× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র বিক্ষোভ

পুলিশের নিপীড়নে মানবতাবাদীদের ক্ষত

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪ ১০:৩৬ এএম

আপডেট : ০৭ মে ২০২৪ ১৫:০১ পিএম

মামুন রশীদ

মামুন রশীদ

ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, ইতিহাসে তা এক বিশেষ ঘটনা বলে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এ আন্দোলন থেকে হাতে হাতে কতটা ফল পাওয়া যাবে, এখনই এর বিচার করতে যাওয়া ভুল। বরং এর মহত্ত্ব ‍বুঝতে হলে মনোযোগ দিতে হবে ছাত্রদের এই সংগ্রামের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায় গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস। সেদিন হামাসের ওই হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয় ১ হাজার ১৩৯ জন। এ সময় আনুমানিক ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস সদস্যরা। সেদিন থেকেই গাজায় পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সেই হামলার ইতোমধ্যে পূর্ণ হয়েছে সাত মাস। এ সময়ে ইসরায়েলের বোমা ও গোলার আঘাতে নিহত হয়েছে ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, তারা এ সময়ে হামাসের প্রায় ১৩ হাজার সদস্যকে হত্যা করেছে। শুধু নিরীহ মানুষ হত্যাই নয়, গাজায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ এতই ভয়াবহ যে, ২ মে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন বলছে, গাজার বিধ্বস্ত বাড়িঘর পুনর্নির্মাণে অন্তত ১৬ বছর সময় লাগবে।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর এই নির্মম গণহত্যার নির্লজ্জ সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মানবতা ও গণতন্ত্রের মোড়ল হিসেবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে ভূমিকা রাখা যুক্তরাষ্ট্র লজ্জাহীনভাবে ইসরায়েলি গণহত্যার পক্ষ নিয়ে চলেছে। মানবাধিকারের নামে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে সরব ভূমিকা পালন করলেও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের কোনো সমালোচনা নেই। বরং রয়েছে অন্যায় পক্ষপাত। ৭৫ বছর ধরে যুদ্ধের নামে ইসরায়েলিদের চালানো গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের সমর্থক মার্কিন সরকার। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলমান পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েল ও ইউক্রেনের জন্য কংগ্রেসের কাছে এককালীন ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বরাদ্দ চেয়েছেন। সরকারের এ সকল ভ্রান্তনীতিরই বিরোধিতায় নেমেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। আর ছাত্রদের এই বিক্ষোভ দমাতে বাইডেন প্রশাসন নিয়েছে দমননীতির আশ্রয়। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গ্রেপ্তার হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী। পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংস পন্থার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ গুলিও ছুড়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কঠোর মনোভাবও ইতোমধ্যে স্পষ্ট। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে টেক্সাসের গভর্নর বলেছেন, ‘এই বিক্ষোভকারীদের কারাগারে থাকা উচিত।’ যদিও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের এ বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলছেন।

অবস্থা দেখে স্বাভাবিকভাবেই স্পষ্ট, এত দিন ইসরায়েল প্রসঙ্গে মার্কিননীতির প্রতি সাধারণের ভেতরে ক্ষোভ ছিল, কিন্তু বিক্ষোভ ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সে দেশগুলোর লুটেরা সুবিধাভোগী শ্রেণি যেমন অবৈধ সম্পদ নিয়ে জমা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুঁজিবাদী দেশগুলোতে। তেমনি সারা বিশ্বে গণতন্ত্র-মানবাধিকারের সবক দিয়ে, নানামুখী উস্কানি দিয়ে অস্ত্রের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমেও গড়ে উঠেছে সম্পদের পাহাড়। দুমুখী সম্পদের এই স্রোতকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন সরকার দেশের জনগণকে দিয়েছে নানারকম সুযোগ-সুবিধা; যা তাদের মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে। সুবিধাভোগী শ্রেণি যখন বিনা আয়াসে ঘরে বসে নানারকম সেবা রাষ্ট্রের মাধ্যমে কুক্ষিগত করে; তখন গলার স্বর স্বাভাবিকভাবেই হয় ম্রিয়মাণ। কিন্তু পাওয়ারও শেষ থাকে, অথচ শেষ হয় না প্রত্যাশার। ফলে প্রত্যাশার পারদ বাড়তে বাড়তে তা আরও ভালোর আশায় উন্মুখ হয়।

সংবাদমাধ্যমে কল্যাণে আমরা দেখছি, সেই আশার সুরই আজ চওড়া হচ্ছে। আজকের এই বিক্ষোভের অর্থ সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব বাড়ছে। যার প্রভাবে বাড়ছে সংগ্রামের ব্যাপকতা। আজকে ছাত্রদের এই বিক্ষোভ নিউইয়র্কে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় আবদ্ধ নেই। এখানের সংগ্রামের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়াই ছাত্রদের দাবি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দূর থেকে আরও দূরে। আন্দোলনে ছাত্ররা যতই অহিংসার পথে চলছে, সরকার ততই মারমুখী আচরণ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ছাত্র আন্দোলনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এর নেতৃত্বও নেই কোনো বিশেষ শ্রেণির হাতে। বরং সংগ্রামের পুরোভাগে রয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। যাদের দাবির প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছে চিন্তাশীল মানুষ। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে এ এক বিরাট প্রাপ্তি।

সরকার যখন গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং এরই বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে মার্কিন সরকার একদিকে, আর জনগণ আরেকদিকে; যা স্পষ্ট করছে বিভাজনের রেখা। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে অভিষেক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘ঐক্যের মাধ্যমে আমরা মহৎ কিছু করতে পারি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারি।’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘৃণা ছড়ানো ‘আমরা’, ‘ওরা’ বিভাজনে ছেদ টানতে শপথ নেওয়ার পর দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছিলেন জো বাইডেন। চলমান ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আজকে যে সেই ঐক্য ভেস্তে যেতে বসেছে, তাও স্পষ্ট। একতরফাভাবে ইসরায়েলকে সমর্থনের পরিণতিই যেন আজকে ভোগ করতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আসছে নভেম্বরে প্রেসিডন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের ডাক দেওয়া ঐক্য যে হুমকির মুখে, চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত একটি জরিপের প্রতিবেদনেও তা স্পষ্ট। রাসমুসেনের জরিপের প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন দেশটির ৪১ ভাগ ভোটার। তারা বিশ্বাস করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

পরিবর্তন অনিবার্য। কিন্তু শান্তিপূর্ণ পথে সে পরিবর্তন ঘটবে কি না, এখন সেটাই প্রশ্ন। ফিলিস্তিনে নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং তাদের লাশের ওপর দিয়ে মার্কিননীতির বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভের মাধ্যমে উঁকি দিচ্ছে যে নতুন প্রশ্ন, তা স্বাভাবিকভাবেই প্রাসঙ্গিক। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের সবক দানের বিপরীতে এ এক নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিতে পারে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে তাকে আটকানো যাবে না

  • কবি ও সাংবাদিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা