪ ০৯:১৬ এএম

শফিকুল ইসলাম চান্দ।

শফিকুল ইসলাম চান্দ।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শফিকুল ইসলাম চান্দ (চান মিয়া) ছিলেন টগবগে যুবক। ওই সময় স্বপ্ন দেখতেন প্রিয় এই দুঃখিনী বাংলা একদিন স্বাধীন হবে। ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মানসপটে তার সবসময়ই ভাসত, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর তো বটেই, দেশের সর্বত্রই উড়বে লাল-সবুজের পতাকা। বাংলাদেশ বেতারের মতো রাষ্ট্রীয় অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলেন। তারপরও স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে সক্রিয় রাখতে পেরেছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যায় জুলুম, বঞ্চনা ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করেছেন। বাংলাদেশ বেতারে কাজ করতেন বলে মুক্তিযুদ্ধপর্বে মানুষকে স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন। মুক্তিকামী মানুষের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য নিজের গাড়ি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, গোপনে তিনি নিজের গাড়িতে চেপে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খাবার, অস্ত্র-গোলাবারুদ পৌঁছে দিতেন। কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল অনেক। উত্তরাঞ্চলের গেরিলা যোদ্ধাদের কাছে চিঠি পৌঁছে দিতে বহুবার গেছেন।

শফিকুল ইসলাম চান্দ ছিলেন সাহসী পরোপকারী ও বিপ্লবী চেতনার মানুষ। তার দেশপ্রেম ছিল প্রশ্নাতীত। নীতিবান সৃজনশীল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শফিকুল ইসলাম চান্দ (চান মিয়া) পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। তার উদ্যোগ ও মুক্তিযুদ্ধপর্বে নানা তৎপরতা দেখে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যার ছক তৈরি করে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৪ আগস্ট রংপুর শহরের সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার তীর্থ স্থান হিসেবে পরিচিত টাউন হল চত্বরে একটি মঞ্চ নাটকের মহড়ায় অংশ নেন শফিকুল ইসলাম চান্দ (চান মিয়া)। সেখানে স্থানীয় কয়েকজন রাজাকারের সহযোগিতায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে অস্ত্র তাক করে জিম্মি করে। চান মিয়ার মুখ ও দুই হাত পিঠমোড়া করে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তারপর তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

শহীদ শফিকুল ইসলাম চান্দ (চান মিয়া) মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রংপুর জেলা কমান্ড ও রংপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের তৈরি করা শহীদদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। রংপুর জেলা প্রশাসনের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নামের তালিকায়ও তার নাম লিপিবদ্ধ আছে (ক্রমিক নম্বর-১৫)। রংপুর পৌরসভা বর্তমানে রংপুর সিটি করপোরেশন এই বীর শহীদের নাম স্মরণ করে মহানগরীর সাতগাড়া মিস্ত্রীপাড়ার (মুন্সিপাড়া) একটি সড়কের নামকরণ করেছে শহীদ চান্দ-বাফাত সরণি। রংপুর জেলা প্রশাসন থেকে প্রকাশিত রংপুর জেলার ইতিহাস পুস্তকের ২৯৯ নম্বর পৃষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার ৮১ নম্বর পৃষ্ঠায় রংপুর বেতারের সেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে শহীদ শফিকুল ইসলাম চান্দের (চান মিয়া) ওপর সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতকিছু সত্ত্বেও এই দেশপ্রেমিক সম্পর্কে তথ্য অপ্রতুল। মহান মুক্তিযুদ্ধে শফিকুল ইসলামের যে অবদান সে সম্পর্কে জাতিকে অবগত করার ক্ষেত্রে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকার দাবি নতুন নয়। এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়।

  • সংবাদ পাঠক ও সাংস্কৃতিককর্মী
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা