× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

রেল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে নীতি-নির্ধারকদের

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪ ০৯:৪২ এএম

রেল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে নীতি-নির্ধারকদের

নটার ট্রেন কটায় ছাড়ে? প্রবাদটির চল কবে তার ঠিকুজি না পেলেও কথাটি এখনও প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়বে কি না তা নিয়ে আজও রয়েছে যাত্রীদের উৎকণ্ঠা। কারণ শিডিউল মেনে খুব কম ট্রেনই চলাচল করতে পারে। পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়লে, সময়মতো উদ্ধার না হলে, শিডিউল বিপর্যয় মাত্রা ছাড়ায়। যাত্রীদের দুর্ভোগেরও সীমা থাকে না, যা এখন হয়ে উঠেছে নৈমিত্তিক। ৩ মে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশনে তেলের ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ ঘটে। বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ‍দুর্ঘটনার কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের চরম মাশুল গুনতে হয় যাত্রীদের। দুর্ঘটনার প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর সমাপ্ত হয় উদ্ধারকাজ। আমরা জানি, রেল দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজ অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার পর ট্রেন উদ্ধার ও লাইন চালু করতে এত সময় লাগার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর নয়। উদ্ধারকাজে এই দীর্ঘ সময় লাগার অর্থ সক্ষমতায় ঘাটতি।

৫ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনার পর প্রায় আড়াই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। রিলিফ ট্রেন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলে একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে দিনে ৩০টির মতো ট্রেন চলাচল করে। জয়দেবপুর হয়েও চলাচল করে বৃহত্তর ময়মনসিংহের আরও প্রায় ৩০টি ট্রেন। দুর্ঘটনার কারণে সবগুলো ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে যাত্রা শুরু করে। স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীদের অভিযোগ ট্রেন কখন আসবে, কখন ছাড়বে, দায়িত্বপ্রাপ্তরাও তা বলতে পারেননি।

জয়দেবপুরের এই দুর্ঘটনা, উদ্ধার অভিযানে বিলম্ব, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় কিছু প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। রেলপথের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। উন্নয়নের সে সুফল সাধারণে কতটা ভোগ করছে প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। এ উন্নয়ন টেকসই কি না সে প্রশ্নটিও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

দেশে রেলের গোড়াপত্তন ব্রিটিশ শাসনামলে। অথচ স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন দেশের রেলপথ এবং রেল খাত ছিল অবহেলিত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবহেলিত একটি খাতে পরিণত হয় রেল। নতুন রেলপথ নির্মাণ তো দূরের, একে একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে অনেক স্টেশন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আবারও রেলকে গুরুত্ব দেয়। রেলের উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে থাকে। রেল খাতের উন্নয়নে খরচ করা হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। সরকার নতুন রেলপথ সম্প্রসারণ, পদ্মা সেতুতে রেললাইন সংযোজন, যমুনা নদীর ওপর স্বতন্ত্র রেলসেতু নির্মাণ, ট্রেনের যাত্রীবাহী নতুন কোচ ও ইঞ্জিন সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দেয়। কিন্তু নতুন রেলপথ নির্মাণ, স্টেশন ভবন নির্মাণসহ পুরোনোগুলোর সংস্কারে যতটা ব্যয় হয় ততটা হয়নি পুরোনো রেললাইন সংস্কারে। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন, কোচ ও লোকবলের ব্যবস্থা না করে শুধু রাজনৈতিক কারণে নতুন নতুন ট্রেন চালুর বিষয়টিও সমালোচিত হয়। আবার লাভজনক রুটগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক কোচ না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।  একটি সমীক্ষা মোতাবেক, রেলের সবক’টি ট্রেন নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হলে দরকার ৩ হাজারের বেশি কোচ ও প্রায় ৫০০ ইঞ্জিন। কিন্তু বর্তমানে রেলে কোচ আছে মাত্র ১ হাজার ৭৮৮টি, যার ৪৭ শতাংশেরই অর্থনৈতিক মেয়াদকাল শেষ। অন্যদিকে রেলে বর্তমান সচল ইঞ্জিনের সংখ্যা মাত্র ২৯৫টি, যার ৬০ শতাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন না থাকায় একটি ইঞ্জিন দিয়েই পরিচালিত হয় একাধিক ট্রেন। ফলে ট্রেন ইঞ্জিন বিকল এবং শিডিউল বিপর্যয় আমাদের পিছু ছাড়ছে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে তাদের ‘ভিশন ও মিশন’ নিয়ে বলা হয়েছে। নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও সময়ানুবর্তী রেলসেবা দেওয়া তাদের ভিশন। আর রেলওয়ে ট্র্যাক ও স্টেশন অবকাঠামোর উন্নয়ন তাদের আট দফা মিশনের অন্যতম। আমাদের প্রশ্ন হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরও তাহলে কেন প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে? কেন প্রায়ই ট্রেনের ইঞ্জিন বা বগির লাইনচ্যুত হওয়ার খবর আসছে? কেনইবা ভুল সিগন্যালের কারণে প্রায়ই ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে? একটি সমীক্ষা বলছে, গত ডিসেম্বর থেকে ৩ মে পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় রেলে ছোট-বড় মিলিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৫টি, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বলে জানাচ্ছে খোদ রেল কর্তৃপক্ষও। মূলত সিগন্যালিংয়ে ত্রুটি, ভুল সিগন্যাল, সিগন্যাল ওভারশুট, পয়েন্ট সেট করার আগে সিগন্যাল ছাড়াই ট্র্যাপ পয়েন্ট অকুপাইড করাসহ বিভিন্ন কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনা। মাঠপর্যায়ে রেলকর্মীদের পাশাপাশি ট্রেন পরিচালনায় নানা অদক্ষতার অভিযোগও উঠে এসেছে এসব দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। আমাদের স্মরণে আছে, গত বছর জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে তৎকালীন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামল ছাড়া এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে রেলওয়ের কোনো উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেছিলেন, ২০০৯ সাল থেকে রেল খাতে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে, যার ফল রেলওয়ে পেতে শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন  এত বিনিয়োগের পরও কেন রেলপথ অনিরাপদ হয়ে উঠছে? কেন রেল প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে? কেন ট্রেন তার শিডিউল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে?

আমরা মনে করি, শুধু বিনিয়োগ বাড়ানোই নয়, এর সঙ্গে সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপরও রেলকে গুরুত্ব দিতে হবে।

নতুন নতুন রেললাইন স্থাপন, ইঞ্জিন ও কোচ কেনার সঙ্গে আমরা রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং উদ্ধার কার্যক্রমের দিকেও মনোযোগ বাড়ানোর জন্য বলি। মনে রাখতে হবে উন্নয়ন জরুরি, কিন্তু তা যেন টেকসই ও পরিকল্পিত হয়। টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বাড়বে রেলের সামর্থ্য, বাড়বে যাত্রীসেবার মান। এজন্য আমরা রেলের সামর্থ্য ও দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে বলি। বর্তমান সরকার রেলের ‘অবকাঠামোগত’ উন্নয়নে শুরু থেকেই যথেষ্ট অর্থ ঢেলেছে। তারপরও অহরহ রেল দুর্ঘটনা, অপরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভ্রমণ এবং সময়সূচি বিপর্যয় রেলের পিছু ছাড়েনি। এমনকি যথেষ্ট বিনিয়োগের পরও রেল লোকসানের বৃত্ত থেকেও বের হতে পারেনি এবং যাত্রীসেবার মানও তলানিতে। আমরা মনে করি, রেল যদি তার সামর্থ্যহীনতা ঘোচানোর চেষ্টা না করে, তাহলে এই করুণ দৃশ্যপট বদলাবে না। এক্ষেত্রে নতুন করে ভাবতে হবে নীতি-নির্ধারকদের। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা