প্রেক্ষাপট
আর কে চৌধুরী
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪ ১০:৩২ এএম
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র
ফাঁসের বিষয়টি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো জেঁকে বসেছে। কোনোভাবেই এ থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে
না। সরকারি প্রেসের কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা- অনেকেরই এ
চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা সংবাদমাধ্যমে নানা সময়ে এসেছে। সর্বশেষ ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা
ঘটেছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ৮৭ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী। এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়ও জালিয়াতির
অভিযোগে বিভিন্ন স্থান থেকে আটক হয়েছিল অর্ধশতাধিক।
প্রশ্নপত্র ফাঁস
ও উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনা আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধের
সহজ উপায় হচ্ছে অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের
ঘটনা প্রতিরোধে দেশে আইন আছে। জালিয়াতচক্রের সন্ধান যখন পাওয়া গেছে, তখন আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও কঠোর হতে হবে। এ চক্রের সবাইকে আইনের আওতায়
এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতির এক অভিনব পদ্ধতি প্রশ্নপত্র ফাঁস।
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার ধরনটাও পাল্টে গেছে।
পরীক্ষার আগে পড়াশোনা করার চেয়ে তারা বেশি ব্যস্ত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের খোঁজে। বাংলাদেশের
শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বলে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা এমনকি বুয়েটের
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হবার কথা গণমাধ্যমে এসেছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নের মধ্যে বিভিন্ন
চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাসহ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও রয়েছে।
এই জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তারা আর্থিক দিক দিয়ে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে
এবং তাদের শেকড় অনেক গভীরে।
২০০১ সাল থেকে পরবর্তী ১৬ বছরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে ১০ বার। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। তারা পাস করে চিকিৎসকও হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানানরকম পদক্ষেপ নেওয়া হলেও রোধ করা যাচ্ছে না প্রশ্নপত্র ফাঁস। প্রশ্নফাঁস প্রশ্ন তৈরি থেকে ছাপা, পরিবহন, বিতরণ যেকোনো পর্যায়ে হতে পারে। এই ব্যাধির নিরসনে প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়তে হবে নজরদারি। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণাও থাকতে হবে। যেমন কম্পিউটারে প্রশ্ন তৈরি হলো, সেখান থেকে তা ডিলিট করলেই শেষ হয়ে যায় না। সেটা প্রিন্টারেও থেকে যায়। কোনো অনলাইন ডিভাইসেও থেকে যেতে পারে। তাই ওই প্রযুক্তি সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে কীভাবে কাজ করতে হয় তা-ও জানতে হবে। প্রশ্নপত্র তৈরিতে নিয়োজিত কমিটির সদস্যরা কতটুকু বিশ্বস্ত তাও খতিয়ে দেখা উচিত। তাদের শিক্ষাজীবন হতে শুরু করে আদর্শ, রাজনৈতিক কার্যকলাপ এমনকি পারিবারিক ইতিহাসও ঘেঁটে দেখা দরকার। এর রহস্য উন্মোচনে নজর দিতে হবে একেবারে উৎসে। কঠোর প্রতিকারই এর একমাত্র প্রতিবিধান।