× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপজেলা নির্বাচন

ইসি ও সরকারের দায় ভোটপর্ব প্রশ্নমুক্ত করা

ড. বদিউল আলম মজুমদার

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪ ১০:৩৯ এএম

ড. বদিউল আলম মজুমদার

ড. বদিউল আলম মজুমদার

৮ মে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। চার ধাপের এ নির্বাচনে প্রথম দুই ধাপে প্রায় ৪৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তৃতীয় ধাপেও পাঁচজনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। আমরা জানি, গণতন্ত্র জনগণের সম্মতির শাসন। ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের সম্মতি প্রকাশ করবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিকে রাষ্ট্র কিংবা স্থানীয় সরকার কাঠামো পরিচালনার দায়ভার অর্পণ করবে, এটিই তো নীতি ও রীতিসিদ্ধ। ভোটপর্বে নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর এ প্রতিনিধিরা বিভিন্ন দায়িত্ব, সংস্থা পরিচালনা করবেন। কিন্তু যখন কোনো প্রার্থী কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ছাড়াই নির্বাচিত হন তা কোনোভাবেই গণতন্ত্রের জন্য হিতকর হতে পারে না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমরা সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখিনি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল এবং তাদের সমমনা কয়েকটি ছোট দল অংশ নেয়নি। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠেয় চার ধাপের এবার উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। তার পরও দেশের প্রধান বিরোধী দল এ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি এবং দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে, নিচ্ছে। ফলে জাতীয় সংসদের মতো উপজেলা নির্বাচনও প্রশ্নমুক্ত হচ্ছে না। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নেওয়ায় স্থানীয় নির্বাচনগুলোও যে সাধারণের কাছে অর্থবহ হয়ে উঠছে না, তারও উদাহরণ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়া।

সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র বিকশিত হতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা জরুরী। গণতন্ত্র মানে বহুদলীয় গণতন্ত্র। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যখন রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত, অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে তখন তাতে ভোটাররাও উৎসাহিত হবেন। আমরা দেখছি, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের ইতিবাচক সাড়া নেই। বরং কোথাও কোথাও আগ্রহে ভাটার কথাই জানা যাচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না করা গেলে যেকোনো পর্যায়ের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক বলে অভিহিত করার সুযোগ থাকে না। কারণ যেকোনো নির্বাচনে ভোটার বিনা বাধায় ভোট দিতে পারবেন এটি সুষ্ঠু পরিবেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেক প্রার্থীই ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই প্রার্থীরা তাদের প্রতি সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর সমান সুযোগ পেলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশের শোভা বাড়ে। প্রার্থীদের অংশগ্রহণের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরির মাধ্যমে ভোটপর্ব সমাধা করা যায় সত্য, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাতে নির্বাচন একতরফায় রূপ নেয়। এর ফলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা আরও জটিল পরিস্থিতির দিকে এগোতে থাকে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আমরা একাধিক জটিল সমস্যার মুখে পড়েছি। অভিযোগ হলোভোটারদের আস্থার ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এই অভিযোগ অমূলক নয়। মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের প্রতি কোনো আস্থাই যেন ভোটারদের নেই। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রতিও ভোটাররা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছেন না। স্থানীয় সরকার কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ স্তরের এ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মনে নানা ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শঙ্কা রয়েছে সুষ্ঠ নির্বাচনী পরিবেশ নিয়েও। যেসব উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে সেসব উপজেলায় ভোটার পছন্দের প্রার্থীকে আদৌ ভোট দিতে পারবেন কি নাÑএ নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিতে শুরু করেছে। স্থানীয় রাজনীতিতে উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাবলয়। অথচ এ ক্ষমতাবলয়েই বিরোধী দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নেই। ফলে ভোটারদের কাছেও বিষয়টি নিয়মপালনের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন স্বচ্ছ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সহযোগী শক্তি সরকার এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ আওয়ামী লীগই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার কাঠামোর স্তরগুলোর নির্বাচনের বিধান করেছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসে এই প্রত্যাশায়, দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু বিএনপি ও সমমনারা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় রইলো। এমনকি কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেয়। তার পরও কয়েকটি উপজেলায় কয়েকজন বিএনপি নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে নির্বাচনের মাঠে তারা খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন বলে প্রতীয়মান হয় না। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও ভোটারের সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সরকার এখন পর্যন্ত নানা ধরনের কৌশল নিলেও তা কতটা সফল হবেÑপ্রশ্ন আছে এ নিয়েও। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারনী পর্যায় থেকে মন্ত্রী-এমপির স্বজন বলে পরিচিত প্রার্থীদের ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেওয়া হলেও এরও সুফল দৃশ্যমান নয়।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভোটগ্রহণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একদিকে কোনো আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না অন্যদিকে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে তাদের মনে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ ঝুঁকি থেকে বের হওয়া জরুরি আগামীর গণতন্ত্রের স্বার্থে। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়লে দেশের শাসনব্যবস্থা ও উন্নয়নকার্য ব্যাহত হয়। শুধু তাই নয়, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের পাশাপাশি প্রতিটি দলের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণও নানাভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হয়। স্থানীয় সরকার কাঠামোর যেকোনো স্তরের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। যারা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে চান তারা যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে তাদের বাছাইকৃত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। শুধু তাই নয়, যারা এ ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে চান তারা যেন অভ্যন্তরীণ কোনো প্রতিবন্ধকতার দরুন প্রার্থিতাবঞ্চিত না হন সেদিকেও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। যদি নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আস্থা না ফেরে এবং এ অবস্থা চলতেই থাকে তবে তা আমাদের নির্বাচনব্যবস্থার জন্যও অশনিসংকেত। এ অবস্থা চলতে থাকলে পুরো নির্বাচনব্যবস্থাই নির্বাসনে চলে যেতে বাধ্য। আর তাতে লোপ পাবে গণতন্ত্রের সব বৈশিষ্ট্য; যা সমাজে ও রাষ্ট্রে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ণ বাড়িয়ে তুলবে। এসব রোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য।

রাজনীতি ও নির্বাচন প্রক্রিয়া শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক করতে সম্মিলিতভাবে সবার এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্র ও নির্বাচনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। এর অন্যথা হলে জাতির জন্য তা শুভবার্তা বয়ে আনতে পারে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ভোটারের অধিকারের প্রতি মর্যাদাদান, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক সবার অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। তাদেরই উদ্যোগী হতে হবে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা কার্যকরের। এ ক্ষেত্রে জনগণেরও দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাদেরও সচেতন হতে হবে, রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় এর বিরূপ মূল্য দিতে হবে জনগণকেই। জনগণ যদি প্রতিবাদী হয়, তারা যদি তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়, তারা যদি চোখ বন্ধ করে না থাকে তাহলে রাজনীতিবিদদেরও ঘুম ভাঙবে।

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে রাজনীতিক, জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের রয়েছে আলাদা ভূমিকা। কিন্তু আমরা দেখছি, কোনো পক্ষই স্বীয় দায়িত্ব পালনে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সচেতন নয়। উপরন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেকে যেন দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভোটাররাই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাই যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ভোটারের উপস্থিতি এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কাম্য। গণতন্ত্রের প্রতি তাদের এক ধরনের মালিকানাবোধ থাকা জরুরি। একসময় উৎসবমুখর পরিবেশে উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনগুলো নিয়ে অতীতে গ্রামগঞ্জে, মফস্বলে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিগত কয়েক বছরে সে আগ্রহে ভাটা পড়েছে।

ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভোটারদের মধ্যে মালিকানাবোধ নানা কারণেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মূল কারণ রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভাজন ও আস্থার সংকট প্রকট। রাজনীতিকদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই এ সংকট দূর করা সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার পরিচয় দিতে পারবে তখনই যখন জনগণ তাদের এ মালিকানাবোধের প্রয়োগ ঘটাতে পারবে নির্বিঘ্নে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকেও কাজের কাজ করতে হবে। ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়া প্রশ্নমু্ক্ত করার মধ্যে দিয়েই সব জনপ্রত্যাশা পূর্ণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি ভোটারদের স্বার্থে কাজ করে তাহলে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করে তোলা কঠিন কিছু নয়।

  • সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং সমাজ ও রাজনীতি-বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা